ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

টেলিমেডিসিন সেবা দিতে প্রস্তুত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
টেলিমেডিসিন সেবা দিতে প্রস্তুত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

ঢাকা: করোনা দুর্যোগের সময়ে যখন সাধারণ চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়ছে, ঠিক তখনই ইন্টারনেট-যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের’ মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় টেলিমেডিসিন সেবা কাজে লাগানো যেতে পারে। আর এজন্য স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।

‘স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলে করোনা এই দুর্যোগের সময়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দিতে প্রস্তুত আছেন তারা। ’

‘বর্হিবিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনা মহামারির দিকে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ কী ভূমিকা রাখতে পারে, সেই সম্পর্কে সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন শাহজাহান মাহমুদ। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব, সেসব এলাকায় ৪০টি দ্বীপের মধ্যে ৩১টিতে কানেকশন দিয়েছি। ইন্টারনেট যাচ্ছে খুব শিগগিরই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে টেলিমেডিসিন সেবা দিতে পারবো। ’

‘ওই দ্বীপগুলোর মানুষ সভ্যতার আলো দেখতে পারছে না। আমার গ্রাম আমার শহর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা বাস্তবায়ন করতেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছি। ’

‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে, এ অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবার প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন শাহজাহান মাহমুদ। ’

‘এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর জন্য টেলিমেডিসিন সেবা দিতে প্রস্তুত আছি স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ। ’

‘প্রায় দুই বছর আগে স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ, প্রথম উৎক্ষেপিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যোগাযোগ কেন্দ্রিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ’

স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এই মুহূর্তে টিভি চ্যানেল ছাড়াও ডিটিএইচ (আকাশ) সেবায় ব্যবহার হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট যোগাযোগেও এক বছরের মধ্যে কাজে লাগাতে শুরু করেছি। অন্যদেশ এক বছরের মধ্যে শুরু করতে পারে না।

এক উদাহরণ টেনে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের সময় নেপাল যোগাযোগ করতে পারেনি। বাংলাদেশে কোনো দুর্যোগ হলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিমেডিসিন ও টেলি এডুকেশন সেবার মতো কাজেই এই কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কাজে লাগাতে উৎক্ষেপণ করেছিল বাংলাদেশ। ’

শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘ভোলার একটি চরে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে একটি নবজাতকের হার্টবিট ঢাকায় বসে চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেছিলেন। এটা দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক খুশি হয়েছিলেন। এছাড়াও ব্যাংকিং সেক্টরে এটিএম বুথগুলোর সেবায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান। ’

এই করোনাকালে থাইল্যান্ডের একটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট' কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সৌদি আরব, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ ওই অঞ্চলের মানুষ বিটিভি ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠান দেখতে পারছেন।

এই নিয়ে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে দেশের খবর প্রবাসীদের কাছে পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ’

‘মিডল ইস্ট এবং আফ্রিকাতে বাংলাদেশের যেসব শান্তিরক্ষী বাহিনী আছে, সেখানে অনেক বাংলাদেশিও আছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানতে খুব উদগ্রীব হয়ে আছে। তারা যদি একটু স্ক্রলও দেখে যে এখানকার করোনা ভাইরাসের কী অবস্থা, তাতেও শান্তি পাবে। ’

এজন্য সামান্য অর্থ ব্যয় হয়েছে বলেও জানান শাহজাহান মাহমুদ।

‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অন্য বেসরকারি চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে একসঙ্গে বান্ডিল করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পাঠাবার চেষ্টায় আছি। এজন্য একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। এ নিয়ে আমরা আগামী মাস খানিকের ভেতরে একটা সংবাদ দিতে পারবো। ’

বাংলাদেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’র মাধ্যমে বর্তমানে বিটিভি ছাড়াও বেসরকারি সব চ্যানেল দেশের অভ্যন্তরে সম্প্রচার করে দেখা যাচ্ছে। বিদেশের স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে এতে চ্যানেলগুলোর খরচ অনেকটাই লাঘব হবে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।

‘করোনা সংক্রমণের এই সময়ে নিজেদের কর্মীদের সুরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান। ’

বর্তমানে প্রায় ৫০ জনের মতো জনবল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রশিক্ষিত লোকবল খুব কম। যারা আছে তাদের সর্বতোভাবে প্রটেকশন দিচ্ছি। টানা চারদিন পর পর শিফট পরিবর্তন করা হচ্ছে। চারদিন তারা ভেতরেই থাকছেন, এক সেট বের হয়ে যাচ্ছে আরেক সেট ডুকছে। কারণ একজন আক্রান্ত হলে সবাই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর প্রটেকশন ছাড়া যাতে বাইরে থেকে কম্পাউন্ডের ভেতরে কেউ না যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।