ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

কঠিন পরিস্থিতিতেও বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট ইকমার্সগুলো

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২০
কঠিন পরিস্থিতিতেও বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট ইকমার্সগুলো ইকমার্সগুলো

ঢাকা: কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই উদযাপিত হচ্ছে ঈদ-উল ফিতর। এবারের ঈদে বিপণিবিতানগুলোর চেয়ে বেচাকেনায় এগিয়ে ছিল দেশের বাজারে কার্যক্রম পরিচালনা করা ইকমার্সগুলো। অন্যবারের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ইকমার্সে বেচাকেনা প্রায় অর্ধেক হলেও প্ল্যাটফর্মগুলো বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশিই হয়েছে পণ্য বিক্রি।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ায় ঈদ ঘিরে প্রতিবারই ব্যবসায়ীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করে। অনেকেই মনে করেন, সারা বছরের বিক্রির সবচেয়ে বড় অংশই হয় এই ঈদের সময়।

যে কারণে বেশ আগে থেকেই নেওয়া থাকে পূর্বপ্রস্তুতি।

তবে করোনা এবারের পহেলা বৈশাখের পাশাপাশি ওলটপালট করে দিয়েছে ঈদের ব্যবসার হিসাব। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বসুন্ধরা শপিংমলের মতো রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের অনেক বিপণিবিতানই ছিল বন্ধ। যেগুলো খোলা ছিল স্বাস্থ্যবিধি আর স্বাস্থ্যঝুঁকির আশংকায় সেগুলোতেও ছিল ক্রেতাদের সামান্য উপস্থিতি। এমনই প্রেক্ষাপটে নিয়মিত ক্রেতাদের পাশাপাশি ইকমার্সের দিকে আগ্রহী হতে দেখা যায় নতুন নতুন গ্রাহকদের।

আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে মূল্যছাড়,ক্যাশব্যাক ও ফ্রি ডেলিভারির মতো আকর্ষণীয় অফার দিতে দেখা যায় ইকমার্স এবং ইকমার্সভিত্তিক মার্কেটপ্লেসগুলোকে।

দেশীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ইকমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি আমাদের জন্য এক ধরনের সুযোগ দেশের বাজারে ইকমার্সকে আরও জনপ্রিয় করার। আর ঈদের সময়ে সেটি এক মোক্ষম সুযোগ। আমরাও ইভ্যালির পক্ষ থেকে চেয়েছি এই দুর্দিনে ক্রেতাদের অনলাইনে আকৃষ্ট করার।

‘এরজন্য আমরা ‘ওয়াও অফার’, ‘ঈদ মেলা অফার’ এর মাধ্যমে ২০ শতাংশ মূল্যছাড় থেকে শতভাগ ক্যাশব্যাক, ১০ কেজি পর্যন্ত ফ্রি হোম ডেলিভারি; এ ধরনের অফার দিয়েছি। গ্রাহকদের সাড়াও পেয়েছি বেশ। ওয়াও অফারে দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ৩১টি স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ছিল। ৬ মে থেকে ১৩ মে এর এই ক্যাম্পেইনে ৪০ হাজারের বেশি অর্ডার হয়েছে। ঈদ মেলা অফারে সাড়া ছিল আরও বেশি।

তিনি বলেন, ঈদের সময়ে গ্রাহকেরা এসি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, টিভির মতো বিভিন্ন ধরনের হেভি ওয়েট হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য, বাইক কেনেন। আমাদের ইভ্যালিতে এ ধরনের পণ্যের ব্যাপক অর্ডার হয়েছে।

ইকমার্স সাইট পিকাবোডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোরিন তালুকদার বলেন, করোনার মধ্যেও এবার আমাদের বেচাকেনা বেশ ভালো হয়েছে। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলেও এবার প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে। করোনার কারণে অনেককিছুই আমাদের বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে করতে হয়েছে। নয়তো আরও ভালো হতো।

আরেক দেশীয় ইকমার্স সাইট প্রিয়শপডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুল আলম খান বাংলানিউজকে বলেন, বিগত কয়েক বছরের ঈদে ইকমার্স খাতে অভাবনীয় প্রসার হতে দেখেছি। ঈদ পোশাক, ফ্যাশন অনুষঙ্গ, স্মার্টফোন, গৃহস্থালি সামগ্রীর পণ্য বেশ বিক্রি হয়েছে। সেদিক থেকে তুলনা করলে এবার সেই ব্যবসা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কম হয়েছে।  তবে আমাদের প্রিয়শপের পক্ষ থেকে শুরুতেই এটা ধরে নিয়ে কাজ করেছি যে, এবছর লাইফস্টাইল পণ্যে সেই তুলনায় ব্যবসা হবে না।  

‘তাই ঈদ সামনে রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দিকে নজর ছিল বেশি আমাদের।  প্রিয়শপ ডটকম গ্রাহককেন্দ্রিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম।  তাই সংকটকালীন এই সময় গ্রাহকদের যেন ঘরের বাইরে বের হতে না হয় সেজন্য আমাদের টিম কাজ করেছে গ্রাহকদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে।  গ্রাহকদের যে ধরনের পণ্য প্রয়োজন তেমন পণ্যের যেন গ্রাহকরা পেতে পারে জন্য জন্য নিরলস কাজ করা হচ্ছে।  সেই অর্থে ব্যবসা ভালো হয়েছে। ’

বড় প্ল্যাটফর্মগুলো ভালো করলেও সামগ্রিকভাবে এবার ইকমার্স খাতে ব্যবসা প্রায় অর্ধেক কম হয়েছে বলে মনে করছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।

বাংলানিউজকে তমাল বলেন, বেশকিছু প্ল্যাটফর্ম খুব ভালো করলেও সামগ্রিকভাবে এই খাতে এবারের ঈদের ব্যবসা অর্ধেকেরও কম হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এখনই সঠিক কোনো ডাটা নেই আমাদের কাছে। তবে ঈদের ছুটির পরেই আমরা একটি সার্ভে করবো। তখন আরও নিশ্চিত করে বোঝা যাবে। তবুও এর মাঝে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ বিভাগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ইকমার্সের কার্যক্রম প্রতিদিন রাত ১০টা পর্যন্ত রাখতে সক্ষম হয়েছি।

‘পণ্য সরবরাহ যেন নির্বিঘ্নে করা যায় তার জন্য কাজ করেছি। পণ্য সরবরাহের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য সরবরাহের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।  এরপরেও অর্ধেক ই-কমার্স, এফ-কমার্স ব্যবসায়ীদের তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে। তাই সামগ্রিকভাবে বেচাকেনা অর্ধেকেরও কম হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২০
এসএইচএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।