একের পর এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে জর্জরিত তুরস্কে উদ্ধার তৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্রের সহয়তা ঘোষণার পর এবার রাশিয়াও একই প্রস্তাব দিয়েছে। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুরস্ক ও সিরিয়া সরকার সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এরদোগানকে দেওয়া বার্তায় পুতিন বলেন, আপনার দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষের হতাহত ও বড় আকারের ধ্বংসযজ্ঞের জন্য আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। আমরা যেকোনো সহায়তায় প্রস্তুত।
একই বার্তা পুতিন দিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকেও। তিনি বলেন, আপনার দেশে যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, আমরা তাদের দুঃখ ও বেদনা ভাগ করে নিতে চাই। আমার দেশ আপনাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ও ভ্লাদিমির পুতিন ঘনিষ্ঠ মিত্র। সিরিয়ায় রুশ সেনা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া। তাদের মাধ্যমে দেশটিতে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসাদ সরকার। তুরস্ক ন্যাটো সদস্য হলেও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গেও দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে পুতিনের।
এদিকে, ভুমিকম্পের ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও সংশ্লিষ্ট কর্ম তৎপরতায় করিডোর স্থাপন করেছে তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী। তারা বিমান সহায়তাও দেবে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকরকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রণালয় বলেছে, চিকিৎসা ও উদ্ধারকারী দল ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় পৌঁছাতে বিমান করিডোর স্থাপন করা হয়েছে। আমরা আমাদের বিমানগুলোকে মেডিকেল টিম, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল এবং তাদের যানবাহন ভূমিকম্প অঞ্চলে পাঠানোর জন্য সচল করেছি।
সোমবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও কয়েকটি কম্পন টের পাওয়া যায়। তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, সাইপ্রাস ও ইসরায়েলের কোটি মানুষ ভূমিকম্পটি টের পেয়েছেন। এর কেন্দ্রস্থল তুরস্কের শহর গাজিয়ান্তেপে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৯৭৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু। এ অবস্থায় দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত ১০ শহর ও প্রদেশে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিরিয়ায় মারা গেছেন ৪৬৭ জন। দেশটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, কাহরামানমারাস, হাতায়, গাজিয়ানটেপ, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালত্যা, শানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির, কিলিসের স্কুলগুলোকে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থগিত করা হয়েছে হাতায় প্রদেশের বিমানবন্দরে ফ্লাইটগুলো। মারাস ও আন্তেপের বিমানবন্দরে বেসামরিক ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানা ভূমিকম্পের কারণে ১ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির ধারণা ভূমিকম্পের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ভূমিকম্পের ঘটনায় টুইট করে ভুক্তভোগীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে অনুমান করা যাচ্ছে না। আশা করছি দ্রুতসম্ভব আমরা কম ক্ষয়ক্ষতিসহ দুর্যোগটি একসঙ্গে কাটিয়ে উঠবো। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য ইউনিট সতর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
এমজে/এমজে