প্রায়ই অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকে। এমন প্রতারণা যে কতটা ভয়াবহ এবং দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যে এটি হতে পারে, তা উঠে এসেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির ২৫ মিনিটের এক ডকুমেন্টারিতে।
২৫ আগস্ট প্রকাশিত এই ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে, ভারতীয় ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) মাফিয়ারা (প্রতারকরা) কীভাবে হরিয়ানার ছোট্ট শহর নুহ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আমেরিকানদের সঙ্গে প্রতারণা করছে এবং তাদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।
এনডিটিভির ডকুমেন্টারি ‘ইনসাইড দ্য ওটিপি মাফিয়া: নুহ টু নিউইয়র্ক’ এসব প্রতারণার ভয়াবহতা ফাঁস করেছে। এতে রয়েছে ব্ল্যাকমেইল, সেক্সটরসন এবং প্রতারকদের বিরুদ্ধে হরিয়ানা পুলিশের একটি অভিযান।
এ ছাড়া এই ডকেুমেন্টারিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের বিশেষজ্ঞের বক্তব্য এবং দুই প্রতারক বা স্ক্যামারের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার রয়েছে।
যারা এসব প্রতারণা করছে তারা কিন্তু খুব বড় কোনো প্রযুক্তিবিদ বা শিক্ষিত নন। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত নারী-পুরুষরা স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী ছিলেন। আর তারা প্রতারণা করছেন তাদের নিজ ঘরে বা হরিয়ানার জামতারা, নুহ, মাথুরা ও ভারতপুরের মাঠে বসে।
এই প্রতারকেরা সুদূর নিউইয়র্কে কল করেন। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৪৫ হাজার আমেরিকান প্রতারণার ফাঁদে পা দেন। এসব প্রতারকদের অস্ত্র হলো: সাধারণ মোবাইল ফোন, কয়েকশ সিম কার্ড এবং নিরীহ গ্রামবাসীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
প্রতারণার বিষয়ে এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আমরা প্রতিদিন এ সংক্রান্ত ১৪০টি অভিযোগ পাই। এই আন্তঃদেশীয় প্রতারণা ঠেকাতে আমরা স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল। প্রতারণার জন্য কিছু ভারতীয় গ্রামবাসী ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আমেরিকানদের মতো কথা বলা শেখে। ’
এই ওটিপি মাফিয়ার প্রতারণার শিকার এক নারী এনডিটিভিকে বলেন, তাকে ‘সরকারি সংস্থার’ পরিচয়ে কল দেওয়া হয় এবং বলা হয় মাদক কারবার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাকে এই সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। এসব ভুয়া অভিযোগ অস্বীকার করার পরও প্রতারকরা তাকে বারবার কল দিতে থাকে এবং তাকে হুমকি দেয় কর্মকর্তারা তার বাড়িতে অভিযান চালাবে। তারা আরও হুমকি দেয় প্রথমে সংস্থার কর্মকর্তাদের অর্থ দিতে হবে এরপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
ওই নারী এনডিটিভিকে বলেন, ‘আমি কয়েক হাজার ডলার হারিয়েছি, আমার জীবনের সঞ্চয়ের ৭৫ শতাংশ। এই অর্থ অবসর পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য সঞ্চয় করেছিলাম আমি। ’
এসব প্রতারণায় ব্যবহার করা হয় হাজার হাজার সিম কার্ড। শুধুমাত্র এ বছরের এপ্রিলে একটি ওটিপি মাফিয়ার কাছ থেকে দিল্লি পুলিশ ২২ হাজার সিম উদ্ধার করে।
কয়েকজন ভারতীয় প্রতারক যারা প্রতারণার দায়ে আটক হন, আবার জামিনে বের হয়ে আসেন। তারা এনডিটিভিকে বলেন, আত্মসাৎ করা এসব অর্থ তাদের জীবনমান উন্নত ও বিনোদনের জন্য ব্যয় করেন।
সূত্র : এনডিটিভি
বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৩
আরএইচ