ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

নতুন তরঙ্গে মোবাইল ফোনে মিলবে আরও উন্নত সেবা 

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
নতুন তরঙ্গে মোবাইল ফোনে মিলবে আরও উন্নত সেবা 

ঢাকা: নিলামে অংশ নিয়ে দুই ব্যান্ডে ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে ৪ মোবাইল অপারেটর। ২৩শ’ ও ২৬শ’ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ মূলত ফোর-জি ও ফাইভ-জি সেবায় ব্যবহৃত হবে।

এ তরঙ্গ ব্যবহারের ফলে অপারেটরদের সেবার মান উন্নত হবে বলে রেগুলেটর ও অপারেটর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।  

বিটিআরসির আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিলামে টেলিটক, গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংক অংশ নেয়।  

প্রথম রাউন্ডে টেলিটক ২৩শ’ ব্যান্ডে ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকায় তিনটি ব্লকে ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে।

রবি ২৬শ’ ব্যান্ডে ৬টি ব্লকে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায় কিনেছে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ।

গ্রামীণফোন ২৬শ’ ব্যান্ডে ৬টি ব্লকে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায় কিনেছে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ।

বাংলালিংক ২৩শ’ ব্যান্ডে ৪টি ব্লকে ৪০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে ২ হাজার ২৪১ কোটি টাকায়।

২ ব্যান্ডে মোট ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে ৪ অপারেটর।

অপারেটর ভিত্তিক তরঙ্গের সর্বশেষ হিসাবে গ্রামীণফোনের মোট একসেস তরঙ্গ ৪৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্জ থেকে ১০৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্জে উন্নীত হবে। রবির মোট একসেস তরঙ্গ ৪৪ মেগাহার্জ থেকে ১০৪ মেগাহার্জে উন্নীত হবে। বাংলালিংকের মোট একসেস তরঙ্গ ৪০ মেগাহার্জ থেকে ৮০ মেগাহার্জে উন্নীত হবে। টেলিটকের মোট একসেস তরঙ্গ ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্জ থেকে ৫৫ দশমিক ২০ মেগাহার্জে উন্নীত হবে।

পর্যাপ্ত তরঙ্গের অভাবে গ্রাহকসেবা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানো যায়নি বলে মন্ত্রী এবং অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল।

গ্রাহক কর্তৃক মানসম্পন্ন ও নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে নিলামে উপস্থিত থাকা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এতদিন অপারেটরদের কাছে পর্যাপ্ত তরঙ্গের ঘাটতি ছিল, আজকের নিলামে বিক্রি হওয়া ১৯০ মেগাহার্জ তরঙ্গ যুক্ত হলে, টেলিযোগাযোগ খাতে আমূল পরিবর্তন হবে। নিলামকৃত তরঙ্গ ফোর-জি ও ফাইভ-জি উভয়ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।  

নিলামের মাধ্যমে আহরিত রাজস্ব জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেক অঞ্চলে দ্রুত গতির ফোর-জি সেবার ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি ফাইভ-জি ভবিষ্যতে যাতে কনজ্যুমার প্রোডাক্ট হয় সে লক্ষ্যেও কাজ করছি।  

আজকের ১২০ মেগাহার্জের মধ্যে অবিক্রিত যে ৩০ মেগাহার্জ তরঙ্গ রয়েছে, তাই কোনো অপারেটর কিনতে আগ্রহী হলে সেই সুযোগ দেওয়ার জন্য বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।  

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

গ্রাহক চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন তরঙ্গের মাধ্যমে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  

বিটিআরসি আশা করে সরকারের উল্লেখযোগ্য আয়ের পাশাপাশি বিদ্যমান মোবাইল ফোর-জি সেবা সম্প্রসারণ ও এর মানোন্নয়ন এবং বাংলাদেশে মোবাইল ফাইভ-জি সেবা বাস্তবায়নে আজকের বরাদ্দকৃত তরঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

যা বলছে ৪ অপারেটর

গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিটিআরসির নিলামে অনুমোদিত সীমার সর্বোচ্চ ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে গ্রামীণফোন।

গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান এক বিবৃতিতে বলেন, তরঙ্গ নিলামটি এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন বাংলাদেশের সম্ভাবনা এগিয়ে নিতে মানুষকে কানেক্টিভিটি দেওয়ার ২৫ বছর উদযাপন করছে গ্রামীণফোন।

বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের যাত্রায় শুরু থেকেই কাজ করছে গ্রামীণফোন। আবারও ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনার মাধ্যমে দেশের মানুষের ডিজিটাল সম্ভাবনা উন্মোচনে আমাদের অঙ্গীকারকেই পুনর্ব্যক্ত করছে। গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার আরও উন্নয়ন এবং সেবার মান উন্নয়ন সব সময়ই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। ভবিষ্যতে নেটওয়ার্কে আমাদের তরঙ্গের ব্যবহার গ্রাহকদের আরও উন্নত ফোর-জি সেবা দিতে সহায়ক হবে, যোগ করেন তিনি।

আজমান আরও বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল সম্ভাবনা বাস্তবায়নে গ্রাহক চাহিদা পূরণে উন্নত ফোর-জি প্রযুক্তির প্রাথমিক চালিকা শক্তি হিসেবে থাকবে। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে, আমরা সামনের মাসগুলোতে সরকার এবং সম্ভাব্য অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ট্রায়াল/টেস্ট করে বাংলাদেশের জন্য ফাইভ-জি ব্যবহারের সম্ভাব্য ক্ষেত্র চিহ্নিত করব। আমরা বিটিআরসির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রেগুলেটরি এনাবলার এবং সামগ্রিক ফাইভ-জি লাইসেন্সিং কাঠামোর বিষয়ে একটি আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছি, যা শুধুমাত্র ইন্ডাস্ট্রি কন্সাল্টেশনের পরেই চূড়ান্ত করা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।

গ্রাহকদের কাছে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিসেবা দিতে গ্রামীণফোন ধারাবাহিকভাবে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু থেকে সব সময় গ্রাহকদের অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক ক্ষমতায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এক প্রতিক্রিয়ায় রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, একটি অত্যন্ত সফল বেতার তরঙ্গ নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আমরা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানাই।

সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত এ নিলাম থেকে আমরা ২৬শ’ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি, এ তরঙ্গ আমাদের নেটওয়ার্কে সেবার মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে এবং আমাদের গ্রাহকদের আরও ভালো ডিজিটাল অভিজ্ঞতা পেতে সাহায্য করবে।

২৩শ’ মেগাহার্টজ ব্যান্ড থেকে নতুনভাবে ৪০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম গ্রহণের ফলে বাংলালিংকের স্পেকট্রাম ১০০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলালিংকের বর্তমান সর্বমোট স্পেকট্রা‌মের পরিমাণ ৮০ মেগাহার্টজ।

বাংলালিংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, স্পেকট্রাম বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি দ্রুততর ইন্টারনেট এবং উন্নতমানের ডিজিটাল সেবা দিয়ে  সহায়ক হবে। বাংলালিংক গত দুই বছর ধরে দেশের দ্রুততম মোবাইল নেটওয়ার্ক হিসেবে ওকলা-এর স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলালিংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এরিক অস বলেন, সাফল্যের সঙ্গে এ তরঙ্গ নিলাম পরিচালনার জন্য আমরা বিটিআরসিকে অভিনন্দন জানাই। এটি টেলিকম খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। আরও বেশি তরঙ্গ ব্যবহারের ফলে দেশের মানুষ এখন দ্রুততর ইন্টারনেট ও উন্নত ডিজিটাল সেবা পাবে। সব গ্রাহকের জন্য ফোর-জি, নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহকের জন্য ফাইভ-জি নয়, বাংলালিংকের এ লক্ষ্য অনুযায়ী আমরা আগামী ২-৩ বছরে নতুন তরঙ্গ প্রাথমিকভাবে ফোর-জির জন্য ব্যবহার করব।

বাংলালিংক সম্প্রতি এ বছরে ৩ হাজার নতুন টাওয়ার স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। গ্রাহকদের উন্নত মানের ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সেবা প্রদান এবং দেশব্যাপী ফোর-জি কাভারেজ সম্প্রসারণে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

নতুন ৩০ মেগাহার্জ তরঙ্গের মাধ্যমে টেলিটকের গ্রাহকদের আরও উন্নতমানের ফোর-জি সেবা দেওয়া যাবে এবং সেই সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি সেবা দেওয়ার পথও সুগম হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় টেলিটক।

এ নিলামের মাধ্যমে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ এবং ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি হয়েছে। ১০ মেগাহার্টজের প্রতিটি ব্লক ধরে এ নিলামে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ১০টি এবং ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ১২টি ব্লকের ওপর ডাক দেওয়ার সুযোগ ছিল। প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ছিল ১৫ বছরের জন্য ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে শেষ পর্যন্ত তা ৬.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
এমআইএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।