মানুষের খুব কাছে, সম্ভব হলে একেবারে মনে ঠাঁই নিতে চায় সেবা ও পণ্য নির্ভর সমস্ত ব্যবসা। অনেক অনেক দিন ধরেই প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বিলবোর্ড বা প্রচারপত্র- এসবের মাধ্যমে নানান উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে নিয়মিতই জনসমক্ষে হাজির হচ্ছে ব্যবসাগুলো।
ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটা শুনেই মনে হতে পারে হয়তো খুব সহজ একটা বিষয়। অথচ, এর ভেতরকার রহস্য কোনো থ্রিলার ফিল্মের চেয়ে কম নয়! তবে তার জন্য একজন মার্কেটিয়ারকে সেই রস আস্বাদনের উপযুক্ত হয়ে উঠতে হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিংকে সহজ ভাষায় ডিভাইস রিলেটেড মার্কেটিং বা ডিজিটাল চ্যানেল রিলেটেড মার্কেটিং বলা যায়। এবং বর্তমানে মার্কেটিং-এডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রির বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং। একই সাথে বলা যায় মার্কেটিং-প্রমোশনের একটা নতুন ধাপ এটি।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের গভীরে যদি আমরা যাই দেখতে পাবো- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, এস ই ও, ডিজিটাল পি আর, ব্লগ, ইমেইল মার্কেটিং, জিডিএন’সহ আরো কিছু সৌরজগতের গ্রহ-নক্ষত্রের মতো ছড়িয়ে আছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে সফলতার সূত্রও ঠিক এখানেই নিহিত। সৌরজগতের সব গ্রহ-নক্ষত্র যেমন পরস্পর সম্পৃক্ত ও একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত, তেমনই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এসব ক্ষেত্রগুলোকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরস্পর সম্পৃক্ত করে কাজ করতে হবে। তবে আমাদের দেশে মূলত সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংকেই ডিজিটাল মার্কেটিং মনে করা হয়। কারণ, ডিজিটালের সিংহভাগ জুড়েই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াই সব নয়। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এই সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ‘বাজেট ফ্রেন্ডলি’ প্রচারণার মোক্ষম অস্ত্র। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, গুগল মাই বিজনেস, পিনটারেস্ট, হোয়াটসএপ, ইমো, ভাইবার এর মতো প্লাটফর্মগুলোই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। এখানে মূলত কন্টেন্টভিত্তিক মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। তা ভিডিও, ছবি বা লেখনী, অথবা এই তিনটিরই সমন্বয় হতে পারে। অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন, দু’চারটা পোস্ট করলেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হয়ে যায়, কিন্তু বিষয়টা একদমই তা নয়। সাধারণত একটা সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্টের পিছনে মিনিমাম ৩-৪ জন মানুষকে কাজ করতে হয়।
গত পাঁচ বছর ধরে লীড বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে গিয়ে এ বিষয়টি একেবারে হাতে-কলমে দেখেছি। টিমওয়ার্ক ছাড়া এই মাধ্যমে মার্কেটিংয়ে সর্বোচ্চ ফল পাওয়া সম্ভব নয়। এখানে কেউ প্ল্যানিং করবে, কেউ কপি ক্যাপশন লিখবে, কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইন করবে এবং কেউ চ্যানেল ম্যানেজমেন্ট করবে, সেই সাথে কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে কেউ একজনকে। এই যে এতগুলা ব্যাপার, সবগুলো কাজ যদি একজন বা দুজন করতে যায় তখন আসলে সেটা থেকে আর রেজাল্ট বের হয় না বা খুব কম ক্ষেত্রেই রেজাল্ট আসে। কারণ, যিনি গ্রাফিক্সের কাজে সিদ্ধহস্ত, তিনি যে ভালো কপি-ক্যাপশন লিখতে পারবেন, তা নয়। তাই প্রতিটা পর্যায়েই আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ বা চলতি ভাষায় এক্সপার্ট মানুষ প্রয়োজন। আমরা যখন চিকিৎসা নিতে যাই তখন যেমন আমরা যে সমস্যা সেই রেলেভেন্ট অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে ছুটে যাই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমন। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং একটা প্রসেস, এই প্রসেসে বিভিন্ন ধাপে বিভিন্নজনকে বিভিন্ন কাজ করতে হয় মূলত।
এখন কন্টেন্ট মার্কেটিং এর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মিডিয়া বায়িং, সাধারণ মানুষ যাকে বুস্টিং নামে চেনে। অনেকেই হয়তো মনে করেন একটা পোস্ট করে কিছু ডলার বুস্ট করে দিলেই কাজ হয়ে যাবে। কিছু ক্ষেত্রে কাজ হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা ভালো ব্যাপার না একটা ব্র্যান্ডের জন্য। এর জন্য ট্রান্সমিডিয়া বা সকল ডিজিটাল মিডিয়ামের সম্মিলিত মার্কেটিং প্ল্যানিং প্রয়োজন। মিডিয়া বায়িং শুধুমাত্র ফেসবুকেই নয়, গুগল, ইউটিউব, হোয়াটসএপ, ইমো, ভাইবারসহ আরো অনেক প্ল্যাটফর্মে করা যায় এবং করতে হয়।
এখন আসা যাক কন্টেন্ট কেমন হতে পারে? কন্টেন্ট হতে পারে অনেক রকম। অডিও-ভিজুয়াল, স্ট্যাটিক গ্রাফিক্স, এনিমেশন ভিডিওসহ অনেকভাবেই ব্র্যান্ডকে তুলে ধরা করা যায়। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং দ্বারা ক্যাম্পেইন করা যায়। ওয়েবসাইটের ব্লগ সেকশনে ইনফরমেটিভ লেখা পাবলিশ করে, অনলাইন কম্পিটিশন এরেঞ্জ করে, সচেতনতা তৈরি করে নিজের ব্রান্ডের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বাড়ানো যায়।
কিন্তু এসব কিছুর আগে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। যা, ভালো এজেন্সি বা মার্কেটিয়ার ব্যতীত সম্ভব না। কারণ, বাজার সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো ও সর্বশেষ ধারনা ক্লায়েন্টকে তারাই দিতে পারে, কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে, তাও তারাই সবচেয়ে ভালো সাজাতে পারে। আর ক্লায়েন্ট পায় কাক্সিক্ষত ও সর্বোচ্চ প্রচার। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টকেও চিনতে হবে ভালো মার্কেটিয়ার বা এজেন্সি। সে গল্প অন্য কোনো দিন।
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, লীড বাংলাদেশ