ঢাকা: মোবাইল ফোনে প্রতি কলড্রপের জন্য তিনটি পালস (৩০ সেকেন্ড) ফেরত পাবেন গ্রাহক। আগামী ১ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হবে।
কলড্রপ নিয়ে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিটিআরসি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
বিটিআরসি থেকে মোবাইল অপারেটরদের এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জবাবদিহিতা এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে সব মোবাইল অপারেটর অভিন্ন ইউএসএসডি কোর্ডের (*১২১*৭৬৫#) মাধ্যমে একজন গ্রাক পূর্ববর্তী দিন, সপ্তাহ, মাসিক অননেট কলড্রপের জানতে পারবেন।
বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানান, এতদিন একজন গ্রাহকের কী পরিমাণ কলড্রপ হয়েছে, তা জানতে পারতেন না। এখন নির্দিষ্ট কোর্ড ডায়াল করে তা জানা যাবে।
মোবাইল ফোনে কলড্রপ, কলড্রপ সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং গ্রাহককে টকটাইম ফেরত প্রদানে অপারেটরদের জন্য বিটিআরসির নতুন নির্দেশিকা চালু করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কলড্রপ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকা সর্ম্পকে বিশদ উপস্থাপনা দেন বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, অন-নেট কলড্রপের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ ও সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে দৈনিক ১ম ও ২য় কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতি কল ড্রপের জন্য তিসটি পালস (৩০ সেকেন্ড) এবং পরবর্তী ৩য় থেকে ৭ম কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কলড্রপের জন্য চারটি পালস (৪০ সেকেন্ড) গ্রাহককে টকটাইম ফেরত দেবে।
কলড্রপের ফলে ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইম পরবর্তী দিনের প্রথম কল থেকেই ব্যবহারযোগ্য হবে অর্থাৎ ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইমসমূহ সর্ম্পণূরূপে ব্যবহার হওয়ার পূর্বে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কল বাবদ কোনো টাকা কাটা যাবে না। কলড্রপের ফলে ফেরতকৃত টকটাইমের বিষয়ে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবহিত করতে হবে। কোনো অপারেটর চাইলে কলড্রপ সংঘঠিত হওয়ার পর ওই দিন থেকেই কল মিনিট ফেরত দিতে পারবে। কলড্রপের ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইম ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ দিন মেয়াদ প্রযোজ্য হবে।
নতুন কলড্রপ নির্দেশিকা একটি মাইলফলক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গ্রাহক অর্থ দিয়ে সেবা গ্রহণ করে, তাই অপারেটর কর্তৃক সেই সেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার চেয়ে অপারেটররা টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করলে কলড্রপের হার কমে যাবে। তিনি অপারেটরদের প্রতি তাদের গ্রাহক বৃদ্ধির সাথে সাথে সেবার মান বাড়ানোর আহ্বান জানান।
কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে বেশকিছু পদেক্ষপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ২০২১ এবং ২০২২ সালে তরঙ্গ নিলাম ও টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইন চালুর পাশাপাশি মোবাইল অপারেটর এবং এনটিটিএন অপারেটদের মধ্যে সাথে দূরত্ব কমানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিটিএস সাইটের সক্ষমতার তুলনায় কোনো কোনো এলাকায় গ্রাহক বেশি হওয়ায় কলড্রপ বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে সেসব জায়গায় সক্ষমতা বাড়াতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
আপাতত অন-নেট (জিপি-জিপি, রবি-রবি,) এর কলড্রপ নির্দেশিকা প্রণয়ন হলেও বিটিআরসিতে স্থাপিত টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম চালু হলে অফ-নেট ( জিপি-রবি, রবি-বাংলালিংক) কলড্রপের ক্ষেত্রেও নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
মোবাইল ফোনে কলড্রপ কখনো কাম্য নয় মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য অপারেটরদেরকে নজর দিতে হবে। ভয়েস কলের উন্নতির পাশাপাশি ডাটা স্পিডের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, মোবাইল অপারটেররা ব্যবসায়ে যতটা আগ্রহী, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে ততটা আগ্রহী নয়। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী গ্রাহক কলড্রপের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পাবে এবং গ্রাহকের কলড্রপ সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্যও জানতে পারবে।
কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ আয়ের মানুষ সকলেই মোবাইল গ্রাহক। প্রতিদিন গ্রাহক যে হারে বাড়ছে সে তুলনায় অবকাঠামো বাড়ছে না। বিটিআরসি গ্রাহককে একটি মানসম্পন্ন নেটওয়ার্ক প্রদানে বদ্ধপরিকর এবং দ্রুত কলড্রপ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে।
কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবীর বলেন, কোয়ালিটি অব সার্ভিসের নিশ্চিতে কলড্রপ এবং ইন্টারনেট স্পিড অন্যতম। গ্রাহকের তুলনায় বিটিএস এবং তরঙ্গ কম থাকা, লোডশেডিং, রেডিও ইকুইপমেন্ট ও অপটিক্যাল ফাইবারে বিঘ্নতা, নেটওয়ার্ক বুস্টার ও জ্যামারসহ আরো নানাবিধ কারণে মোবাইল ফোনে কলড্রপ হয়ে থাকে। ২০২২ সালে অপারেটরদের অনুকুলে বরাদ্ধ হওয়া তরঙ্গ পুরোপুরি চালু হলে কলড্রপের হার কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
বিটিআরসির সচিব মো. নূরুল হাফিজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কমিশনার (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসাইন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডুসহ বিটিআরসি এবং মোবাইল অপারেটরদের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২/আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এমজেএফ