প্রতিবেশীদের সমালোচা সত্ত্বেও ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়া শুরু করেছে জাপান
আবহাওয়া এবং সমুদ্রের অবস্থা অনুকূলে থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পরিচালনাকারী টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো) স্থানীয় সময় দুপুর ১ টার পরে পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছেড়ে দেওয়া শুরু করে।
২০১১ সালে সুনামিতে বিধ্বস্ত চুল্লিগুলিকে ঠাণ্ডা করতে ব্যবহৃত এক মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি পরিশোধিত পানি বর্তমানে ১ হাজার ট্যাঙ্কে মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সীমানার মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে যে পরিমাণ পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে তা সমুদ্রে ছাড়ার প্রক্রিয়া শেষ করতে ৪০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে ধরণা করা হচ্ছে। খবর আল জাজিরা।
পানি ছাড়ার এই প্রক্রিয়ার সময় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) এর পর্যবেক্ষক সেখানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তারা পানি ও মাছের নমুনাও সংগ্রহ করবেন।
জাপান বলেছে সংরক্ষিত পানি থেকে ট্রিটিয়াম ছাড়া সমস্ত তেজস্ক্রিয় উপাদান অপসারণ করা হয়েছে। চীন এবং ফ্রান্সসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও নিয়মিত উচ্চ মাত্রায় এই হাইড্রোজেন আইসোটোপ নিঃসরণ করে থাকে।
প্রথম পর্যায়ে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত চার ভাগে পরিশোধিত পানি ছাড়া হবে, প্রতিবার ৭,৮০০ ঘনমিটার পানি সাগরে ছেড়ে দেওয়া হবে। আজ (২৪ আগস্ট) শুরু হওয়া পানি ছাড়ার কার্যক্রমটি শেষ হতে প্রায় ১৭ দিন সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টেপকো বলছে, এই পানিতে প্রতি লিটারে প্রায় ১৯০ বেকারেল ট্রিটিয়াম থাকবে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পানীয়জলের জন্য নির্ধারিত সীমা প্রতি লিটার ১০ হাজার বেকারেলের নিচে। বেকারেল হল তেজস্ক্রিয়তার পরিমাপের একক।
জাপান বলছে আইএইএ এবং জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে পারিচালিত এই কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর এর প্রভাবও নগণ্য। তবে চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মত প্রতিবেশীরা এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে আসছে।
চীন বলেছে তারা নিজেদের সামুদ্রিক পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জাপানের পদক্ষেপকে অত্যন্ত স্বার্থপর সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন। চীন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চীন, ম্যাকাও এবং হংকং ফুকুশিমা ও টোকিওর আশেপাশের থেকে জাপানি সামুদ্রিক খাবার আমদানি নিষিদ্ধ করেছে এবং তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ কার্যক্রম জোরদার করেছে।
সরকারী অভয় সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়া জনসাধারণের মধ্যেও উন্মুক্ত সাগরে ফুকুশিমার পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বুধবার (২৩ আগস্ট) দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল জাপানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
এম এম