ঢাকা: অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করা এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতে কর হ্রাস বাংলাদেশের জন্য উৎকৃষ্ট কৌশলগত নীতিগুলোর অন্যতম বলে বিবেচিত হতে পারে বলে জিএসএমএ প্রকাশিত এক গবেষণায় জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ মে) জিএসএমএ প্রকাশিত এক গবেষণায় আরও বলা হয়, মোবাইল টেলিযোগযোগ খাতে বাংলাদেশে ৪৪ শতাংশ কর দিতে হয়, যা বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ।
আগামী জুনে যে জাতীয় বাজেট উপস্থাপিত হবে তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিটি খাতের কর স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিতকরণ, সেবার মান উন্নয়নে বাধা এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে।
এতে বলা হয়েছে, আইসিটি খাতে করের সংস্কার হলো একটি অত্যাবশ্যকীয় নীতিগত সংস্কার, যা বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের আওতা বৃদ্ধি করবে।
প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে মোবাইল সেবাদাতাদের প্রতি ১০০ টাকা রাজস্বের প্রায় অর্ধেকই কর এবং নানা ধরনের রেগুলেটরি ফি হিসেবে দিতে হয়, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যদেশগুলোর এ ধরনের গড় ফির প্রায় দ্বিগুণ। এই অর্থ দেশের জনগণকেই পরিশোধ করতে হয় যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ে।
বাংলাদেশের অনেক নাগরিকের জন্য ২০০ টাকা সিম ট্যাক্স বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, যদিও তা সাশ্রয়ী করে তোলার জন্য অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটররাই দিয়ে দেয়।
এছাড়াও মোবাইল সেবার ওপর মোট ৩৫ শতাংশ কনজিউমার ট্যাক্স বা ভোক্তা পর্যায়ে কর আরোপিত আছে, যা সরকারের কোষাগারে যুক্ত হয়; এর ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১ শতাংশ সারচার্জ।
আন্তর্জাতিক টেলিযোগযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) মনে করে যে, এশিয়ার দেশগুলোতে ১০ শতাংশ মোবাইল ব্রডব্যান্ড অন্তর্ভুক্তির কারণে জিডিপিতে জনপ্রতি অবদান দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরগুলো এ পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশে সর্বাধিক ৯৫ শতাংশ ফোরজি নেটওয়ার্ক কভারেজ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত। ডিজিটাল অর্থনীতিতে এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ করতে না পারা ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক হতে পারে।
জিএসএমএ-এর এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান জুলিয়ান গরম্যান বলেন, মোবাইল অপারেটররা কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে নিজেরাই কঠিন সময় অতিবাহিত করেছে। তারপরেও তারা গ্রাহকদের সংযুক্ত রেখে তাদের ব্যবসা, শিক্ষা এবং সমাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। বিশ্বজুড়ে এই মহামারি জানান দিয়েছে যে একটি সংযুক্ত জনগোষ্ঠীই পারে অর্থনীতিকে সুসংহত রাখতে যা, ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য একটি পরিকাঠামো (প্লাটফর্ম) প্রস্তুত করে। একে আমাদের ত্বরান্বিত করতে হবে। এ খাতের শিল্প কর সংস্কার করা হলে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ আরও প্রসারিত হবে, যা বাংলাদেশকে অভাবনীয় অর্থনৈতিক সুবিধা দেবে।
তিনি আরও জানান, জিএসএমএ বিশ্বের ৭৫০ টিরও বেশি অপারেটরকে প্রতিনিধিত্ব করে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক শিল্প কর নীতির অনুপস্থিতি বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপকল্পকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জিএসএমএ অর্থনীতির অন্যান্য স্তরকে মোবাইল খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের সুপারিশ হলো:
=>বর্তমান মিনিমাম টার্নওভার ট্যাক্স ২ শতাশ থেকে ০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। জিএসএমএ মনে করে যে এই কর হ্রাস জিডিপিতে বছরে ৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করে বৃদ্ধি করবে এবং ৫ বছর পরে এই অবদান ৪৭৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
=>কর্পোরেট করের হারকে বর্তমান ৪৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৪০ শতাংশ করা এবং একই সাথে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটরগুলির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। এই হ্রাস জিডিপিতে অতিরিক্ত ১৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত করবে এবং ৫ বছর পরে কর থেকে বছর প্রতি ১৪ মিলিয়ন ডলার আয় বৃদ্ধি করবে।
জিএসএমএ আরও সুপারিস করে যে, করারোপ প্রক্রিয়া সুসংহত করা দরকার এবং মোবাইল গ্রাহকদের সামর্থ্য বিবেচনা করে এই খাতের কর কমানো দরকার।
দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটদের সংগঠন এমটব প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিকম খাত বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি। তবে দুর্ভাগ্যজনক যে, কর ব্যবস্থা অর্থনীতিতে এই খাতের অবদানকে যথযথভাবে মূল্যায়ন করে না। টেলিকম খাত যেমন তামাকসহ অন্যান্য শিল্পের তুলনায় যতটা ন্যায্য তার চেয়ে বেশি কর দেয়। এটা ডিজিটাল অবকাঠামো সৃষ্টিতে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। মোবাইল খাতের আর্থ-সামাজিক অবদান বিবেচনা করে এবং ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রা ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা সরকারকে বিনিয়োগ-বান্ধব কর ব্যবস্থার প্রবর্তনের অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ