ঢাকা: কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনকে (কেইপিজেড) বেসরকারি হাইটেক পার্ক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে দিয়ে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, স্টার্টাপ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং কেইপিজেড এর মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক সই হয়।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কেইপিজেড মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হোসনে আরা বেগম, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) টিনা জেবিন এবং কোরিয়ান ইপিজেড এর পক্ষে এর চেয়ারম্যান ও সিইও মি. কিহাক সই করেন।
সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত লি জেন কিউন, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সমঝোতার আওতায়, কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃক প্রায় ১০০ একর জায়গায় প্রস্তাবিত হাই-টেক পার্ককে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বেসরকারি হাই-টেক পার্ক হিসেবে ঘোষণা করে। এছাড়াও বিনিয়োগে নীতিগত সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি যৌথভাবে কাজ করবে উভয় পক্ষ। কোরিয়ান ইপিজেড-এ বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপনে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কোরিয়ান ইপিজেড এর আইটি জোনকে বেসরকারি হাই-টেক পার্ক ঘোষণা করে বলেন, এর মাধ্যমে দেশের আইটি সেক্টরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াবে। এ হাইটেক পার্ক দেশে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি বাড়বে ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা চাই আমাদের তরুণ প্রজন্ম চাকরি খোঁজার পরিবর্তে চাকরি সৃষ্টির প্রতি অধিক মনযোগী হোক।
এছাড়া স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে উদ্যোক্তা এবং স্টার্ট-আপদের জন্য স্কেল-আপ প্রোগ্রাম, ট্রেনিং, কোচিং ও মেন্টরিং করা হবে বলেও জানান তিনি।
পলক আরও বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটিসহ উচ্চপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে চুয়েটে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দরনগরী ও দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম আইটি নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশ-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুই হাজার ৫০০ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেন। বর্তমানে কেইপিজেড এ ২৫ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে পাঁচটি হাই-টেক পার্কে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন পার্কগুলোতে বেসরকারি খাত থেকে প্রায় ৩২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। পাশাপাশি ১৩ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
কোরিয়ান ইপিজেড-কে বেসরকারি হাই-টেক পার্ক ঘোষণা করায় এখানে বিনিয়োগ ও ২০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী পলক। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগগুলোর যুগপৎ প্রয়াসে দেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি আরও বিস্তৃত হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী কেইপিজেড এর বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
এসএইচএস/আরআইএস/