ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির মাঝেও থেমে থাকেনি প্রযুক্তি বিষয়ক দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ আয়োজন ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০’। ভৌত অবকাঠামোর পাশাপাশি প্রাযুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সাজানো এবারের আয়োজনে ডিজিটাল বাংলাদেশের সক্ষমতা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডই দেখিয়ে দিয়েছে বলে মত দেশের আইসিটি সংশ্লিষ্টদের।
অন্যদিকে ভৌত কাঠামোতে আয়োজনের ১০ ভাগের এক ভাগ খরচে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০ গুণ বেশি মানুষের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশের ডাক পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
গত ৯ থেকে ১১ ডিসেম্বর আয়োজিত হয় সপ্তম ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০। এতে ৯ ডিসেম্বরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং ১১ ডিসেম্বরের সমাপনী অনুষ্ঠান ব্যতীত আয়োজনের অন্যান্য দিকগুলো এবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। একইসঙ্গে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) দেশজুড়ে পালিত হয় চতুর্থ ‘ডিজিটাল দিবস-২০২০’।
আয়োজন শেষে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এবং ডিজিটাল দিবসের নানান দিক নিয়ে বাংলানিউজের সাথে বিশেষ এক আলাপচারিতায় অংশ নেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আয়োজনের প্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এবারের আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের গত ১১ বছরের এগিয়ে যাওয়ার গল্প এবং সক্ষমতা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে যেসব সাফল্য ও সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে সেগুলোকে বহিঃবিশ্বে তুলে ধরা। এবারের করোনা পরিস্থিতিতেও এমন একটি আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করাই আমাদের এই অর্জনকে তুলে ধরে।
তিনি বলেন, এবারে আমাদের প্রতিপাদ্যই ছিল- ‘যদিও মানছি দূরত্ব তবুও আছি সংযুক্ত’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিকনির্দেশনায় এই করোনার মাঝেও গত প্রায় ৯ মাস ধরে আমরা ডিজিটালি সংযুক্ত আছি। আমাদের সরকারের একটি কাজও থেমে থাকেনি। এবারের আয়োজন থেকে এসব বিষয় তুলে ধরতে পারাটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দেশীয় সক্ষমতাকে নতুন করে অনুধাবন করা গেছে বলেও মন্তব্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এবারের আয়োজনে খরচ হয়েছে ভৌত আয়োজনের থেকে মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ। কিন্তু আমরা পৌঁছেছি লক্ষ্যমাত্রার থেকেও ১০ গুণ বেশি মানুষের কাছে। এই আয়োজন সফল করতে আমাদের দেশিয় প্রযুক্তি যে শতভাগ সক্ষম ও পারদর্শী সেই বিষয়টিও আমাদের সামনে নতুন রূপে হাজির হয়েছে।
আয়োজনের সম্পর্কে পলক বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করেছেন ৩৭ হাজার ৫২ জন অংশগ্রহণকারী। এতে প্রদর্শক হিসেবে অংশ নেন ২৯০ এর বেশি প্রতিষ্ঠান। সরকারের পক্ষ থেকে ৯৫টি স্টল ছিল। ২৭টি সেমিনার ও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন ২৭০ জন বক্তা। এদের জন্য ২৫ জন আন্তর্জাতিক বক্তাও ছিলেন। আমাদের যে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল অংশগ্রহণকারীদের জন্য, সেটিতে ইউনিক ভিজিটর ছিল ২০ হাজার ১৬৮ জন। ওয়েবসাইটে মোট ভিজিট হয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৬১ জনের। মোট ওয়েবসাইট ভিউ ছিল ছয় লাখ ৬৯ হাজার ২২৬ বার। প্রায় তিন লাখ ৫৯ হাজার ২৯৯ জন দর্শনার্থী অ্যাপ থেকে ভার্চ্যুয়ালি প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সেটির কথা বললে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনগেজমেন্ট ছিল ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৭১৯ জনের। মোট ভিডিও দেখা হয়েছে এক কোটি ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬০ বার, মোট এক কোটি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর কাছে এবারের আয়োজন পৌঁছেছে। শুধু ফেসবুকে মোট ভিডিও দেখা হয়েছে আট লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৫ বার, পোস্ট এনগেজমেন্ট ছিল তিন লাখ ৫৭ হাজার ৪৬২ জনের এবং মোট ৭৫ লাখ পাঁচ হাজার ৯৯৮ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছে এটি পৌঁছেছে। সকল ভিডিও ইউটিউবে দেখা হয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ পাঁচ হাজার ৮৯১ বার। এর বাইরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে মোট দর্শনার্থীদের মাঝে ভারত থেকে ১৯ হাজার ৮০৯ জন, নেপাল থেকে এক হাজার ৯৩২ জন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮১২ জন, সৌদি আরব থেকে ৪৫৩ জন, মালয়েশিয়া থেকে ৩২৫ জন, শ্রীলংকা থেকে ৩০৬ জন, ভিয়েতনাম থেকে ১৭৪ জন, যুক্তরাজ্য থেকে ১৬৮ জন এবং অন্যান্য দেশ মিলিয়ে ৪১০ জন ছিলেন।
দেশীয় আইসিটি খাতের উন্নয়নে স্থানীয় আইটি উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরকারের আরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, সরকারি ক্রয় নীতিমালায় দেশের সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাতের স্থানীয় কোম্পানীগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটা সংশোধিত আরএফপি টেমপ্লেট প্রণয়ন করে জারি করা দরকার। স্থানীয় কোম্পানীগুলোর বড় বড় প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত করতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, দাতা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের অর্থায়নসহ সরকারি ক্রয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিজিটাল ডিভাইস পণ্য, সফটওয়্যার বা আইটি পরিসেবাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা এবং বিদেশী কোম্পানীর কাজে ৬০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজন নিশ্চিত করা জরুরী। সবশেষে ডিজিটাল ট্রানজ্যাকশনকে আরও উৎসাহিত করার জন্য সব ধরণের ডিজিটাল লেনদের ওপর ক্যাশ-ব্যাক ইনসেন্টিভ ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছি। এই প্রণোদনার অর্ধেকটা ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে বন্টন করে দিলে, উভয় পক্ষই ডিজিটাল পদ্ধতিতে পেমেন্ট করতে ও গ্রহণ করতে উৎসাহিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
এসএইচএস/এইচএমএস