ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

এক ইনস্টাগ্রাম স্টোরির জন্য ১০ বছরের জেল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
এক ইনস্টাগ্রাম স্টোরির জন্য ১০ বছরের জেল ওলেসিয়া ক্রিভটসওভা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওলেসিয়া ক্রিভটসওভা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসে যাচ্ছেন না। কারণ ২০ বছর বয়সী ওলেসিয়া গৃহবন্দি রয়েছেন।

তার পায়ে ইলেকট্রনিক ট্যাগ লাগানো আছে। পুলিশ তার প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করতে পারে।  

কোন অপরাধের অভিযোগ তার ওপর আনা হলো? ওলেসিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী নানা কিছু পোস্ট করেছিলেন। এর মধ্যে একটি গত অক্টোবরের বিস্ফোরণে রাশিয়া-ক্রিমিয়া সংযোগকারী সেতু নিয়ে।

বিবিসিকে ওলেসিয়া বলেন, আমি ইনস্টাগ্রামে একটি স্টোরি পোস্ট করেছিলাম। যা ঘটেছিল, তাতে ইউক্রেনীয়রা কীভাবে খুশি হয়েছে, তা ওই স্টোরিতে ছিল।

তিনি তার এক বন্ধুর পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যা ছিল যুদ্ধসংক্রান্ত।

পুরোনো ঘটনার কথা স্মরণ করে ওলেসিয়া বলেন, আমি মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। সামনের দরজা খোলার শব্দ পেলাম। অনেক পুলিশ সদস্য ভেতরে চলে এলেন। তারা আমার ফোন কেড়ে নিয়ে চিৎকার করে মেঝেতে শুয়ে পড়তে বললেন।

জঙ্গিবাদকে সমর্থনের পাশাপাশি রুশ সেনাবাহিনীর মানহানি করার অভিযোগ ওলেসিয়ার ওপর আনা হয়ে। সে এখন ১০ বছরের জেলের মুখোমুখি।  
 
তিনি বলেন, আমি ভাবতে পারিনি, ইন্টারনেটে কিছু একটি পোস্ট করার জন্য কারো ১০ বছরের জেল হতে পারে। রাশিয়ায় পাগলামি ধরনের রায়ের খবর শুনেছি। কিন্তু কখনো গুরুত্ব দিইনি।

আরখেনজেলস্কের নর্দার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ওলেসিয়ার নাম এখন রাশিয়ার দাপ্তরিক তালিকায় থাকা জঙ্গি ও চরমপন্থিদের সঙ্গে উঠে গেছে।  

পুরোনো সময়ের কথা স্মরণ করে ওলেসিয়া বলেন, যখন বুঝলাম, আমার নাম স্কুলে বন্দুকধারী ও আইএস গোষ্ঠীর সঙ্গে উঠে গেছে, ভাবলাম এটি পাগলামি।  
 
গৃহবন্দির আইন অনুযায়ী তিনি কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারেন না, অনলাইনে কিছু করতে পারেন না। তার ডান পায়ে পুতিনবিরোধী একটি ট্যাটু রয়েছে। এর ক্যাপশনে লেখা, বড় ভাই তোমার ওপর নজর রাখছেন।  

ধারণা করা হয়, ওলেসিয়ার ক্ষেত্রে কোনো বড় ভাই নজর রাখছিলেন না, সহপাঠীরাই তার ওপর নজর রাখছিলেন।  

তিনি বলেন, এক বন্ধু আমাকে নিয়ে চ্যাটে একটি পোস্ট দেখায়। এই পোস্টে আমাকে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান-বিরোধী দেখানো হয়েছে। এই চ্যাটের বেশিরভাগ সদস্যই ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। কর্তৃপক্ষকে আমার বিষয়টি জানাবে কি না, তা নিয়ে তারা আলোচনা করছিল।

বিবিসি এই গ্রুপ চ্যাটটি দেখেছে। একটি কমেন্টে ওলেসিয়ার সম্পর্কে লেখা হয়, সে পরাজিত ও চরমপন্থিদের মতো উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়েছে। এটি যুদ্ধের বাইরের স্থান। অঙ্কুরেই এটি বিনষ্ট করে দেওয়া উচিত। চলো প্রথমে তাকে অসম্মান করি। তাতেও যদি কাজ না হয়, পরে নিরাপত্তাবাহিনী বুঝবে। প্রকাশ্য নিন্দা জানানো দেশপ্রেমিকের কর্তব্য।

পরে আদালতে যখন সাক্ষীদের নাম ডাকা হয়, ওলেসিয়া তাদের চিনতে পারেন। তারা ওই চ্যাটগ্রুপেরই ছিলেন।  

ইউক্রেনে ক্রেমলিনের বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর এক বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। হামলার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকদের খারাপ ও বিশ্বাসঘাতকদের থেকে আলাদা করার নির্দেশ দেন।  

এরপর যুদ্ধের সমালোচকদের বিরুদ্ধে রাশিয়ায় সোভিয়েত রীতিতে প্রকাশ্যে নিন্দা চলে। শিক্ষক ও সহকর্মীদের কারা যুদ্ধের সমালোচনা করছেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হয়।

হামলার প্রকাশ্য সমালোচনা এবং এর সঙ্গে অন্যের সমালোচনা পোস্ট করা ভয়াবহ। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ আশা করে, ইউক্রেনে আক্রমণের সামগ্রিক ও অবিচ্ছিন্ন সমর্থন পাবে। কেউ সমর্থন না করলে চুপ থাকতে বলা হয়। কেউ চুপ না থাকলে, ভিন্নমতের জন্য দমনমূলক আইনের দড়ি রয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক কার্যক্রম নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং সেনাবাহিনীর মানহানির অপরাধবিষয়ক আইনও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।  

আরখেনজেলস্ক শহরে এটি বড় ছবি রয়েছে, যাতে দেখা যায়, ইউক্রেনে নিহত রাশিয়ান এক সৈন্য নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। নয়তলা একটি ভবনের দেয়ালে ছবিটি রয়েছে। এর সঙ্গে লেখা রয়েছে, যোদ্ধা হওয়া মানে আজীবন বেঁচে থাকা।  

দেশপ্রেমের এই বার্তা প্ররোচনামূলক। আরখেনজেলস্কের পথে সেই রাশিয়ানদের জন্য খুব সামান্য অনুভূতিই পাওয়া গেছে, যারা যুদ্ধবিরোধী মন্তব্যের কারণে বিচারের মুখোমুখি।  

কনস্টান্টিন নামে এক বাসিন্দা বলেন, যারা আমাদে সেনাবাহিনীর মানহানি করে এবং মিথ্যা ছড়ায়, তাদের মাথায় সমস্যা আছে। তাদের কামানের সামনে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে দেওয়া উচিত।  

একাটেরিনা নামে এক বাসিন্দা বলেন, বিশেষ অভিযানের সমালোচনার বিরুদ্ধে আমার নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে।  

অনলাইনে কোনো কিছু পোস্ট করার জন্য এত দীর্ঘ সময়ের জন্য জেল বেশি কঠোরতা নয় কি না, তার কাছে জানতে চাওয়া হয়।  

একাটেরিনা বলেন, লোকজনের উচিত তাদের মস্তিস্ক ব্যবহার করা। যদি তারা এই দেশে বাস করে, যদি তারা দেশের সব সুবিধা ভোগ করে, যদি তারা দেশপ্রেমিক হয়, তবে তাদের আইন মেনে চলতে হবে।  

ওলেসিয়া তার বাড়ির বাইরে যেতে পারেন শুধুমাত্র আদালতে শুনানির জন্য। তার আইনজীবি একজন বিচারককে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চাইছেন, যাতে তার চলাচলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।  

ওলেসিয়ার টি-শার্টের পুলিশ ভ্যানের একটি ছবি আঁকা যাতে লেখা স্কুলবাস। কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে কীভাবে রাশিয়ান তরুণ-তরুণীরা শাস্তি পাচ্ছেন, তারই যেন একটি ব্যাখ্যা।   

আদালত ওলেসিয়ার গৃহবন্দিত্বের আদেশ বহাল রেখেছেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও মুক্তির জন্য তর্ক করার মতো মেজাজ রাষ্ট্রের নেই। তারা সবাইকে জেলে দিতে পারেন। একটা সময়ে জেলের জায়গা ফুরিয়ে যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।