ঢাকা: শখের মোটরবাইক বা গাড়ির নিরাপত্তা কে না চায়। আর সেই যানবাহনের নিরাপত্তা বিষয়ক সমাধান দিতে কাজ করছেন দেশেরই এক তরুণ প্রযুক্তিবিদ ও উদ্যোক্তা রাদবী রেজা।
রেজার তৈরি ট্যাকটিক্যাল সিকিউরিট সিস্টেম লক বা ট্যাসলক নামক প্রতিষ্ঠানটি এখন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। রাদবী রেজা পরিচিতি পেতে শুরু করেছেন খোদ ‘ট্যাসলক রেজা’ নামে।
জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে গাড়ি ও বাইকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিকিউরিটি ডিভাইস নিয়ে কাজ করছেন রেজা। তবে, সেটি সাধারণ মানের কোনো ডিভাইস হলে হবে না। ডিভাইসকে হতে হবে মিলিটারি গ্রেডের ট্যাকটিকাল ধরনের। আর সেখান থেকেই শুরু ট্যাসলক সিকিউরিটি ডিভাইসের।
এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ ধরনের সিকিউরিটি ডিভাইস বাজারে এনেছে ট্যাসলক। এর সবগুলোই রাদভী রেজার উদ্ভাবন অথবা ডেভেলপ করা। এরজন্য রেজার রয়েছে নিজস্ব রিসার্ভ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যবস্থা। শেষ তিনটি মডেলের পেটেন্ট ও করা আছে রেজার। এছাড়াও ট্যাসলক নামের ট্রেডমার্ক ও কপিরাইটও করা আছে তার।
রেজা বলেন, আমাকে অটো মোবাইলপ্রেমী ও সংগ্রাহক বলতে পারেন। ছোটবেলা থেকেই গাড়ি ও বাইকের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ। বেশকিছু নামিদামি ব্র্যান্ডের বাইক আমার সংগ্রহে আছে। একসময় যানবাহনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আসে। ১৪টির বেশি দেশ ঘুরেছি। চীন ও জাপানের সেরা কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখেছি তবে সেগুলো সেভাবে মনে ধরেনি। তবে ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আমার এক বন্ধু একবার রাশিয়ার ‘স্পাইক’ নামক একটি যন্ত্র দেখায়। প্রথমবার সেটির থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এর সঙ্গে আরও কিছু ফিচার যোগ করে ট্যাসলকের প্রথম সংস্করণটি বাংলাদেশে উন্মুক্ত করি। এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় ৫ লাখ যানবাহনে ট্যাসলকের বিভিন্ন সংস্করণ ও মডেলের ডিভাইস ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ডিভাইস হচ্ছে ট্যাসলক ডিফেন্ডার।
ডিভাইসটি নিয়ে রেজা বলেন, এতে ৩০টিরও বেশি ফিচার আছে যেমন বাইক বন্ধ করার পর এর মালিক যদি এটি লক করতে ভুলেও যান তবুও ৩ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি লক হয়ে যাবে। আবার বাইকের মালিক বাইকের কাছে আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন-লক হয়ে যাবে। এতে টু-ওয়ে এলার্ম আছে অর্থাৎ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আপনার বাইক ধরা হলে বাইকে তো অ্যালার্ম বাজবেই পাশাপাশি রিমোটেও অ্যালার্ম বেজে উঠবে। এর সঙ্গে সেফটি ফিউজ দেওয়া আছে ফলে বাইকের তারে কোনো সমস্যা হলেও লক চালু থাকবে। আবার কোনো চোর ডিফেন্ডারের তার কেটে ফেললেও এর কার্যকারিত নষ্ট হবে না বরং অ্যালার্ম বেজে উঠবে এবং বাইক আর স্টার্ট হবে না। চোর ডাকাত বাইকের মূল চাবি নিয়ে গেলেও মালিক চাইলে বাইক অকেজো করে দিতে পারেন। আবার এতে রিভার্স কিছু সুবিধা আছে যেমন মালিক চাইলে বাইকের চাবি ছাড়াই বাইক স্টার্ট দিতে পারবেন। নামাজ ও মিটিং এ থাকলে বাইকের অ্যালার্ম বন্ধ রাখতে পারবেন। আবার অনেক সময় গ্যারেজে বা বাড়ির বাইরে পার্ক করা থাকলে বাড়ির ছোট বাচ্চারা বাইক ধরে। তখন যেন অযাচিতভাবে এলার্ম বেজে না ওঠে তার জন্য ৫ ধাপের সেন্সর দেওয়া আছে এতে যেটা বাইকার নিজের মতো সেট করে নিতে পারেন। ডিভাইসটির দাম তিন হাজার ৯৯ টাকা এবং ফ্রি ইন্সটলেশনের সঙ্গে ১ বছর পর্যন্ত এর ওয়ারেন্টি আছে।
এছাড়াও ট্যাসলক ডিভাইস ব্যবহার করতে গ্রাহকদের কোনো অতিরিক্ত ফি বা মাসিক সাবসক্রিপশন ফি’র খরচ বহন করতে হয় না। এর জন্য জিপিএস প্রযুক্তির পাশাপাশি জিএসএম প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয় ট্যাসলকের ডিভাইসগুলোতে। আর ব্যাক আপ হিসেবে তিনটি সার্ভার ব্যবহার করে ট্যাসলক। এছাড়াও গুগল ম্যাপের পাশপাশি ‘এ’ এবং বাইডু মানচিত্র ব্যবহার করা হয় ট্যাসলক ডিভাইসে।
দেশের প্রতিটি যানবাহনে ট্যাসলক ডিভাইস থাকবে এমনটাই স্বপ্ন দেখেন তরুণ এই প্রযুক্তিবিদ। সেসঙ্গে উদ্যোক্তা হিসেবে চান আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে।
রেজা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে এখন ২২ জন পূর্ণকালীন চাকরিতে আছেন। পাশাপাশি ডিলার, বিক্রেতা বা সাপ্লায়ার মিলিয়ে চার শতাধিক ব্যবসায়ী ট্যাসলকের সঙ্গে যুক্ত আছেন। দেশের প্রতিটি বিভাগে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন আরও অন্তত ৪০ জন। আমি স্বপ্ন দেখি যে, ট্যাসলক আরও বড় হবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতটাই বড় হবে যে, একদিন এমন আসবে যখন এই দেশের সব যানবাহনে ট্যাসলক ইন্সটল থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২১
এসএইচএস/এএটি