‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’ নামের এ অ্যাপটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে টেলিটক। অ্যাপটির কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেড।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, এ অ্যাপটিতে দারুণ কিছু ফিচার সংযুক্ত করা হয়েছে। মূলত অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর লোকেশন ব্যবহার করে কমিউনিটিতে করোনা ভাইরাস কতোটা সংক্রামিত হয়েছে তার একটা স্ট্যাটাস জানা যাবে। আশপাশে কোনও কোভিড-১৯ সংক্রামক রোগী বা কোয়ারেন্টিন ব্যক্তি রয়েছেন কিনা সে বিষয়ে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
ব্যবহারকারীর নিকটস্থ কোনও ব্যক্তি বা কোনও ব্যক্তির সঙ্গে খুবই সম্প্রতি যোগাযোগ হয়েছে, এমন ব্যক্তির শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি মিললে তা ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’ অ্যাপটির মাধ্যমে কিছু টেস্ট করারও সুযোগ রয়েছে। অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারী বুকের এক্সরে ইমেজ অনলাইনে ওয়েব ও মোবাইলে আপলোড করে মিনিটের মধ্যে করোনা টেস্ট রেজাল্ট পাবে। ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত এমন শনাক্ত হয়ে থাকলে মুহূর্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এর ফলে দীর্ঘ সময় টেস্টের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েক দফায় আমার বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে একটি সহজলভ্য অ্যাপ তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কারিগরি টিম দিয়ে দ্রুত এটার বাস্তবায়নও করি। আশা করছি, এ অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের দেশের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য ও কোয়ারেন্টিন থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, অ্যাপটির আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত আমাদের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টিম কাজ করছে। দেশ-বিদেশে যারা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে তাদের কার্যক্রমগুলো আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। অ্যাপটির পরবর্তী সংস্করণে স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে আরও কিছু নতুন ফিচার যুক্ত করা হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. নূর-উর-রহমান বলেন, মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা দুর্যোগ মুহূর্তে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছি। এটা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি হয়েছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় হাসপাতালে যাওয়ার যে ঝামেলা ছিল সেটা অনেকটাই নিরসন হলো।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছে টেলিটক। এবারও আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে করোনা ভাইরাসের তাৎক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করেছি।
অ্যাপটির কারিগরি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ফারুক বলেন, মূলত ব্লুটুথ ও লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমেই কোনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ছয় ফুট দূরত্বের মধ্যে এ ইউজার রয়েছেন কিনা তা এই অ্যাপটির মাধ্যমে জানা যাবে।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়েকটি দেশ করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে উল্লেখ করে ফারুক বলেন, কোয়ারেন্টিন প্রোগ্রাম এবং প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এখন পর্যন্ত চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশেও বহুসংখ্যক মানুষ কোয়ারেন্টিনে আছেন, যাদের ম্যানুয়ালি ট্র্যাক করা খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে আমাদের ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’ সিস্টেম অ্যাপ বড় পরিসরে কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদেরও ট্র্যাক করতে সহায়তা করবে।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, অ্যাপটি আপাতত পরীক্ষামূলক স্তরেই রয়েছে। শিগগির অ্যাপটি গুগল প্লে-স্টোর ও আইওএস স্টোরে পাওয়া যাবে।
তবে ইতোমধ্যেই অ্যাপটি এপিকের মাধ্যমে (http://coronaidentifier.teletalk.com.bd/) অনেকেই ব্যবহার শুরু করেছেন।
সম্পূর্ণ অ্যাপটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর আইইডিসিআর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে বলে জানায় টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২০
এমআইএইচ/আরবি/