চলতি বছর পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে কঙ্গো ভাইরাসজনিত মোট ১৬টি কেস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসেই।
পাকিস্তানের সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশে ক্রিমিয়ান-কঙ্গো হেমোরেজিক ফিভার (সিসিএইচএফ) ভাইরাস বা কঙ্গো জ্বরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় জনগণের স্বাস্থ্য সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে কঙ্গো জ্বরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। গত শুক্রবার (৫ মে) দুজনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল সিন্ধু প্রদেশে আটাশ বছর বয়সী এক কসাই স্থানীয় হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থায় উন্নতি হচ্ছিল না। দুদিন পর তাকে শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। প্রথমে তাকে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
গত বৃহস্পতিবার তার ফের পরীক্ষা করা হয়। পরে ওই ব্যক্তির শরীরে সিসিএইচএফ’র উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। পরে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার তার মৃত্যু হয়।
গতকাল রোববার (৭ মে) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় কঙ্গো জ্বরে ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর মৃত্যু হয়। বেলুচিস্তানের সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. লাল জান কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ওই তরুণীকে কোয়েটার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে বেলুচিস্তানে সিসিএইচএফ ভাইরাসের মোট ১৬টি কেস পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১১টি কেস পাওয়া গেছে চলতি মাসে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। মানুষকে চিকিৎসা ও সচেতনতা প্রদানের পাশাপাশি আমরা সন্দেহজনক কেসগুলো পরীক্ষা করছি। এ রোগটি পশু থেকে ছড়ায়, তাই আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগকে বলেছি, যেসব প্রাণী অন্যান্য এলাকা থেকে আসছে, সেগুলোকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে।
লাল জান আরও বলেন, জানুয়ারি থেকে সরকারি হাসপাতালে কমপক্ষে চারজন রোগী কঙ্গো জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করেছি; তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কঙ্গো জ্বর মূলত টিক-বাইট ভাইরাস (নাইরোভাইরাস) দ্বারা সৃষ্ট। এ ভাইরাসের শিকার হলে আক্রান্তরা গুরুতর ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বরের প্রাদুর্ভাবে ভোগে। এ রোগে মৃত্যুর হার ১০ থেকে ৪০ শতাংশ।
কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, পেশী ব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘাড়ে ব্যথা ও শক্ত হওয়া, পিঠে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা এবং ফটোফোবিয়া (আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা) দেখা দেয়। তা ছাড়া বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, গলা ব্যথা ও মেজাজ তীক্ষ্ণ হয়ে যায়।
ডব্লিউএইচও বলছে, আফ্রিকা, বলকান, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশে ভাইরাসটির উৎপত্তি। বিস্তৃত বন্য ও গৃহপালিত প্রাণী, যেমন- গবাদি পশু, ভেড়া, ছাগল এবং অন্যান্য গবাদি পশু থেকে ছড়ায়। টিক বাইটের মাধ্যমে বা জবাই করার সময় কিংবা তার পরপরই সংক্রমিত প্রাণীর রক্ত বা টিস্যুর সংস্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ বা প্রাণীর জন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
এমজে