আগামী রোববার রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভারতের নতুন পার্লামেন্ট (সংসদ) ভবনের উদ্বোধন করবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তার বিরোধীরা এ অনুষ্ঠান বর্জনের ডাক দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় আল জাজিরা। খবরে বলা হয়েছে, মোদির এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না তার বিরোধীরা। কমপক্ষে ১৯ টি বিরোধী দল নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন বয়কট করতে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেওয়া দলগুলো হলো- কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, এমডিএমকে, ভিসিকে, শিবসেনা (উদ্ধব), সমাজবাদী পার্টি, সিপিআই, সিপিএম, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, রাষ্ট্রীয় লোকদল, জনতা দল (ইউ), এনসিপি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, কেরালা কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও আরএসপি।
গতকাল বুধবার (২৪ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে, ভারতের জাতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলো এ ঘোষণা দেয়। তাদের ভাষ্য, মোদি ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা।
অর্থাৎ, দেশের প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুকে পাশ কাটিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা উচিৎ। বিষয়টি সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছেন বিরোধী দলগুলোর নেতারা।
বিবৃতিতে তারা আরও বলছেন, এটি একজন প্রেসিডেন্টকে অপমান করা; তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আক্রমণ যা উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দাবি করে। যখন সংসদ থেকে গণতন্ত্রের আত্মা চুষে নেওয়া হয়েছে, তখন নতুন এ ভবনের কোনো মূল্য আমরা খুঁজে পাই না। আমরা উদ্বোধন বয়কট করতে আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি।
কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে আল জাজিরাকে বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির সংসদ উদ্বোধন করার ‘নৈতিক অধিকার’ নেই। কারণ তিনি প্রতিদিন গণতন্ত্রকে হত্যা করছেন।
তিনি আরও বলেন, মোদি নিজের জন্য সবকিছুই করছেন। এর আগে যখন তিনি নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোবিন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এখন ভবনটি উদ্বোধনের সময় প্রেসিডেন্ট মুর্মুকে সাইডলাইন করা হয়েছে।
তিনি (মুর্মু) সংবিধানের রক্ষক। তিনি দেশের প্রথম উপজাতীয় নারী প্রেসিডেন্ট এবং তাকে উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ না করা সত্যিই লজ্জাজনক। এটি বাজে ধরনের অপমান যা একজন উপজাতি নারীকে করা হচ্ছে। ইতিহাস এটি মনে রাখবে।
মোদির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ডি রাজা টুইটারে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদটি রাজ্যের একটি নির্বাহী অঙ্গ; সংসদ হলো আইনসভার অঙ্গ। মোদিজির ক্ষেত্রে নিজের চরিত্র এবং ক্যামেরার প্রতি ভালোবাসা নিয়মকেও ছাড়িয়ে যায়।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) বলেছে, লোকসভার স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের উচিৎ নতুন ভবন উদ্বোধন করা। মোদির নয়। দলটির মুখপাত্র সৈয়দ আসিম ওয়াকার বলেছেন, জাতির আরও বড় প্রয়োজন রয়েছে। গত ১০ বছরে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। দরিদ্রদের জন্য আমাদের সম্পদ দরকার। বিল্ডিংয়ের কারণে পেট ভরে না। শস্য দরকার হয়।
এদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালার অভিযোগ করেছেন, সাধারণ ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব দিতে নতুন সংসদ উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিরোধীরা এটি নিয়ে রাজনীতি করছে।
আগামী রোববার (২৮ মে) উদ্বোধন করা হবে ভারতের নতুন সংসদ ভবন। রাহুল গান্ধির কংগ্রেসকে ‘কপটতার মা’ অভিহিত করে দলটি এ আয়োজন ঠেকিয়ে দিতে নানা অজুহাত তৈরির চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন শেহজাদ। তিনি বলেন, আজ কংগ্রেস নেতারা নতুন ভবনকে ‘ভ্যানিটি’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন; অথচ তারাই অতীতে একটি নতুন ভবনের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুকে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে আমন্ত্রণ না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরের সিডো কানহু মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ঈশ্বর মারান্ডি। তিনি মুর্মুর শপথ নেওয়ার দিনটিকে স্মরণ করে বলেন, আমাদের সম্প্রদায়েরই একজন সরকারে শীর্ষ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের কারও অজানা নয়। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, তিনি কোথাও নেই। তাকে আমন্ত্রণ না করা গোটা সম্প্রদায়কে নাড়া দেয়।
ভারতের সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে নতুন দিল্লিতে নির্মিত নতুন সংসদ ভবনটি বর্তমান সক্রিয় সংসদ ভবনের বিপরীতে অবস্থিত। নতুন ভবনটি চালু হলে এতে বসতে পারবেন ৮৮৮ সদস্য (বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫৪৩) আর রাজ্যসভায় ৩০০ (বর্তমানে ২৫০) জন। প্রকল্পটি সরকারের পরিবেশগত নীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়। এটি নতুন দিল্লির রাইসিনা হিল এলাকার ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলোর ক্ষতির কারণ হতে পারে বলেও অনেকে মত দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
এমজে