বুধবার (১৭ জুন) ‘ফটোল্যাব: ব্যবহারকারীর তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থায়?’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলানিউজ। প্রযুক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম এবং দেশীয় সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রথম বাংলানিউজই প্রকাশ করে মৌলিকভাবে।
প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ সময় ভোর পৌনে ৪টার দিকে ফটোল্যাব নিজস্ব ফেসবুক পেজ এবং ব্লগে ব্যাখ্যা দিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করে। একইসঙ্গে বাংলানিউজে প্রকাশিত সংবাদের নিচে ফটোল্যাবের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ব্যাখ্যামূলক মন্তব্য করা হয়।
তবে সম্প্রতি হঠাৎ করে আলোচনায় আসা এই প্ল্যাটফর্মের পেজটি ভেরিফায়েড না হওয়ায় ‘একটু কিন্তু’ থেকে যায়। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে সংযুক্ত করে দেওয়া ফেসবুক পেজ লিঙ্কটি এটিরই। এছাড়া ফটোল্যাবকে ‘নিরাপদ’ দাবি করে ব্যবহারকারীদের ‘বিশ্বাস রাখার’ আহবান জানানো বলছে এগুলো একটি আরেকটিরই। নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে ভেরিফায়েড তো না-ও হতে পারে।
ফটোল্যাবের পরিচয়ে দেওয়া পোস্ট এবং মন্তব্য আমলে নিয়ে বাংলানিউজের/প্রতিবেদকের বক্তব্য নিম্নরূপ-
১. বাংলানিউজের প্রতিবেদনে এটা দাবি করা হয়নি যে, ভার্জের প্রতিবেদন অনুসারে ফটোল্যাবের মালিকানা প্রতিষ্ঠান লিনারক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। বরং বিশ্বব্যাপী বহুল গ্রহণযোগ্য লিংকড ইন এ থাকা লিনারকের পেজের ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কো।
২. বাংলানিউজের প্রতিবেদনে এটা বলা হয়নি যে, ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারই গেল ১৫ জুন অ্যাপটি আপডেট করা হয়েছে। বরং অ্যাপব্রেইন ডটকম থেকে অ্যাপটি সম্পর্কে পরিসংখ্যানগত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাই মনে হচ্ছে, ফটোল্যাব যা বলা হয়নি, তেমন তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রতিবেদনটিকে এক ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলার চেষ্টা করছে।
৩. বাংলানিউজ তার প্রতিবেদনে ফটোল্যাবের সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার যোগসূত্র থাকার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি বরং আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মাত্র। একইসঙ্গে ‘সিআইএ’ বা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থার নামও উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে। অথচ ফটোল্যাব নিজেদের ব্যাখ্যায় গোয়েন্দা সংস্থাটির নাম উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ যা বলা হয়নি, তা বলেছে।
৪. নিজেদের ব্যাখ্যায় ফটোল্যাব স্বীকার করেছে যে, তারা ব্যবহারকারীর হাই রেজ্যুলেশন ছবি সংরক্ষণ করে। ছবিগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামাজনের সার্ভারে জমা রাখা হয় বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তারা এও দাবি করে যে, যেসব ছবি ব্যবহারকারী পরবর্তীতে নিজেদের নিউজফিডে শেয়ার করেন না, সেগুলো মুছে ফেলা হয়। তবে এই মুছে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করার কোনো উপায় নিজেদের ব্যাখ্যায় দেয়নি ফটোল্যাব। এক্ষেত্রে ফটোল্যাব বাংলাদেশের গ্রাহকদের তাদের প্রতি এক রকম অন্ধ বিশ্বাস রাখার আহবান জানায় মাত্র।
বাংলানিউজে বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সঠিকভাবে অনুবাদের পর অথবা যেকোনোভাবে ভালো করে আয়ত্বে নিলে কর্তৃপক্ষের আশা এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। বরং প্রতিবেদনে এ ধরনের যা বলা হয়নি, তা বলে তথ্য উপস্থাপন থেকেও বিরত থাকবে ফটোল্যাব।
ফটোল্যাবের এমন ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ওই প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া সাইবার-৭১ এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাবের হৃদয় বলেন, যারা এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে কিংবা নানান স্টার্টাপগুলোর ওয়েব ডেভেলপার কিংবা সফটওয়্যার প্রকৌশলী আছেন অথবা ডিজিটাল ফরেনসিক নিয়ে কাজ করেন শুধু তারাই সহজে বিষয়টি বুঝতে পারবেন। বর্তমান যুগটা হলো ডাটা সায়েন্সের যুগ এবং ওখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল কনটেন্ট বিক্রি করা, বিগ ডাটার যুগে আছে এই পৃথিবী। তারা অবশেষে স্বীকার করেছে যে তারা আপনাদের ছবিগুলো আমেরিকাতে পাঠায় আর সেখানেই স্থানীয়ভাবে হোস্ট করে। এটাও কিন্তু বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। বাংলাদেশ থেকে কোনো ডাটা দেশের পরিসীমার বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উল্লেখ আছে। কিন্তু তারা সবচেয়ে বড় ‘মিথ্যা কথা’ বলেছে যে এসব কনটেন্ট আবার দ্রুত ডিলিট করে দেয়। তাহলে আসি উপরের দিকের কথায়, সেখানে আমি উল্লেখ করেছি, বিগ ডাটা এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের যুগে কেউ এই কাজ করবে না যে একটা বিপুল পরিমাণে কনটেন্ট সংগ্রহ করে সেগুলো আবার মুছে দেবে। বিষয়টি একদম হাস্যকর লাগলো আমার কাছে।
জাবের আরও বলেন, যেকোনো কিছু ট্রেন্ডিং এ উঠলে বলতে গেলে প্রথম দিকে ৮০ শতাংশ মানুষ সেটি ব্যবহার করে এবং সতর্ক করার পর তখন সেখান থেকে কমে ৩০ শতাংশ ব্যবহারকারী হয়ে যায়। বাকিরা ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। একটা সময় গিয়ে এটি হারিয়ে যায়। আমরা প্রিজমা ট্রেন্ডিংয়ের কথা ভুলিনি; সেটাও এখন আর নেই। ফটোল্যাবও স্বীকার করেছে যে, বাংলাদেশ থেকে তাদের প্রচুর ব্যবহারকারী আছেন। এই ব্যবহারকারীরা যেন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন সেজন্যই তাদের এই বিবৃতি বলে আমার বিশ্বাস। এছাড়া এতদিনের একটা প্ল্যাটফর্ম কিন্তু তাদের ফেসবুক পেজে তেমন লাইক নেই। তেমন তথ্যও নেই। এমনকি পেজটি ভেরিফায়েডও হতে পারেনি। এগুলো কিন্ত সন্দেহজনক। তাই যতটুকু সম্ভব আমরা সবাইকে সর্তক করছি।
প্রতিবেদনে মন্তব্য দেওয়া আরেক সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহা বলেন, দেখুন এই পৃথিবীতে কোনোকিছুই ফ্রি না। যেখানে কোনো পণ্য ব্যবহার করতে আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে না, সেখানে আপনাকে পণ্য বানাবে। সেটা আপনার তথ্য দিয়েও হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
এসএইচএস/টিএ