ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

একাই লড়ছেন শারমিন, স্বপ্ন নিজের অবস্থান তৈরি করা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২১
একাই লড়ছেন শারমিন, স্বপ্ন নিজের অবস্থান তৈরি করা ...

ঢাকা: অল্প বয়সে বিয়ে তারপর দুই সন্তানের জননী। তবুও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সংসার করা হয়নি শারমিন সরকারের।

নয় বছরের সংসার জীবন শেষে নিজের দায়িত্ব নিতে হয় নিজেকেই। সেই থেকে একাই লড়ে যাচ্ছেন; আর স্বপ্ন দেখছেন নিজের একটি অবস্থান তৈরি করার।

২০০৯ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার মেয়ে শারমিনের বিয়ে হয় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই। সংসার সামলে ২০১০ এর এসএসসি পরীক্ষার্থী শারমিন শেষ পর্যন্ত এসএসসি পাস করেন ২০১৪ সালে। তবে ইচ্ছা থাকলেও শ্বশুরবাড়ির নিষেধাজ্ঞায় আর পড়াশুনা করতে পারেননি শারমিন।

নিজের স্বপ্ন এক প্রকার ভুলে যেতে বসা শারমিনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ২০১৮ সালে। ইতোমধ্যে দুই ছেলের মা শারমিন দেখেছেন কঠিন বাস্তবতা। সিদ্ধান্ত নেন, একাই লড়ে যাবার। স্বপ্ন দেখছেন ঢাকা শহরে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করার।

শারমিন সরকার বলেন, আমার যখন বিবাহ বিচ্ছেদ হলো তখন বুঝলাম যে, একজন নারীর জন্য শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আগে থেকেই ইচ্ছে ছিলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। কিন্তু বিয়ের কারণে কিছুই পারতে পারেনি। সেই ঘটনা আমাকে অনেক উদ্বুদ্ধ করেছে লুকানো স্বপ্নগুলো নিয়ে আবার কাজ করার।

শারমিন জানান, অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করার পেছনেও ছিল পরিবারের অসহযোগিতা। কুমিল্লা শহরে প্রথমে আমি একটি বিউটি সেলুন দিয়ে কাজ শুরু করি। সেখানেও আমার পরিবার এবং সাবেক স্বামী অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে আমার জন্য। তাদের কারণে আমাকে আমার প্রথম প্রজেক্ট শুরু করার দুই মাসের মধ্যেই থামিয়ে দিতে হয়। আমি যখন অফলাইনে কিছু করতে পারছিলাম না, তখনই আইডিয়া আসে অনলাইনে কাজ করার। বাসায় থেকে এক রকম গোপনেই অনলাইনে কাজ শুরু করি। ‘বিউটি জোন বাই শারমিন মেকওভার’ নামে একটি অনলাইন পেজ চালু করি। সেখান থেকে রূপচর্চা বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের পাশাপাশি পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর সেমজার’স নামক আরেকটি পেইজ চালু করি। এই পেইজের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন পোশাক বিক্রি করি।

শুরুতে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে গেলেও বর্তমানে ব্যবসায় ভালো করছেন বলে দাবি শারমিনের। তিনি বলেন,  আমি যেসব পণ্য নিয়ে কাজ করি সেগুলোর নতুন চালান আসার অল্পকিছুদিনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন পোষাকের কাপড় সংগ্রহ থেকে শুরু করে সেগুলোর প্যাকেজিং এবং কুরিয়ার এজেন্সি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজ আমিই করি। পোষাকের ডিজাইনও আমি নিজেই করি ফলে আমার পোষাকের নকশা ইউনিক। অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ায় গ্রাহকেরা তাদের পোষাক আমার কাছ থেকে করিয়ে নিতে পছন্দ করেন। শুরুতে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। ইসলামপুর, চকবাজারসহ এসব পণ্য যেসব সম্ভাব্য জাগায় পাওয়া যায় সবখানে ঘুরে ঘুরে আমাকে কাজ করতে হয়েছে।  

নিজের ক্যারিয়ার গড়তে শারমিন এখন ঢাকায় এসে বসবাস করছেন। আর তার সন্তানেরা থাকেন কুমিল্লার বাড়িতেই। ঢাকায় নিজের একটি অবস্থান তৈরি হলেই সন্তানদের নিজের কাছে নিয়ে আসবেন; এমনই স্বপ্ন শারমিনের। সম্ভাবনাময়ী এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমার স্বপ্ন হচ্ছে এই ঢাকায় নিজের একটা অবস্থান, পরিচয় তৈরি করা। আমি যখন ঢাকায় থাকি সন্তানদের জন্য মন খুব কাঁদে। আমার কাংখিত অবস্থানে পৌঁছাতে পারলে ওদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসব। মা হিসেবে ওদের সেই পরিচর্যা করতে চাই যা ওদের বাবার করার কথা ছিল। ইতোমধ্যে বনশ্রীতে আমার প্রথম আউটলেট চালু করার বিষয়ে কাজ করছি। ইচ্ছে আছে এমন অন্তত তিনটি আউটলেট গড়ে তোলার। শুধু আমি না, আমার মতো অন্য আরও যেসব নারীরা আছেন, তাদের জন্যও কিছু করতে চাই আমি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২১
এসএইচএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।