বিশ্বে ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩০ কোটিরও বেশি। তবে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারে ঝুঁকিও আছে অনেক।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবহারকারীদের এই প্লাটফর্ম থেকে সরে যাওয়ার একটি বড় কারণ এই মুহূর্তে আপনার সামনে হাজির। যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে বলা হচ্ছে, প্ল্যাটফর্মটিতে নতুন সুরক্ষা যোগ করা হয়েছে। তারপরও এখানে একটি বিশাল ফাঁক রয়েছে, যা এটিকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, যা ফেসবুক ও এর গোপন ব্যাকএন্ড সিস্টেমকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যখন অ্যাপলের বিতর্কিত সিএসএএম আপডেট এবং ব্যাকট্র্যাক শিরোনামের খবরগুলো প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে, তখন ফেসবুক চুপচাপ মেসেঞ্জারে একটি বিশাল পরিবর্তন করেছে। অ্যাপল যা করেছে এটি তার চেয়েও আপনার নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার ওপর আরও গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
মেসেঞ্জারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এর এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের অভাব। এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (ইটুইই) হলো এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেখানে শুধু যোগাযোগকারীরাই একে অন্যের বার্তা পড়তে পারেন। নীতিগতভাবে এটি টেলিকম সেবা প্রদানকারী, ইন্টারনেট সরবরাহকারী এবং এমনকি যোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারীদের গোপন কথা জানার অধিকার দেয় না। এক্ষেত্রে মেসেঞ্জারে সুরক্ষার বেশ অভাব রয়েছে।
এ অবস্থায় ফেসবুক জানিয়েছে কয়েক বছর অপেক্ষার পর অবশেষে তারা এই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিষয়টি সমাধানে কিছুটা আশা দেখতে পাচ্ছেন। তারপরও এক্ষেত্রে দুটি বড় সমস্যা রয়েই গেছে। তাই আপনি যদি মেসেঞ্জার ব্যবহার চালিয়ে যেতে চান, তাহলে সেগুলো আপনার জানা থাকা উচিত।
ইউজার কালেকশন ব্যবসা: ফেসবুক ডেটা কালেকশন ব্যবসা করে এটা আমরা সবাই জানি। সংস্থাটি এখন ইউজার কালেকশন (ব্যবহারকারী সংগ্রহ) ব্যবসাও করছে। বিষয়টি বুঝতে শুধু সংখ্যার দিকে খেয়াল করুন। ফেসবুকের রয়েছে চারটি অ্যাপ। সেগুলো হল- ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম। এগুলো ৩ বিলিয়নেরও বেশি ডিভাইসে ইনস্টল হয়েছে। অন্য যত অ্যাপ রয়েছে তার মধ্যে কেবল ‘টিকটক’ এই উচ্চতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু সব ব্যবহারকারীই এক নয়। ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম একটি অন্যটির সঙ্গে শক্তভাবে সংযুক্ত। মূল প্ল্যাটফর্ম এবং এর ফটো-শেয়ারিং সাবসিডিয়ারি (সম্পূরক) অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীকে আলগোরিদিম টাইমলাইনের সঙ্গে তাদের ভুল থেকে শিক্ষণীয় কিছু বার্তা দেয়। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা যখন ‘এক্সিট দ্য অ্যাপ’ বার্তাটি দেখবেন, তখন তা না করে অন্য কিছু করতে হবে।
এদিকে, মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম ডিএমগুলো (সরাসরি মেসেজ) ব্যবহারকারীকে নিজের সোশ্যাল গ্রাফকে সংযুক্ত করে দেখায়। সেসব আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুকে এক জায়গায় ব্যবহারকারীকে পরিচিত সবার সঙ্গে সংযুক্ত করে।
হোয়াটসঅ্যাপ এক্ষেত্রে আলাদা। হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহারকারীকে টেনে নেওয়ার জন্য এই ধরনের কোনও অ্যালগরিদমিক বিষয়বস্তু নেই, নেই স্ক্রল করার সময়সীমা। রয়েছে শুধু একগুচ্ছ চ্যাট এবং যেখানে কিছু ব্যবহারকারী একে অপরকে আপেক্ষিক বার্তা পাঠায়। ফেসবুক বিজ্ঞাপন এবং ব্যবসায়িক পরিষেবাগুলোকে ধাক্কা দিতে মেটাডেটা ও সামাজিক গ্রাফকে স্তূপ করতে মরিয়া। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ এক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা।
তাহলে হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তার সঙ্গে মেলানোর জন্য মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম ডিএমএস ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’-এর ক্ষেত্রে ফেসবুককে কী করতে হবে? এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে একটি সম্পূর্ণ এনক্রিপ্ট করা মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত। তবে এর অর্থ এই নয় যে সব মেসেঞ্জারই সম্পূর্ণ এনক্রিপ্ট করা। কিংবা সব এনক্রিপ্ট করা মেসেঞ্জার অ্যাপেই সিলভার বুলেট রয়েছে, যেটা দিয়ে সবকিছুকে গোপন এবং নিরাপদ রাখা যাবে।
অনেক নিরাপত্তা (সিকিউরিটি) পেশাদাররা এ বিষয়ে অনড় যে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সর্বব্যাপী হওয়া উচিত। ডিজিটাল ফাঁকফোঁকড় খুবই বিপজ্জনক। ‘মেসেঞ্জার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের’ গুরুত্বকে সব যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডিফল্ট করার সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এটি এই প্ল্যাটফর্মের প্রতি আস্থা বাড়াবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই।
যদিও এ বিষয়ে একমত হওয়া যায়- তবে মনে রাখতে হবে ফেসবুক মেসেঞ্জার সম্পূর্ণ আলাদা। এটি একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের অংশ, যা ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সময় তাদের বিপুল পরিমাণ পর্যবেক্ষণমূলক তথ্য সংগ্রহ করে; এটি বাচ্চারাও ব্যবহার করে এবং ব্যবহারকারীদের পরিচিত মানুষদের খুঁজতে করতে সহায়তা করে এবং তারপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। আপনি কেবল হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগন্যালে এটি করতে পারবেন না।
এক্ষেত্রে একটি সহজ কথা হল- যদি আপনার সন্তান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না যে, একজন অপরিচিত মানুষ আপনার সন্তানদের খুঁজে বের করুক, তাদের প্রোফাইল দেখুক এবং গোপনে তাদের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করুক।
ফেসবুক বলছে- এটা প্রতিরোধে তাদের প্রযুক্তি আছে। কিন্তু এমন মজা আর করবেন না, যথেষ্ঠ হয়েছে। আমি ফেসবুকের এমন আশ্বাসের প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছি না। কেননা, ইতোমধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার এনক্রিপশনের মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এসেছে।
ফেসবুক বলেছে- মেসেঞ্জার এনক্রিপশন এই প্ল্যাটফর্মে শিশু নির্যাতনকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা হ্রাস করবে না। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে কোম্পানিটি এতটা নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে না। এই বছরের শুরুর দিকে, ফেসবুকের গ্লোবাল পলিসি ম্যানেজমেন্টের প্রধানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে শিশু নির্যাতনের রিপোর্ট করা ঘটনাগুলো এনক্রিপশনসহ ‘অদৃশ্য’ বা মুছে ফেলা হবে কিনা। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আশা করি সংখ্যাগুলো কমে যাবে। যদি কন্টেন্ট শেয়ার করা হয় এবং সেই কন্টেন্টে যদি আমাদের প্রবেশাধিকার না থাকে, যদি তা এমন হয় যে আমরা দেখতে পাই না তাহলে সেটি আমরা রিপোর্ট করতে পারি না। ’
এরই অংশ হিসেবে, ফেসবুক এখন বলছে যে তারা ব্যবহারকারীদের কিছু অধিকার দেবে, যা দ্বারা ব্যবহারকারী তার চ্যাট তালিকায় কে পৌঁছাতে পারে, তার রিকোয়েস্ট ফোল্ডারে কে যাবে এবং কে তাকে মোটেই বার্তা দিতে পারবে না এসব নির্ধারণ করার সক্ষমতা দেবে, যাতে করে ব্যবহারকারীরা অবাঞ্ছিত মিথস্ক্রিয়া রোধ করতে পারে। কিন্তু এই বিষয়টি শিশুদের ক্ষেত্রে কতটা সুরক্ষিত হবে?
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১
এমএমজেড