ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

কনভেতে একসঙ্গে ৩০০ জনের মিটিং!

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
কনভেতে একসঙ্গে ৩০০ জনের মিটিং!

ঢাকা: বাসায় বসে অফিস! এ কেমন কথা। কীভাবে সম্ভব? দুই বছর আগেও এমন প্রশ্ন ছিল মানুষের মনে।

আবার অফিসে গিয়েই কাজ করতে হবে—এই রীতি বাধ্যতামূলক থাকলেও করোনা ভাইরাস পাল্টে দিয়েছে সেই চিত্র।

বাড়িতে বসে কাজ করা মানেই যে প্রশান্তি তা কিন্তু নয়। কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কার্যকর ও শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা। আপনার ব্যবস্থাপক যেমন অফিসে সব সময় আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, বাড়িতে বসে কাজের ক্ষেত্রেও তাই হওয়া উচিত। সেই ভাবনা থেকেই সিনেসিস আইটি নিয়ে আসতে যাচ্ছে ভার্চ্যুয়াল অফিস কোলাবোরেশন প্লাটফর্ম ‘কনভে। ’

আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হবে প্লাটফর্মটির।

সিনেসিস আইটির প্রধান নির্বাহী (সিইও) রূপায়ন চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে আমি যখন অস্ট্রেলিয়া চলে আসি, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ি টিমের সদস্যদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে গিয়ে। সেই সময় থেকে আমরা জুমের ব্যবহার শুরু করি। আমাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রধান শাহজালালও এক বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। পুরো টিম বাধ্য হয়ে রিমোট কোলাবোরেশন ব্যবহার করতে শুরু করি।

মহামারীর আগে থেকে সিনেসিস ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবহার শুরু হয়। তখন আমরা বুঝতে পারি এই রিমোট কোলাবোরেশন এখনও নতুন। এখানে অনেক কিছু দরকার। এই ইনোভেশন নিয়ে আমাদের মধ্যে চিন্তা শুরু হতেই চলে আসে মহামারী। জুম একেবারে মানুষের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল, সঙ্গে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করলো অন্য কোলাবোরেশন টুলগুলোও। আমরা দেখতে থাকলাম এই টুলগুলো এখনও অনেক কিছু দিচ্ছে না।

রূপায়ন চৌধুরী বলেন, ২০২০ এর শুরুতে আমাদের কিছু প্রেডিকশন ছিল সামনের দিকে রিমোট কোলাবোরেশন কি রকম হবে, কি ইনোভেশন আসবে। আমাদের খুব ভাল লাগে সেই প্রেডিকশন এখন সত্য হতে দেখে। কিছু সাধারণ সমস্যার অসাধারণ সমাধান নিয়ে আমাদের কনভের ইনোভেশন। প্রায় তিনটি মহাদেশের চারটি দেশ থেকে শুরু হয় এর উদ্ভাবন প্রক্রিয়া। চার দেশের মানুষ এই ইনোভেশনে কাজ করছে।

কনভে আসলে একটা ভার্চ্যুয়াল কোলাবোরেশন স্যুইট যেখানে ভিডিও কনফারেন্সিং, বিভিন্ন কোলাবোরেশন টুলস ও ভিজ্যুয়াল বোর্ডের সমন্বয়ে কর্মীদের মধ্যে কার্যকরী যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে তথ্য নিরাপত্তায় যা জুমের একটা বড় দুর্বলতা। কনভে তৈরি করা হয়েছে গ্লোবাল মার্কেটের জন্য। এখন অনেক দেশে ডাটা রেসিডেন্সি আইন আছে। এটার সফটওয়্যার আর্কিটেকচার দাঁড় করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। আমাদের জানা মতে, এখন শুধু মাত্র স্ল্যাক এই সার্ভিসটি দেয়।

কনভে তৈরির নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুরুতে বিপদে পড়ি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে। ২০/৩০ জনের বেশি মিটিং করতে পারি না। বাইরে থেকে প্রচুর শব্দ আসে—যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এরপর আমাদের গবেষণা শুরু হয়। যেহেতু নয়েজ ক্যানসেলেশন আমাদের উদ্দেশ্য না, আমরা অন্য কোম্পানির সলিউশনস দেখতে থাকি। বিশ্বের এক নম্বর কোম্পানির খোঁজ পাই। জুম, গুগল, সিসকো—সবাই এই কোম্পানির সলিউশনস ব্যবহার করে।

তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। সেলস বিভাগের একজন বলল, ‘আমরা এই সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। ’ তখন আমরা আবার গবেষণা শুরু করি। ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং এর ফিল্ডটা এত বড় আমরা হিমশিম খেতে থাকি। কয়দিন পরপর সেই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করি। একটা ইমেইল দিলে ১০ দিন পর উত্তর দেয়। আমার বিশ্বাস, যেহেতু শেষ গুগলকে দিয়েছে আমাদেরও দেবে। হাল ছাড়ি না। এক পর্যায়ে আমরা একটা টেকনিক আবিষ্কার করি, যা দিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত ভালো মিটিং করা যায়। কিন্তু জুমের যে এক্সপেরিয়েন্স সেটা পাওয়া যাচ্ছে না।

কয়দিন পরপর আবার সেই কোম্পানিকে ইমেইল করি। আবারও একই উত্তর। এদিকে আমাদের গবেষণা এগুতে থাকে। দিশা পাই না। একদিন না পেরে ভাবছি শেষ ইমেইল লিখি। দিলাম পাঁচ লাইনের একটা ইমেইল, নিজেদের স্বপ্নের কথা। একদিনের মাথায় উত্তর এল, একটা মিটিংয়ের শিডিউল দিয়ে।

মিটিংয়ে ছিলেন সিলিকন ভ্যালির সেই কোম্পানির সেলসের একজন। একটু পরে যোগ দিলেন আরেকজন।  বুঝতে পারলাম খুব সিনিয়র কেউ হবে। নামটা লিংকডইনে সার্চ দিলাম। এত বড় কোম্পানির সিওও আমার জুমে! খুবই বিনয়ী। আমার কাছে আমাদের সম্পর্কে জানতে চাইলো। আমাদের স্বপ্নের কথা বললাম। গল্প শুরু হয়ে গেল। অনেক ইনসাইট দিল। একদম শেষে বলল, ‘তোমাদের আইডিয়া বেশ ভালো। দেখো, আমাদের ডিমান্ড এত বেশি আমরা মিট করতে পারছি না। তোমাকে না বলছি না। তুমি শুরু করো। একটা ইউজার বেইজ চলে আসলে আমরা তোমার সঙ্গে পার্টনারশিপ করব। ’

মনটা খারাপ হয়ে গেল। পরদিন সকালে টিম নিয়ে বসলাম। বললাম, আমাদের নয়েজ ক্যানসেলেশন আমাদের তৈরি করতে হবে। আমাদের আর উপায় নেই।

বেশ কয়েক মাস পরে সিনেসিসের কয়েকটি টিমে আমাদের কনভে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়। আমাদের হোম অফিস শেষ। অফিসের লোকজন তাদের ডেস্ক থেকে বসে কনভেতে মিটিংগুলো করে। নয়েজ একেবারে শোনা যায় না। শেষদিন আমাদের হেড অব সেলস মুনাজিলের সঙ্গে মিটিং করছিলাম। উনি সিনেসিসে উনার ডেস্ক থেকে ফোন করেছিলেন। পাশে অনেক নয়েজ ছিল। কিন্তু কনভেতে মিটিং হচ্ছিল একদম নীরবতায়, কোনো নয়েজ নেই। তাকে একটু তাক লাগাবার জন্য বললাম, চলেন একই পরিবেশে জুমে মিটিং করি। সেখানে নয়েজে কথা বলা যাচ্ছে না। সে অবাক হয়ে বলল, ভাইয়া আমাকে এখনই কনভে বিক্রি করার জন্য দেন। এটা অনেক ভাল না শুধু, সিম্পলি অসাধারণ।

নিজেদের গবেষণায় আমাদের আরএনএন বেইজড নয়েজ সাপ্রেশন সিস্টেম। বানানোর ইচ্ছে ছিল না, এই ইনোভেশন আমাদের বাধ্য হয়ে আনতে হয়েছে।

কনভের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সিইও রূপায়ন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে অনায়াসে একসঙ্গে ৩০০ জনের মিটিং করা যাবে। আমাদের লক্ষ্য ১২০০ জনের মিটিং হবে কনভেতে। পরীক্ষামূলকভাবে সিনেসিসের কয়েকটি টিম কনভে ব্যবহার করছে। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে সীমিত কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য মার্কেটে আসবে এটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।