ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

টিকটক-ভিগো-লাইকি: কঠোর বার্তা মন্ত্রীর

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২০
টিকটক-ভিগো-লাইকি: কঠোর বার্তা মন্ত্রীর ...

ঢাকা: টিকটক অপুকে গ্রেফতারের পর আবারো আলোচনায় এসেছে টিকটক, ভিগো, লাইকির মতো অ্যাপসগুলোতে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের কর্মকাণ্ড। রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য হুমকি ও অবমানাকর নিত্যনতুন অ্যাপস এবং সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকটাই বেকায়দায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারও বিব্রত।

জনগণের নীতি-নৈতিকতা পরিপন্থি এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যাহত হয়—এমন কর্মকাণ্ডে ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্মের অ্যাপস কর্তৃপক্ষকে কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

পরিবর্তিত পরিস্থিতে অ্যাপস এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনে একটি নতুন আইনের কথাও বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় রাস্তা আটকে টিকটিক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে এক প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনায় ‘টিকটক অপু’ খ্যাত ইয়াসীন আরাফাত অপু ও তার সহযোগী নাজমুলকে আটক করে পুলিশ। যৌনতার অভিযোগে ইতোপূর্বে টিকটক বাংলাদেশে বন্ধ হলেও মুচলেকায় আবারও চালু হয়। অপু গ্রেফতোরের পর তার টিকটক ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়ে আসছে।

এ নিয়ে বুধবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে টিকটক বন্ধ করে দিয়েছিলাম, তারা মনিটর করবে বলে চালু হয়েছে। কিন্তু তারা সেটা মানেনি। টিকটক আবারও বন্ধ করে দেয়া হোক বলে সাম্প্রতিককালে অনেকে দাবি তুলেছেন।

‘টিকটকের সাথে কথা বলছি, আমরা প্রাথমিকভাবে অনুরোধ করছি সভ্য মানুষের মতো আচরণ করো, নীতি-নৈতিকতার মধ্যে করো। তা না হলে নিষ্ঠুর হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। টিককটকে এ অনুরোধ করা হয়েছে। ’

বাংলাদেশে কারা এগুলো অ্যাপস ও ভিডিও তৈরি করছে তাদের শনাক্ত করতে পারব জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশ, জনগণ এবং রাষ্ট্র ও তাদের নিরাপত্তা ব্যাহত হতে দেব না। এজন্য প্রচলিত আইন প্রয়োগ করা হবে। দরকার হলে নতুন আইন করব। রাষ্ট্র এবং জনগণকে রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অ্যাপসগুলোকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে এবং আমরা সিরিয়াসলি ফলোআপ করছি। এই ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেব না।

মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে পক্ষ-বিপক্ষ এবং ভালোমন্দ থাকে। অনেকেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে বলেছে, ফেসবুক বন্ধ করে দিতে বলেছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধেরও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে, যেকোন জিনিসের ভালোমন্দ থাকে।

‘আমরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জনগণের নিরাপত্তা, শিক্ষা সংস্কুতি মাথায় রেখে আইন পাস করেছি। যে অবস্থায় পাস করেছি তার দুই বছরের মধ্যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া এবং নানা অ্যাপস তৈরি হয়েছে। এখন অ্যাপস গেইম বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে, দিন দিন বাড়ছে। ’

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের ক্ষেত্রে ফেসবুক বড় ধরনের হুমকি। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, অপপ্রচার, রাজনৈতিক অপপ্রচারসহ এতো সব কর্মকাণ্ড যে হিমশিম খেতে হয়। একইভাবে ইউটিউব, পর্নোগ্রাফি, জুয়ার আসর হয় বিপুল পরিমাণ।

‘এই যুগে আমাদের হাতে যে প্রযুক্তি আছে তাতে বাংলাদেশে বন্ধ করতে পারি। বাকিগুলো কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে হয়। যেমন—ফেসবুককে অনুরোধ করতে হয়, তারা আ্যমেরিকান স্টান্ডার্ড দেখায়, কিন্তু তাদের কমিউনিটি স্টান্ডার্ডে যেতে পারি না। ’

এরইমধ্যে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে মোস্তাফা জব্বার লিখেছেন—টিকটক নিয়ে প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছি। অনুগ্রহ করে বাজে ভিডিওগুলোর লিঙ্ক ইনবক্সে দিন। যারা পর্নো লিঙ্ক পাঠিয়েছিলেন সেগুলো বন্ধ হয়েছে। যদি কোনটা না হয়ে থাকে তবে ইনবক্সে দিন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, টিকটক বা অন্য অভিযোগগুলে দেখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি, না দেখে তো বন্ধ করতে পারি না। দেখে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি
ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্লাটফরমের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, এগুলো কীভাবে আমাদের দেশে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন এবং কীভাবে তারা করের আওতায় আসবে এবং আমাদের দেশের আইন, নিয়ম-কানুন, সংস্কৃতি যাতে মেনে চলে, সেজন্য কী করা প্রয়োজন, সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন পেশ করার জন্য আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, তারা যে আমাদের দেশ থেকে ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে নিয়ে যাচ্ছে এজন্য তারা আয়কর দিচ্ছে না। এটা অবশ্যই দেয়া প্রয়োজন। অন্যান্য দেশে এ ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বার্থেই এগুলোকে করের আওতায় আনা প্রয়োজন।

কমিটিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং একজন আইনজ্ঞ রয়েছেন।

‘এই ধরনের সার্ভিস প্রোভাইডার, অর্থাৎ ফেইসবুক, টুইটার অথবা ইউটিউব বা অন্যান্য যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে সেগুলো ব্যবহার করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি, ফেক নিউজ করা, কারো চরিত্র হনন করার জন্য সার্ভিস প্রোভাইডারকে জরিমানা করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন বিধান রয়েছে, আমাদের দেশেও প্রচলিত আইনে আমরা জরিমানা করতে পারি, আমরা প্রয়োজনে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করব। ’

তিনি জানান, আমরা আলাপ-আলোচনা করছি, এজন্য যদি নতুন আইনের প্রয়োজন হয়, নতুন আইনও করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২০
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।