গত ২৫ থেকে দেশের কাঁচাবাজার, ওষুধ, সুপারশপ ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকান-মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করায় বড়দের অনেকেই ঘরে ঢুকে গেছেন। আর স্কুল, কলেজ বন্ধ হওয়ায় ছোটরা ঘরবন্দি হয়েছে ১৬ মার্চ থেকে।
এক নজীরবিহীন সময় পার করছেন ঢাকাবাসী। অনেকেই দেশে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃত্যুর খবর শুনে শঙ্কায় ভুগছেন। ছোটরা ছটফট করছে একটু বাইরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কোনো উপায় নেই। ঘরে থেকেই তাদের সবাইকে বিনোদন কিংবা চাপ মুক্তির উপায় বের করতে হচ্ছে। আর অন্যদের যেন উৎসাহ দেওয়া যায়, সেজন্য নিজেদের পন্থাগুলো অনলাইনে তুলে ধরছেন।
ফেসবুকের পাতা ঘুরে ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে, অনেক বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের বিনোদন দিতে ছবি আঁকা, গান গাওয়া, আবৃত্তির মতো চর্চাগুলো করাচ্ছে। আর তা রীতিমতো আপলোড করছেন ফেসবুকে। এসব দেখে অনেকেই তাতে নানা উৎসাহ ব্যঞ্জক কমেন্ট দিচ্ছেন। যা মূলত আনন্দ দিচ্ছে শিশুদের।
রোজিনা ইসলাম তার কন্যা আলভিনার গাওয়া গানের ভিডিও প্রায়শই ফেসবুকে দিলে তাতে অনেকে উৎসাহ পাচ্ছে। কেউ আবার ঘরেই ব্যায়াম করছেন। ব্যায়ামের ফটো, ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে অন্যদের উৎসাহ দিচ্ছেন। এমনই এক ভিডিও আপলোড করছেন রাজু হামিদ নামের একজন।
অনেক আবার আদরের সন্তানের আঁকা ছবি ফেসবুকে দিয়ে করোনা দুর্গতদের সাহায্য করতে তহবিল সংগ্রহ করছেন।
কেউ আবার অন্যদের আনন্দ দিতে নানা ধরণের ভিডিও শেয়ার করছেন। ফেসবুক লাইভে এসে মজা করছেন মাজেদুল নয়ন। তিনি মাঝে মধ্যেই নানা ধরনের বিষয় নিয়ে লাইভে আসছেন। তার লাইভে সিরিয়াস কথা দু’একটা ওঠে আসলেও সেখানে হাস্যরসাত্মক দৃষ্টি নিয়েই সবাই অংশ নিচ্ছেন।
চারদিকে খারাপ খবর শুনে কেউবা বিচলিত হয়েও পড়ছেন। সাহায্যের হাত বাড়িতে দিতে চাচ্ছেন। অনেকে সাহায্য করে তার ফটো পোস্ট করে অনুপ্রেরণাও যোগাচ্ছেন।
শামীমা ইয়াছমিন ডেইজি লিখেছেন-চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল আমার। কিন্তু হতে পারিনি। নিজের ওয়ালে করোনায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া ডাক্তারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তিনি।
শামসুজ্জামান নাঈম ও তার বন্ধুরা মিলে অসহায়দের মধ্যে খাবার সরবরাহ করছেন। আর সেসব ছবি ফেসবুকে দিয়ে তারা অন্যদেরও সহায়তার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন।
অনেক ডাক্তাররাও নানা তথ্য আর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সচেতনতার কাজ করছেন। ডা. সাকলায়েন রাসেল তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি প্রায়ই বিষয়ভিত্তিক নানা ভিডিও আপলোড করছেন। এতে ভিউয়ের সংখ্যা মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের সংগঠন ডেসপারেটলি সিকিং ডক্টরস গ্রুপের মাধ্যমে সেবা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরছেন।
বাদ যাননি ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজও। উত্তর বঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় এক ভিডিও বার্তায় তিনিও করোনা মোকাবিলায় করণীয় জানিয়েছেন।
অনেকে আবার মুভির রিভিউ দিয়ে ঘরে বসে সময় কাটানোর পন্থা হিসবে মুভি দেখার পরামর্শ দিচ্ছেন। দীপন নন্দী তার ওয়ালে প্রায় মুভি রিভিউ দিচ্ছেন। এসবের বাইরেও যারা আছেন, তারা আলোচনা সমালোচনামূলক নানা পোস্ট দিচ্ছেন। অনেকে টুইট করছেন। ইনস্ট্রগ্রামেও ব্যস্ত রয়েছে অনেকে।
দীপন নন্দী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন-একদিন সত্যি খুব বেশিদিন দূরে নয়। আমরা নির্ভয়ে ঘর থেকে বের হবো। পাখির মতো উড়ে বেড়াবো। বন্ধুদের আলিঙ্গন করবো। হাতে হাত রেখে বলবো-চলো ঘুরে আসি।
আলোর দিন আসবেই। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকতে কয়েকটা দিন কষ্ট করতে হবে-এটা কোনো ব্যাপার না।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২০
ইইউডি/ওএইচ/