ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পুলিশ নির্যাতন করলেও প্রতিরোধ করেননি নিকোলাস (ভিডিও)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
পুলিশ নির্যাতন করলেও প্রতিরোধ করেননি নিকোলাস (ভিডিও)

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য টেনেসির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তসীমায় শেলবি কাউন্টির বৃহৎ শহর মেমফিসে টায়ার নিকোলাস নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের নিহতের ঘটনা এখন দেশটির খবরের পাতার প্রধান শিরোনাম। বর্বরতার ওই ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, যাতে দেখা যায় নিকোলাস নির্যাতিত হলেও পুলিশের বিরুদ্ধে কিছু করেননি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেটিতে ওই ভিডিও থেকে প্রাপ্ত কিছু তথ্য উল্লেখ করা হয়। খবরে এও বলা হয়, নিকোলাসকে পুলিশ যখন মারছিল, তিনি তাদের প্রতিরোধ করেননি। কার্যত, তিনি প্রতিরোধ করতে পারেননি।

সে পাঁচ পুলিশ সদস্য তাকে নির্যাতন করছিলে তাদের শরীরে স্থাপিত ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, নির্যাতিত হওয়ার সময় নিকোলাস মা মা করে চিৎকার করছিলেন। কিন্তু আইন রক্ষাকারী সদস্যরা তাকে লাথি ও ঘুষি মারছিলেন।

ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকায় ওই পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘সেকেন্ড ডিগ্রি’ হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ভয়াবহ ভিডিও ক্লিপটি দেখে আমি হৃদয়ের গভীরে ব্যথা অনুভব করছি।

নিকোলাসকে নির্যাতনের মোট এক ঘণ্টার ভিডিও থেকে চারটি ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে। গত শুক্রবারের ওই ঘটনার একটি ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তারা নিকোলাসকে তার গাড়ি থেকে টেনে বের করে আনছেন। একজন তাকে দ্রুত নির্দেশ মানতে চিৎকার করছিলেন।

গাড়ি থেকে বের হয়ে নিকোলাস পুলিশ সদস্যদের বলেন, আমি তো কিছু করিনি। এ সময় অপর এক পুলিশ তাকে কথা না বলে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলেন। অন্যান্যদের মধ্যে কেউ এ সময় নিকোলাসকে গালি দিচ্ছিলেন।

অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা এ সময় চিৎকার করে ওঠেন। নিকোলাসকে গালি দিয়ে তিনি বলেন, তোমার হাত না ভেঙে ফেলার আগে তুমি সেগুলো তোমার পিঠের দিকে নিয়ে যাওয়। এ সময় নিকোলাস বলেন, আপনার বাড়াবাড়ি করছেন। আমি আমার বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম শুধু।

এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরেক কর্মকর্তা তাকে বৈদ্যুতিক শক দেন। আঘাত পেয়েও নিকোলাম উঠে দাঁড়ান, ও দৌড় দিতে সক্ষম হন।

ইউটিলিটি পোলে সংযুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তারা নিকোলাসকে মারধর করছেন। দুজন তাকে মাটিতে চেপে ধরেছিলেন। অন্যরা তাকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। পরে একজন  তার মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে নিকোলাসকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।

পরে কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তারা নিকোলাসকে টেনে নিয়ে একটি স্কোয়াড গাড়ির সামনে বসিয়ে দেন। সে সময় একটি অ্যাম্বুলেন্সও ডেকেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সেটি আসতে ২০ মিনিটের বেশি সময় নেয়।

নিকোলাসকে নির্যাতনকারী পাঁচ পুলিশ সদস্যঘটনাটি নিকোলাসের পরিবারের আইনজীবীরা ১৯৯১ সালের একটি ঘটার সঙ্গে মেলাচ্ছেন। ওই বছরটিতে লস অ্যাঞ্জেলেসে এক গাড়ি চালককে নির্যাতন করেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। রডনি কিংকে নামে ওই গাড়ি চালক এ নির্যাতনে নিহত হয়েছিলেন।

টায়ার নিকোলাসকে নির্যাতনের ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর মেমফিসে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা শহরের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে। তাদের হাতে নিকোলাস হত্যার বিচার দাবি ও পুলিশি সন্ত্রাস বন্ধের দাবিযুক্ত ব্যানার ছিল।

গত ৭ জানুয়ারি বেপরোয়া গাড়ি চালানোর সন্দেহে নিকোলাসকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু তাদের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। নির্যাতনের শিকার নিকোলাসের মৃত্যু হয় ১০ জানুয়ারি।

মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া আফ্রিকানের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মেমফিস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা ট্যাডারিউস বিন, ডেমেট্রিওস হ্যালিই, ডেসমন্ড মিলস জুনিয়ার, এমিট মার্টিন ও জাস্টিন স্মিথকে। তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সবাই কারাগারে বন্দি। তাদের বিরুদ্ধে নিকোলাসকে গুরুতর আক্রমণ, অপহরণ, অসদাচরণ ও নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের পর নিকোলাসের শরীরে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মেমফিস পুলিশ প্রধান সেরলিন ডেভিস। নিজের ডিপার্টমেন্টের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পেশাদার ব্যর্থতার অভিযোগ আনেন তিনি। সেরলিন ডেভিস নিজেও কৃষ্ণাঙ্গ এবং মেমফিস পুলিশে প্রথম নারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ঘটনাটিকে তিনি কেবল পেশাদার ব্যর্থতা নয় বরং একজন স্বাধীন ব্যক্তির প্রতি মৌলিক মানবতার ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেন।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।