ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ইভ্যালি সমস্যার সমাধানের অপেক্ষায় সংশ্লিষ্টরা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২০
ইভ্যালি সমস্যার সমাধানের অপেক্ষায় সংশ্লিষ্টরা

ঢাকা: দেশের ই-কমার্স খাতে বর্তমানে ‘টক অব দ্য নেশন’ ইভ্যালি। বিভিন্ন অভিযোগে দেশীয় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসটির বিষয়ে তদন্ত করছে সরকারের একাধিক সংস্থা।

তবে বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্য অপেক্ষায় আছেন ইকমার্স প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে জড়িত ক্রেতা, বিক্রেতা ও দেশীয় আইসিটি ও ই-কমার্সের বিশিষ্টজনেরা।

সম্প্রতি ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামিমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের এতদিনকার সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেল এবং পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে হওয়ায় ব্যবসায়িকভাবে গভীর সঙ্কটে পরে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নিজেদের জন্য দ্রুতই আরেকটি সমাধান ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ বা সিওডি খুঁজে নেয় ইভ্যালি। তবে ইভ্যালির সমস্যা দ্রুত সমাধানের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসুক এমনটাই দাবি ক্রেতা-বিক্রেতাদের। আর খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যতো দ্রুত এ বিতর্কের সমাধান হবে ততই দেশীয় ই-কমার্স, আইসিটি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মঙ্গল।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবীর বাংলানিউজকে বলেন, ইভ্যালির কোন অপরাধ থাকলে সেটা দ্রুত করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে এর জন্য তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে নেওয়াটা সমীচীন মনে হয়নি। এর ফলে এ খাত নিয়ে এক ধরনের ‘নেগেটিভ ভাইরাস’ ছড়ায়। অথচ দেশীয় ই-কমার্স খাত এখন তার শৈশবকাল পার করছে। এ অবস্থায় নেতিবাচক কথাগুলো বেশি প্রচারিত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় পড়বেন। হঠাৎ করে ব্যাংক হিসাব জব্দ হয়ে যাবে অথবা জব্দ হলেও দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে থাকে। তাদের কাছে এমন একটি বার্তা গেলে পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্যই তা ক্ষতিকর। তার থেকেও এ মুহুর্তে সবথেকে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে ইভ্যালিতে প্রচুর বিক্রেতা অর্থ্যাৎ মার্চেন্টের পেমেন্ট আটকে আছে। অনেক গ্রাহকের অর্থ আছে। ইভ্যালির নিজস্ব কর্মীদের বেতন-ভাতারও একটা বিষয় আছে। করোনার এ সময়ে চাকরি বা অর্থনীতির বাজারে কি অবস্থা যাচ্ছে আমরা দেখছি। তার মধ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ সত্যিই আশঙ্কার। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করবো যেন বিষয়টি দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে সমাধান করা হয়।

ইভ্যালির বিজনেস মডিউল নিয়ে আলমাস কবীর বলেন, ইভ্যালি যদি খুব ‘আগ্রাসী’ কিছু করে না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে আমরা ‘অ্যান্টি ট্রাস্ট’ মামলা দেখেছি। সে ধরনের কোনো কিছু কিন্তু ইভ্যালি এখন আর করছে না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে তারা হয়তো চমকপ্রদ কিছু করেছে, স্টান্টবাজি করেছে। কিন্তু এ ধরনের ব্যবসা, এ ধরনের গেমিং অনেকেই করেছেন। আমাজনও কিন্তু করেছে। তবুও কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। তাদের বিজনেস মডেল সত্যিই টেকসই কি না সেটা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।

ইভ্যালি বিতর্কে দেশীয় ই-কমার্স খাতে জটিলতা দেখা দিতে পারে উল্লেখ করে বিষয়টির দ্রুত সমাধান চান ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ। তিনি বলেন, ইভ্যালির বিষয়ে ই-ক্যাব থেকে গঠিত সাত সদস্যের একটি কমিটি সোমবার থেকে কাজ শুরু করেছে। কমিটির পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবো। তবে আমরা বলবো এর আগেই হুট করে ইভ্যালির মতো একটা চলমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা সমীচীন হয়নি। এর সঙ্গে অনেক বিক্রেতা এবং উদ্যোক্তারা রয়েছেন। তাদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। আমরা চাই বিষয়টির দ্রুত সমাধান হোক।
 
এদিকে, ইভ্যালির ক্যাশ অন ডেলিভারি মেথডের সঙ্গেও ব্যবসায়ীরা নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত শনিবার (২৯ আগস্ট) থেকে আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য বিক্রির সেবা চালু করেছি। এর ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। ক্রেতা তার পণ্য বুঝে পেয়েই টাকা দিচ্ছেন আর বিক্রেতাও সঙ্গে সঙ্গেই তার টাকা পাচ্ছেন। এ দু’দিন আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারি মডেল পর্যবেক্ষণ করলাম। এখন পর্যন্ত সেলার এবং গ্রাহক উভয়ের কাছ থেকে বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। বর্তমানে মোট এক হাজার ৫০৩টি শপ লাইভ রয়েছে। এদের মধ্যে রেগুলার শপ ৬৮০টি, এক্সপ্রেস শপ ৬২০টি এবং ফুড শপ ২৩০টি। এছাড়া ফ্রেন্ডস ডিল এ রয়েছে ১২৫টি শপ। আগামী সপ্তাহ নাগাদ সেলারের সংখ্যা পাঁচ হাজারে পৌঁছাবে বলে আশা রাখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২০
এসএইচএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।