ঢাকা: বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১০ টাকা মূল্যমানের স্মারক ডাক টিকিট, উদ্বোধনী খাম ও ডেটা কার্ড অবমুক্ত করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শনিবার (৮ আগস্ট) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে এসব স্মারক অবমুক্ত করেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনে নীরবে নিভৃতে প্রেরণার সর্বোচ্চ উৎস হিসেবে কাজ করেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। শেখ ফজিলাতুন্নেছার মতো ধীরস্থির, বুদ্ধিদীপ্ত, মেধাবী, দূরদর্শী, সাহসী, বলিষ্ঠ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান ইতিবাচক ভূমিকা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কিংবা জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের মহাকাব্যের মহানায়ক হতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে।
ডাকমন্ত্রী বঙ্গমাতাকে বাংলাদেশের আদর্শ মায়েদের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি আখ্যায়িত করে বলেন, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালি নারী। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যেকোনো পরিস্থিতি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করতেন। অসংখ্য কঠিন প্রতিকূলতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি একদিকে মা, অন্যদিকে বাবা এই দুইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তার সন্তানদের সুশিক্ষায় গড়ে তুলেছেন, দলের জন্য কাজ করেছেন, নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
৭০ এর দশকের শুরুতে স্বাধীনতার প্রাক্কালে মন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র হিসেবে তার দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চালচলনকে চিরায়ত বাংলার অতিসাধারণ একজন মানুষের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হওয়া সত্ত্বেও নিজ বিভাগের স্যারদের অনেকেই জানতেন না তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তিনি স্যারদের কাছেও কখনো প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেননি। নিজের পরিচয় কখনো প্রকাশ করতে না যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এটাই ছিলো সন্তানদের প্রতি বঙ্গমাতার শিক্ষা। ১৪ বছর জেলে কাটানো বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সন্তানদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা অতুলনীয় ছিল।
মোস্তাফা জব্বার ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে পেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, আগরতলা মামলা দায়ের করার পর তৎকালীন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতারের হুমকি দেয়। লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জোরালো আপত্তি জানান এবং এক রকম প্রতিহত করেন।
বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ, তাই বেগম মুজিবের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে খ্যাত মামলা প্রত্যাহার করতেই হবে। বঙ্গবন্ধু যেন শক্ত থাকেন সে বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছার তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান বেগবান হয়। প্রবল গণ-অভ্যূত্থানের মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হলেন ২২ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গমাতার দূরদর্শিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিল। এমনকি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৩ মার্চের পতাকা উত্তোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক হিসেবে বিবেচনা করা যায় বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে।
মা, কন্যা, বধু-জায়া প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মহিয়সী নারীর ভূমিকা চিরভাস্বর হয়ে থাকবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একাত্তরে তার সন্তানরা যুদ্ধে, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, তিনি অন্তরীণ এই কঠিন অবস্থা সামাল দেওয়া একজন নারীর পক্ষে কি পরিমাণ চ্যালেঞ্জিং তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। তা সত্ত্বেও তিনি দৃঢ় থেকেছেন। তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা নন, তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার প্রেরণাদাত্রী বলে মন্ত্রী তাকে আখ্যায়িত করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. নূর-উর-রহমানের সভাপতিত্বে এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএস ভদ্রের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাদাত হোসেন, সেলিমা সুলতানা, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন, ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদ অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২০
এমআইএইচ/এএটি