নতুন একটি সামরিক জোট গড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। কারণটি অনুমেয়।
শুধু চীন নয়, উত্তর কোরিয়ার আচরণ নিয়েও এ দেশ তিনটির চিন্তা অনেক। তাই চীন ও উত্তর কোরিয়ার ‘বিপজ্জনক ও আগ্রাসী আচরণ’ ঠেকাতেই মূলত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন জোট গঠন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৮ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশযাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে মিলিত হন জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল। তারা একটি বৈঠক করেন। এবং সেখানেই নতুন সামরিক জোট গঠনে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
সাগরপাড়ের দুই দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঘনিষ্ঠ এশীয় মিত্র’ বলে বিবেচিত। তিন দেশের এই বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এমনকি শীর্ষ নেতারাও বলেছেন, তাদের সিদ্ধান্ত ‘ত্রিপক্ষীয় অংশীদারত্বের একটি নতুন যুগ’। তারা এটিকে স্বাগতও জানিয়েছেন।
তিন নেতা বলেছেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখা, ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারত্বকে শক্তিশালী করা ও সাধারণ সমৃদ্ধির প্রচারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তা ছাড়া এক যৌথ বিবৃতিতে তারা দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের বিপজ্জনক ও আক্রমণাত্মক আচরণ ও পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক শক্তির নিন্দা করেছেন।
তারা এও বলেছেন, আজ (শুক্রবার) থেকে জোটভুক্ত কোনো দেশের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা যেকোনো চ্যালেঞ্জ, উসকানি ও আচরণ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা একসঙ্গে এসব বিষয় মোকাবিলা করব।
একই সঙ্গে প্রতি বছর দক্ষিণ চীন সাগরে যৌথ সামরিক মহড়া ও অন্তত একবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন জো বাইডেন, ফুমিও কিশিদা ও ইউন সুক ইয়োল।
শুক্রবার ক্যাম্প ডেভিডে বৈঠক শেষে অতিথি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জো বাইডেন। তিনি বলেন, আমরা তিনজনই ঐকমত্যে পৌঁছেছি, আমাদের দেশের ওপর যদি কোনো হুমকি আসে, সেটি আমরা যৌথভাবে মোকাবিলা করব। তিন দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময় বিষয়ক হটলাইন থাকবে। নিরাপত্তার ব্যাপারেও পরস্পর সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজনীতিতে কোনো নির্দিষ্ট শক্তির জবরদস্তির সময় শেষ হতে চলেছে উল্লেখ করে বাইডেন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমি সত্যিই খুব খুশি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এ সময় বলেন, পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে প্রভাব বিস্তারে একতরফা চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কেউ কেউ লাগাতার পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ সময় অবশ্য তিনি কোনো দেশ অর্থাৎ চীন বা উত্তর কোরিয়ার নাম উচ্চারণ করেননি।
নতুন এ সামরিক জোট গঠনের মাধ্যমে তিন দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও দৃঢ় হলো বলে মন্তব্য করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল।
শুক্রবার তিন দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনার বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্য কুস্তির মাঠে পরিণত করা উচিত নয়। অন্য দেশের নিরাপত্তা স্বার্থ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূল্যে কোনো দেশেরই নিজের নিরাপত্তা চাওয়া উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বর্জনীয় গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করা ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্লক সংঘর্ষ এবং সামরিক ব্লকগুলোকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা সমর্থন পাবে না বরং শুধুমাত্র আঞ্চলিক দেশগুলোর সতর্কতা ও বিরোধিতার সাথে মিলিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৩
এমজে