ঢাকা: আসন্ন ঈদুল আজহা কিছুটা ম্লান হতে চলেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঈদ আনন্দ। করোনা পরিস্থিতিতে সশরীরে হাটে গিয়ে পশু বিক্রিতে থাকছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
প্রতি কোরবানির ঈদের মৌসুমে হাটে গিয়ে পশু কেনা বহুদিনের সংস্কৃতি এই বঙ্গদেশে। সড়ক দিয়ে পশু নিয়ে যাওয়ার সময় ‘কত?’ ডাক যেন ঈদের জানান দেয়। ঈদের বেশ কয়েকদিন আগেই পশু কিনে আনেন অনেকেই। কিন্তু এসবকিছুই এখন আরও স্বাভাবিকভাবে হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
অন্য বছরগুলোর ঈদুল আজহার তুলনায় এবার পশুর হাটের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। যেগুলোও বসবে সেখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা রয়েছে। এ অবস্থায় পশুর হাট আগের মতো জমজমাট না হওয়ারও আশঙ্কা করছেন পশু ব্যবসায়ী এবং ইজারাদাররা।
এমনই প্রেক্ষাপটে এবার অনলাইন পশুর হাটের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতা-বিক্রেতা, পশু খামারি এবং ব্যবসায়ীরা। যশোরের এক খামারি জিল্লুর রহমান মোবাইলে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে প্রতিবার ঢাকায় নিয়া গরু বেচতাম। এবার কিছুদিন আগে এক লোক আইসা অনলাইনে নিবন্ধন করায়া দিয়া গেছে। আমার গরুর ছবি তুলে নিয়ে গেছে। পাঁচটা গরুর মধ্যে একটা বিক্রিও হইছে। তারাই আইসা আবার ডেলিভারি নিয়া যাইব বলছে। ’
অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থাকায় ডিজিটাল মাধ্যমের দিকেই ঝুঁকছেন রাজধানীর গ্রাহকরা। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন রাজধানীবাসী পরীক্ষামূলকভাবে হলেও অনলাইন থেকে কিনতে চাচ্ছেন কোরবানির পশু।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী রাইসুল ইসলাম রোমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবার বাবার সঙ্গে হাটে গিয়ে গরু কিনি। এবারও ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু সাহস হচ্ছে না। তাই এবার ভাবছি অনলাইন থেকে গরু কিনবো। ইতোমধ্যে বাবাকে দেখিয়েছি কিছু গরু। একটু দ্বিধা আছে যে কেমন কি হয়। তবুও একবার দিয়েই দেখতে চাচ্ছি।
এদিকে পশু জবাই করে মাংস করে হোম ডেলিভারিতে পাওয়ার সুযোগ থাকায় কেউ কেউ আগ্রহী সেই সেবা নিয়েও। মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে মিলে কোরবানি দিতাম। সবাই মিলে মাংস কাটতাম। এবার অনেকেই ঢাকার বাইরে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। তাই এবার নিজেরা একা একা আর মাংস কাটার ঝক্কিতে যেতে চাচ্ছি না। অনলাইনে অর্ডার করলে মাংস কেটে বাড়িতে দিয়ে যাবে। আর পুরো কোরবানি নাকি ভিডিওতে লাইভ দেখা যাবে। তাই সেটাই করব। ’
ক্রেতা-বিক্রেতার এমন আগ্রহে দারুণ সাড়া পাচ্ছে অনলাইনে পশু বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলো। কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ‘বিক্রয় ডট কম’র প্রধান বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা ঈশিতা শারমিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরই আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে দ্বিগুণ সাড়া পাই। এবার করোনা পরিস্থিতিতে আরও বেশি সাড়া পাওয়ার আশা করছি। অন্যবারের তুলনায় এবার আমরা বাড়তি কিছু সেবা এনেছি যেমন মাংস কেটে বাড়িতে হোম ডেলিভারিতে পাওয়া, শুধু পশু বাড়িতে হোম ডেলিভারি, পশুর ওজন লাইভ দেখার সুযোগ থাকা ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, এবারের মৌসুমে গত জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে খামারিরা তাদের পশু বিক্রয় ডট কমে নিবন্ধন করা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি পশুর বিজ্ঞাপন সাইটে আছে। তবে শেষ ১০ দিনে এই বিজ্ঞাপনের হার আরও বাড়বে। বিভিন্ন খামারিরা জানিয়েছেন ইতোমধ্যে শতাধিক পশু বিক্রির বুকিং তারা পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে গরু ও ছাগল দুটোই আছে। আমাদের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক পশুর গড় মূল্য সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
কোরবানির পশু বিক্রির আরেকটি প্ল্যাটফর্ম ‘ই-বাজার’ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, ব্যক্তি মালিকানায় থাকা বিভিন্ন পণ্য বিক্রির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সম্প্রতি আমরা ই-বাজারের যাত্রা শুরু করেছি। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে পশু বিক্রিতে এবং কিনতে ইতোমধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে ই-বাজার। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজারের বেশিবার ডাউনলোড হচ্ছে ই-বাজার অ্যাপ। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহক এতে নিবন্ধন করেছেন। ই-বাজারে যেসব পণ্য খোঁজা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে কোরবানির পশু শীর্ষে রয়েছে। গ্রাহকদের পাশাপাশি এখানে পশু বিক্রি করা খামারিদের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী, তারা অনলাইনে স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির পশু বেচাকেনা করতে পারছেন।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাত ধরে প্রথমবারের মতো সরকারি উদ্যোগে চালু হওয়া পশুর অনলাইন ‘হাট ডিজিটাল হাট ডট নেট’ থেকেও উল্লেখযোগ্য হারে পশু বিক্রি হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪৪টি বিক্রয় পার্টনার এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬৬৭টি পশুর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে ৯৩টি পশু ইতোমধ্যে বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২০
এনটি