ঢাকা: জাতীয় হেল্পলাইন ও তথ্য বাতায়ন কেন্দ্রের হটলাইন শর্টকোড নম্বর ৩৩৩। দেশের নাগরিকদের বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের নানান ধরনের তথ্যগত সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মটি।
২০১৪ সালের জুনে প্রায় ২৫ হাজার ওয়েবসাইটের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় জাতীয় তথ্য বাতায়ন। পরবর্তীতে এটিতে হেল্পলাইন যুক্ত করা হয় এর শর্টকোড হয় ৩৩৩। প্রায় এক বছর পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের পর ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় হেল্পলাইন নম্বরটি।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছে প্ল্যাটফর্মটি।
২০২০ সালে দেশে করোনা ভাইরাস আক্রমণের সময় এবং পরবর্তীতে লকডাউন আরোপিত হলে প্ল্যাটফর্মটির প্রয়োজনীয়তা, দক্ষতা এবং উপকারিতা আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়। আর সেটি অব্যাহত আছে চলতি লকডাউনেও।
এটুআইর কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া আউটরিচ কনসালট্যান্ট আদনান ফয়সল জানান, ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল থেকে চলতি ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত তিন বছরে ৩৩৩ নম্বরে ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি ফোন কল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ হাজারের বেশি বিভিন্ন সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হয়েছে যেমন ছয় হাজারের বেশি বাল্যবিয়ের প্রতিরোধ করা গেছে পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ লাখ এবং নাগরিক সেবার পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে চার লাখের অধিক। মোট ফোন কলের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ৫০ লাখের বেশি ফোন কল এসেছে শুধু করোনা বিষয়ক। এছাড়া ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ত্রাণ সাহায্য চেয়ে কল এসেছে ১৮ লাখের বেশি।
তিনি আরও জানান, জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ এর মাধ্যমে করোনাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসেবী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ নাগরিককে।
৩৩৩ এ বর্তমানে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ফোন কল আসে। তবে, বিগত দুই মাসে এর পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্ল্যাটফর্মটিতে ৭০ হাজারের বেশি ফোন কল আসছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতেও প্ল্যাটফর্মটিতে নাগরিকদের ফোন কলের সংখ্যা বেড়ে যায়।
বিশেষ করে করোনার সময়ে হোম কোয়ারেন্টিন তথ্য জানতে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৮৮৮, করোনা সম্পর্কে জানতে চার লাখ ৬১ হাজার ৪৬৯, সরাসরি চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে চার লাখ ৪৮ হাজার ৯৪১, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিতে ৩৩ হাজার ২৫১, কোয়ারেন্টিন অনুরোধ জানিয়ে ছয় হাজার ৮৪৪, মা-টেলিহেলথ সেবা নিতে ৮৯ হাজার ৭৪৯ এবং কোভিড-১৯ পজিটিভদের মধ্যে থেকে এক লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৩টি কল আসে। এছাড়াও জরুরি খাদ্য এবং অন্যান্য সেবা সম্পর্কে চার লাখ নয় হাজার ৮১৩টি কল আসে যেগুলো স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। অবশ্য এই সেবাটি গত বছরের ৩১ অক্টোবরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে নিত্যপণ্য অথবা ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে এখনও সেবা দিয়ে যাচ্ছে ৩৩৩। এ বিষয়ে প্ল্যাটফর্মটিতে কল এসেছে সাত লাখ ছয় হাজার ৯১৮টি।
৩৩৩ সম্পর্কে এটুআইর প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, এই হটলাইন থেকে আমরা প্রচুর তথ্যগত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এগুলোর মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ, হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়মাবলী, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য এবং সরকার ঘোষিত লকডাউনকালে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ঘরে রাখার জন্য শিক্ষা, ই-কমার্স, কর্মহীন দরিদ্র নাগরিকদের জন্য ত্রাণ সুবিধা সংক্রান্ত তথ্য, ঘূর্ণিঝড় আমফান মোকাবেলায় বিভিন্ন তথ্য, বন্যার প্রভাবে কর্মহীন গরিব নাগরিকদের জন্য ত্রাণ সুবিধা, নিত্যপণ্য অথবা ওষুধ ক্রয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই সেবা প্ল্যাটফর্মের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে যে, এর মাধ্যমে আমরা নাগরিকদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি। করোনা মহামারির আগে ৩৩৩ নম্বরে কল করলে প্রতি মিনিটে ৬০ পয়সা করে চার্জ কাটা হতো, কিন্তু দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে এই হেল্পলাইনকে টোল ফ্রি করা হয়।
অটোমেশন প্রযুক্তির মাধ্যমেই ৩৩৩ এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে সহজে ও দ্রুত সেবা দেওয়া যায় বলেও জানান আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, সেবার একটি বড় অংশ আইভিআর তথা ইন্টারেক্টিভ ভয়েস রেসপন্সের মাধ্যমে দেওয়া হয়। যেমন ৩৩৩ কল করার পর শূন্য চাপলে সরাসরি সরকারি তথ্য, সেবা ও সামাজিক প্রতিকার বিষয়ক তথ্য পাওয়া যাবে। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য এমনকি করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে জানতে হলে ৩৩৩ এর পর ১ চাপলেই হবে। এভাবে নিত্যপণ্য এবং ওষুধের জন্য ৫ এবং সাইবার নিরাপত্তাজনিত বিষয়ের জন্য আছে ৮। এর ফলে স্বল্পসংখ্যক মানবসম্পদ নিয়েই বৃহৎ পরিসরে সেবা দেওয়া যাচ্ছে। আমাদের বর্তমানে ৪০ জন কল সেন্টার এজেন্ট এবং প্রায় ১১ হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। এর বাইরেও মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তারা, চিকিৎসকেরা আমাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য করে আসছেন। আমরা তাদেরকে আমাদের টিমের অংশ মনে করি।
ভবিষ্যতে এই সেবার কল আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান এটুআই পরিচালক। তবে, নাগরিক পর্যায়ে সেবা আরও সহজ করতে অন্যতম বাঁধা হচ্ছে ‘প্র্যাংক কল’বা অপ্রয়োজনীয় কল। মান্নান বলেন, আমরা শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি না তবে পরিকল্পনা আছে শিক্ষা বিষয়ক সেবাও আমরা দেবো। প্রান্তিক পর্যায়ে সেবার পরিধি আরও বাড়াতে চাই যেমন ধরেন কাউকে হয়তো একটা দরখাস্ত বা আবেদন লিখতে হবে। সেটা কীভাবে লিখতে হবে বা কী লিখতে হবে সেটা নাগরিকদেরকে আমাদের এজেন্টরা বলবেন। তবে সমস্যা হচ্ছে এখানে প্রচুর প্র্যাংক কল আসে। দেখা গেলো, আসলেই এখানে সেবা পাওয়া যায় কিনা সেটা টেস্ট করতে শুধু শুধু ফোন দিচ্ছে কেউ। এজেন্টদের সঙ্গে এমনিতেই কথা বলতে ফোন দিচ্ছে। এতে করে ক্ষতি আসলে হচ্ছে নাগরিকদের। যিনি আসলেই কোনো গুরুতর সমস্যায় আছেন বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানতে আমাদেরকে কল করতে চাচ্ছেন তিনি হয়তো তার সেবাটা পাচ্ছেন না। তাই আমি আহ্বান করছি সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আচরণ করার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
এসএইচএস/এএটি