ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত

মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য, গুজব ও অপপ্রচার রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করছে সরকার। আইনটি পাস হলে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে অফিস ও সার্ভার স্থাপনে বাধ্য থাকবে।

অর্থাৎ দেশের নাগরিকদের তথ্য দেশের ভেতরেই সংরক্ষণ করতে হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নতুন আইনের খসড়ার বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।  

তিনি জানিয়েছেন, নতুন সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিদেশি ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে জাতীয়ভাবে ডেটা সেন্টার তৈরি করতে হবে এবং ব্যবহারকারীদের তথ্য দেশের ভেতরেই সংরক্ষণ করতে হবে।  

শুধু প্রযুক্তি কোম্পানিই নয়, বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দেশের ভেতরেই ডাটা সেন্টার স্থাপন করতে হবে বলেও জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের মানুষের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, তথ্য সুরক্ষায় এবং মানুষের গোপনীয়তা রক্ষার জন্যও আমাদের কোনো আইন নেই। এসব নিশ্চিত করতেই নতুন আইন করা হচ্ছে।  

তবে এমন আইন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেয়ে ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্যই এই আইন বেশি ব্যবহার করা হতে পারে।  

নাগরিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম নাগরিকের মুখপাত্র ড. সি আর আবরার বলেন, অফলাইনে ভিন্নমত প্রকাশের নানা বিধিনিষেধ রয়েছে, তাই মানুষ নিজের ভিন্নমত প্রকাশের ক্ষেত্র হিসেবে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেই বেছে নিচ্ছে। এই আইন করা হলে তাদের মতপ্রকাশের এই সুযোগটাও আর থাকবে না। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেই শুরু হয়েছিল।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫টি দেশের মধ্যে একটি যেখানে তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা বিষয়ক কোনো আইন নেই, তাই বিশেষজ্ঞরা এ ধরণের আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন। তবে তারা আশঙ্কা করছেন খসড়া আইনে মূল বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রভাষক ও আইন, গোপনীয়তা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মো. সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, সরকার যা করার চেষ্টা করছে তাকে ডেটা লোকালাইজেশন বলা হয়। এটি বলতে বোঝায়, যে ফিজিক্যাল ডিভাইসটিতে একজন ব্যক্তির তথ্য থাকে তাকে দেশের সীমানার ভেতরেই থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞরা একে দ্বিমুখী তলোয়ারের সাথে তুলনা করেছেন। এছাড়া উদ্বেগজনক আরেকটি বিষয় হলো নতুন খসড়ায় এটা স্পষ্ট নয় যে সরকারের এসব ডিভাইসের ভিতর থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে কিনা।

যদিও প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, সরকার মনে করে যে তথ্য ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় সম্পদ, এবং এই তথ্যকে রক্ষা করার জন্যই আমরা এই আইন তৈরি করছি।

তবে সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, আমার তথ্য আমার নিজের সম্পত্তি হওয়া উচিত। কোন আইন দিয়ে একে বেধে দেয়া ঠিক নয়।

এদিকে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকার শুধু একটি তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করেই থেমে থাকবে না। তারা ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ জড়িতদের ধরার জাল বিস্তৃত করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ এ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। তবে এটি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।