ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

নতুন মাদকের নাম ‘সোশ্যাল মিডিয়া’, স্মার্টফোন যার ডিলার!

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
নতুন মাদকের নাম ‘সোশ্যাল মিডিয়া’, স্মার্টফোন যার ডিলার!

অনেকেই বলে থাকেন, সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের অনেক উপকার করেছে। দূরকে কাছে এনে দিয়েছে, পরিবার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সারাক্ষণ যুক্ত থাকার সুযোগ করে দিয়েছে।

আর তাই সোশ্যাল মিডিয়াকে তারা প্রযুক্তির আশির্বাদ হিসেবেই দেখতে চান।  

আবার কিছু মানুষ এই মাধ্যমের সুবিধাগুলো স্বীকার করে নিয়েও অসুবিধা বা অপকারিতাগুলো তুলে ধরেন। আর হিসাব করে দেখলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখেই আছি বেশি। চলুন দেখা যাক হিসাব করে...  

চিন্তা করুন, আপনি বুঝতে পারছেন আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে, আপনার ঘুম নষ্ট হছে, শরীরের ওপর চাপ পড়ছে। আপনি চেষ্টা করছেন এই অভ্যাস থেকে বের হতে, কিন্তু পারছেন না। নিশ্চয়ই আপনি ভাবছেন এখানে কোনো ক্ষতিকর মাদকের প্রভাব নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু না! এখানে বলা হচ্ছে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন ও এতে থাকা সোশ্যাল মিডিয়ার কথা। এসব নিয়ে কথা বলেছেন হ্যাবিট স্ট্রং এর প্রধান রাজন সিং।

রাজন সিং স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের নেশা নিয়ে প্রথমেই বলেন, এই কোম্পানিগুলো অর্থ উপার্জন করে কোথা থেকে। যদিও আমরা অনেকেই মনে করি যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে তো টাকার প্রয়োজন হচ্ছে না। আমরা ফ্রিতেই ব্যবহার করতে পারছি। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম স্ক্রলিং করতে করতে একটু পরপরই সামনে বিজ্ঞাপন চলে আসছে। আর এই বিজ্ঞাপনই সোশ্যাল মিডিয়ার আয়ের প্রধান উৎস।  

অর্থাৎ ফেসবুক আমাদের সময়, মনোযোগ ও অভ্যাসকে ব্যবহার করে আমাদের সামনে বিজ্ঞাপন নিয়ে আসছে। আর সেই বিজ্ঞাপন থেকে আয় করছে। আমরা যতো বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছি, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম তা কাজে লাগিয়ে মুনাফা তৈরি করে নিচ্ছে।

আর এভাবেই ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের আয় ছয় লাখ কোটি রুপিরও বেশি বলে জানান রাজন সিং।  

তিনি আরো বলেন, আপনি যদি ফেসবুক হন, তাহলে কিভাবে নিজের আয় বৃদ্ধি করবেন এবং আপনার করণীয় কী হবে? স্বাভাবিকভাবেই আপনি চাইবেন, মানুষ এই প্ল্যাটফর্মে আসুক এবং যথাসম্ভব বেশি সময় এখানে কাটিয়ে দিক। বাস্তবেও মানুষ বেশিরভাগ সময় ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রামে কাটিয়ে দেয়।

আর এজন্য দরকার ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে যেন আমরা মনের অজান্তেই চলে আসি। আর এই আসাটাকে একটি অভ্যাসে পরিণত করতে হবে তা যেন একসময়ে আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়। অর্থাৎ আমরা কারণে-অকারণে যেন সোশ্যাল মিডিয়া চেক করতে চলে আসি। অনেক সময়ে আমরা আনমনেই এটি করে থাকি।  

রাজন বলেন, আসক্তি কী? আসক্তির মধ্যে দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে। যার একটি হলো- অবশ্যই কাজটি আবশ্যিকভাবে করার জন্য তাড়না তৈরি হওয়া এবং দ্বিতীয়টি হলো- যখন এই অভ্যাসের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেটা জেনেও আর তা থামাতে পারা যায় না; যখন এ ধরনের পর্যায় চলে আসে, তখন সেই অভ্যাসকে আসক্তি বলে।  

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই আসক্তি আমাদের মস্তিষ্কে কোকেনের মতো প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের মস্তিষ্কে এক প্রকার হরমোন নিঃসরণ করে যা ডোপামিন নামে পরিচিত। কেউ কোকেন সেবন করলে তার মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে, সে এক ধরণের প্রশান্তি অনুভব করে এবং সে আরও বেশি করে কোকেন সেবনের তাড়না অনুভব করে। সোশ্যাল মিডিয়াও ঠিক একইভাবে আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটায়।

আর কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া আমদের ভেতরে এই আসক্তি তৈরি করে?

উদাহরণ টেনে রাজন বলেছেন, নোটিশ বোর্ডে যখন কোনো কিছু লেখা থাকে, তখন তাতে মানুষের তেমন একটা আগ্রহ থাকে না। এমনকি সেখানে কবিতা কিংবা অন্য কিছু লেখা থাকলে খুব বেশি মানুষ দেখে না। দেখলেও তার প্রতিক্রিয়া বোঝা যায় না। কিন্তু কেউ যখন ফেসবুকে ছবি, গল্প কিংবা অন্য কিছু পোস্ট দিচ্ছে। মানুষ তাতে লাইক দিতে পারছে।  

যে ব্যক্তি ছবিটি পোস্ট করেছেন, তিনি তখন মানসিকভাবে দারুণ প্রশান্তি লাভ করছেন। তিনি ভাবছেন একশো মানুষ লাইক দিয়েছে, এক হাজার মানুষ লাইক দিয়েছে কিংবা ১০ হাজার মানুষ লাইক দিয়েছে তার লেখা, ছবি বা গল্পে। আর এটা দেখে অন্যরা ভাবছে, ওই ব্যক্তির পোস্টে এতো লাইক পড়েছে, এটা তো অনেক বড় কিছু। সে কারণে মানুষজন সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার থাকার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। যার ফলোয়ার বেশি, অন্যরাও তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে। এখন এটা একটি খেলা হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য এবং তাদের কাছ থেকে লাইক পাওয়ার জন্য তারা আরও বেশি আকর্ষণীয় ছবি ও পোস্ট শেয়ার করছে। যত বেশি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার হচ্ছে, পোস্টদাতা তত বেশি খুশিতে উত্তেজিত হচ্ছে। আপনি যখন ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন, আপনিও চান যে, অনেক বেশি মানুষ এতে লাইক দিক। এতে করে ডোপামিনের সঙ্গে ডিল হয়ে যাচ্ছে। যখন অনেক বেশি মানুষ আপনার পোস্টে লাইক দিচ্ছে, কিংবা এমন কেউ লাইক দিয়েছে, যা আপনি প্রত্যাশা করেননি; তখন খুশিতে আপনার ডোপামিন লেভেল বেড়ে যাচ্ছে।

এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতি আমাদের আসক্তি তৈরি হচ্ছে। এবং সেই আসক্তি ক্ষতিকর পর্যায়ে চলে গেলেও আমরা তা থেকে মুক্ত হতে পারছি না।
 
ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে ভয়াবহ মাদকের মতোই এটি আমাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
নিউজ ডেস্ক  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।