ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নাইজার আধুনিক স্নায়ুযুদ্ধের নতুন মঞ্চ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
নাইজার আধুনিক স্নায়ুযুদ্ধের নতুন মঞ্চ 

একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে  পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের সামরিক বাহিনী সে দেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।  এর ফলে পশ্চিমাদের সঙ্গে একটি নতুন সংঘর্ষের মঞ্চ তৈরি করেছেন তারা।

 

পশ্চিম আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশের মতো নাইজারও ফ্রান্সের  প্রাক্তন উপনিবেশ যেখানে তাদের এখনও আর্থিক এবং সামরিক প্রভাব ধরে রেখেছে এবং নাইজার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ জারি রেখেছে। যার কারণে, এই সেনা অভ্যুত্থান জনপ্রিয় হয়েছে, আর কিছু বিক্ষোভকারী  ফ্রান্সকে হটিয়ে  রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের দাবি জানিয়ে আসছে।

আজকের নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে  আফ্রিকান দেশগুলি এখন পশ্চিমা প্রভাব দূর করতে বিকল্প শক্তিগুলোর জন্য পলিটিক্যাল স্প্যাস বাড়িয়েছে। নাইজার, একটি স্থলবেষ্টিত, দরিদ্র এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ, যদিও খনিজ সমৃদ্ধ একটি দেশ, যা এখন  নতুন এক সম্মুখ সমরে পরিণত হতে চলেছে৷

আমেরিকার কেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থায় আফ্রিকার দেশগুলো পশ্চিমের কাছে সমর্পিত হয়ে পড়েছিল। ক্ষুধা দারিদ্র্যে মরিয়া  অনেক আফ্রিকান দেশ বিভিন্ন ধরনের সহায়তার জন্য তাদের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শাসক এবং আমেরিকার উপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছিল । বিশেষভাবে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'র সময়। যখন ইসলামি জিহাদিরা তাদের জনগণের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল। ওই সময়  পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ফরাসি এবং মার্কিন বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।  এই সহায়তা, তা আর্থিক বা সামরিকই যাই হোক না কেন; আফ্রিকান দেশগুলো নব্য উপনিবেশবাদকে মেনে নিয়েই তার মূল্য চুকিয়েছে।

সেই পৃথিবী বদলে গেছে। 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'র প্রেক্ষাপট শেষ হয়ে গেছে, এর পরিবর্তে আমরা এখন একটি ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে বাস করছি যেখানে শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্যমান - একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা বিপরিতে চীন এবং রাশিয়া ৷ এই পরিবেশের অর্থ হল যে আফ্রিকান দেশগুলির কাছে এখন সাহায্যের আবেদনে বেছে নেওয়ার জন্য বিকল্প রয়েছে। যা তাদের প্রভুভক্তির পরিবর্তে  নিজস্ব রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকান দেশগুলি পশ্চিমা সহায়তার পরিবর্তে নিরাপত্তার জন্য ওয়াগনার গ্রুপকে ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে, অন্যদিকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের কারণে আফ্রিকান দেশগুলি আর আইএমএফের মতো সংস্থাগুলির দ্বারা শোষণ শিকার হবে না।

এই পরিস্থিতিতে, নাইজারের মতো অস্থিতিশীল দেশ গুলোতে সামরিক বাহিনী সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ক্রীড়ানক হয়ে উঠেছে,  তাদের জন্য ক্ষমতা দখল করার এবং পশ্চিমা প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।  কারণ বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায়  আমেরিকা আর সরাসরি একতরফা সামরিক হস্তক্ষেপ পরিচালনা করতে পারবে না।  যা পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে সরকার এবং সামরিক বাহিনী গুলোকে জনগনের  ফ্রান্স বিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রাক্তন ঔপনিবেশিক প্রভুদের তাড়িয়ে দেওয়ার পথ তৈরিতে সাহায্য করছে। এই প্রক্রিয়ায় মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মালি ও বুরকিনা ফাসো থেকে ফরাসি সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এর পরেই সম্ভবত রয়েছে নাইজার । তবে, এক্ষেত্রে ফরাসি-সমর্থিত গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি রয়ে গেছে।  

নাইজারে অভ্যুত্থান শেষ পর্যন্ত সফল হলে, নতুন কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গঠনে আগ্রহী, যারা নাইজারের নিরাপত্তার জন্য একটি সরল এবং নতুন  'গ্যারান্টার' হয়ে উঠবে। চীন সাধারণত আফ্রিকান দেশগুলিকে অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদান করে, সেইসাথে আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপহীন এবং  সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন প্রদান করে থাকে। চীন  সামরিক সহায়তা প্রদানে  কম আগ্রহী এবং যেখানে রাশিয়ার বিশেষ ভাবে পারদর্শী।

নাইজারের অবশ্যই কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। যদিও এটিকে মরুভূমির মাঝখানে একটি ল্যান্ডলকড দেশ;  এর রয়েছে  ইউরেনিয়াম, কয়লা, স্বর্ণ, লোহা আকরিক, টিন, ফসফেটস, পেট্রোলিয়াম, মলিবডেনাম, লবণ এবং জিপসামসহ প্রাকৃতিক সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য  মজুদ।

ইউরেনিয়াম উতপাদন এবং সরবরাহে নাইজার বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ , যা পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য  গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই ফ্রান্স বিনা লড়াইয়ে নাইজারকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক নয় এবং ম্নে হচ্ছে একটি সম্ভাব্য প্রক্সি সংঘর্ষ তারা জারি রাখতে পারে। যদি নাইজারে পশ্চিমা-সমর্থিত স্বার্থ পরাজিত হয়, তাহলে খনিজ সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কৌশলগত ক্ষতি হবে বিশাল, এবং একটি প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে যে চীন এই শুন্যস্থান পূরণ করবে।  

এই সব কারণই নাইজারকে বিশ্বের সম্ভাব্য নতুন সম্মুখ সমরে পরিণত করতে চলেছে। যদিও আফ্রিকায় অভ্যুত্থান এবং গৃহযুদ্ধের কথা পশ্চিমাদের কাছে সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু এখন একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে এই অভ্যুত্থান ঘটছে যা ব্যাপকভাবে একটি নতুন শীতল যুদ্ধ আকারে বিশ্বের সামনে প্রকাশিত হবে। আফ্রিকার প্রতি পশ্চিমাদের   ঔপনিবেশিক  মনোভাব, অঞ্চলটির নিজস্ব স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির পথে অনেক ক্ষতি করছে।  তবে অন্যান্য খেলোয়াড়দের জন্য দরজা খুলে যাচ্ছে, যা এক নতুন বাস্তবতার সামনে আমাদের দাঁড় করিয়েছে।

আরটিতে প্রকাশিত তিমুর ফোমেঙ্কো এর কলাম থেকে অনূদিত

বাংলাদেশ সময়:১২৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২৩
এমএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।