ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

করোনা: তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পরামর্শ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২০
করোনা: তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পরামর্শ

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে সতর্কতা অবলম্বনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়েছেন দেশীয় আইসিটি খাত সংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দৈনন্দিন নানা কাজে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে যেন আরও বেশি ব্যবহার করা হয় সেদিকে গুরুত্বারোপ করেছেন এ খাতের শীর্ষ ব্যক্তিরা।

শুক্রবার (২০ মার্চ) বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর সরকারি পর্যায়ে প্রথমবারের মতো ভিডিও প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে আইসিটি বিভাগ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জনতা টাওয়ারে আয়োজিত এ ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

ভিডিও সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় বক্তারা করোনার এমন পরিস্থিতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের প্রতি আহবান জানান। বিশেষ করে আর্থিক লেনদেনে ডিজিটাল ওয়ালেট এবং দৈনন্দিন কেনাকাটায় ইকমার্স ব্যবহারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে এ সভায়।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সাবধানতা অবলম্বন করবো। আশা রাখি, দুই সপ্তাহের মধ্যে এর সুফল পাবো। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি যদি খারাপের দিকে যায়, তাহলে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে পারি। স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিউর (এসওপি) এবং বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান (বিসিপি) তৈরি করে আমাদের এসব প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্যই মূলত আমরা এ সংবাদ সম্মেলন এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছি। আমরা সব অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে চারটি খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সেগুলো হলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লজিস্টিক এবং বিনোদন। এসব খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অংশীদাররা কি ধরনের এসওপি এবং বিসিপি তৈরি করে কাজ করতে পারি আমরা সেই কৌশলগত পরিকল্পনা করতে চাই।

দুপুর ৩টা ৫ মিনিটে শুরু হওয়া এ ভিডিও কনফারেন্স তিনঘণ্টারও বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এসময় আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, এক্সেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, ইকমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার সহ রাইডিং শেয়ারিং, শিক্ষা, ইকমার্স, লজিস্টিক প্ল্যাটফর্ম, টেলিকম খাতের শীর্ষ ব্যক্তি এবং দেশের আইসিটি খাতে কাজ করা গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লজিস্টিক এবং বিনোদন খাতের বিভিন্ন দিক প্রযুক্তিগতভাবে কিভাবে কাজ করতে পারে এবং জনগণকে সেবা দিতে পারে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে ঘরে বসেই শিক্ষাদান, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, খাবার–ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য ইকমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লজিস্টিক সেবায় জনগণের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া এবং সর্বোপরি বাড়িতে থাকা মানুষদের বিনোদনের যোগান দিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের নিজ নিজ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

এসময় এটুআই’র ই-কমার্স প্লাটফর্ম একশপের প্রধান রেজোয়ানুল হক জামি বলেন, এ সময়ে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। জনগণকে যথাসম্ভব ঘরে থাকতে হবে। এমনই মুহুর্তে বিভিন্ন কেনাকাটা, বিশেষ করে খাবার এবং ওষুধ নাগরিকদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাম পেমেন্ট এ সবাইকে উৎসাহিত করা উচিত। একই সঙ্গে যারা পণ্য সরবরাহ করবেন তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ইকমার্স এবং লজিস্টিক থেকে যারা পণ্য ডেলিভারি করতে যাবে তারা শুধু পণ্য ডেলিভারিই করবেন না বরং করোনা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক বার্তা নিয়ে যাবেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের তথ্য আমরা সরাসরি নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।

চালডালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ডেলিভারি দেওয়ার সক্ষমতা আছে আমাদের। পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা আছে। আমরাই ধীরে সুস্থে ডেলিভারি দিচ্ছি।

বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, এখন বেসিসের সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৪০০। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কারিগরি লোকবল আছেন। দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা সরকারের কাছে অনুদান চাই, যেন এমন পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করতে পারি। আমাদের লোকবল দিয়ে স্থানীয় বাজার উন্নত করে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা যায় এধরনের পরিস্থিতির জন্য। করোনার জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল কনটেন্ট যত দ্রুত প্রকাশ করা যায় তত ভালো হয়।

বাক্য’র সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, কল সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা এখন আছে। আমরা যেটা প্রস্তাব করছি আমাদের প্রায় ৫০০ আসনের সম্পূর্ণ তৈরি কলসেন্টার সেট আপ আছে। সরকার চাইলে আমরা এগুলো দিয়ে দিতে পারি। ঢাকা বা ঢাকার বাইরে থেকে এগুলোর কার্যক্রম চালানো যাবে। এছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং এবং কনটেন্টের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করতে পারি।
 
এদিকে করোনা ইস্যুতে গুজব প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং আইসিটি বিভাগ সতর্ক রয়েছে বলে জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
 
এছাড়া করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবা বিনামূল্যে দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় গুগল, বঙ্গোবিডি, রবি টেন মিনিটস স্কুল, বাংলালিংক, রবি এবং গ্রামীণফোনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।

** ভিডিও প্রেস কনফারেন্সে সহায়তা দেবে আইসিটি বিভাগ: পলক

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২০
এসএইচএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।