তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দেওয়া ৩ বছরের সাজা স্থগিত করেছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) নতুন এ রায় দেওয়া হয়।
ডন, জিও নিউজ ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনসহ পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো এ খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদনগুলো আদালতের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তোষখানা মামলায় ইমরান খানের সাজা স্থগিত হওয়া তার জন্য বিরাট এক রাজনৈতিক বিজয়। এ সাজা কেন স্থগিত করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
ডন বলছে, পিটিআই চেয়ারম্যানের পক্ষে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট নতুন যে রায় দিয়েছেন তার বিস্তারিত মঙ্গলবারই জানানো হবে।
এর আগে সোমবার (২৮ আগস্ট) ইমরানকে দেওয়া ‘ত্রুটিপূর্ণ’ সাজার ব্যাপারে শুনানি হয় ইসলামাবাদ হাইকোর্টে। এ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমীর ফারুক ও বিচারক তারিক মাহমুদকে নিয়ে গঠিত দুই সদস্যের বেঞ্চ শুনানি নেন। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী আমজাদ পারভেজ শুনানিতে বিস্তারিত যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। এতে তিনি ইমরানের সাজা বাতিলের বিরুদ্ধে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন।
তার আগে গত ২৫ আগস্ট ইমরান খানের পক্ষে যুক্তি উত্থাপন করেন তার আইনজীবী লতিফ খোসা। তিনি দাবি করেন, তোশাখানা নিয়ে ইমরানের বিরুদ্ধে যে মামলা নির্বাচন কমিশন করেছে, তার কোনো বৈধতা নেই। বিচার চলাকালীন ইমরানকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিচারিক প্রক্রিয়াও যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। ইমরানের পক্ষে সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়নি।
পরে বেঞ্চ ঘোষণা দেন, ইমরানের কারাদণ্ডের রায়ের ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়।
সে ধারাবাহিকতায় আজ পাকিস্তানের স্থানীয় সময় ১১টায় বেঞ্চের রায় ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু সেটি ঘোষণা হয় দুপুর ১টার পর।
ফিরে দেখা-
সরকারি কোষাগার তোশাখানার মালামাল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার শুনানি শেষে গত ৫ আগস্ট ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ১ লাখ রুপি জরিমানা করেন। যে কোনো নির্বাচন থেকে ইমরানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার পরপরই লাহোরের জামান পার্কের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন ইমরান। তাকে বন্দি করা হয় পাঞ্জাবের অ্যাটোক কারাগারে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ও নির্বাচনে পিটিআই চেয়ারম্যানের অংশ নেওয়ার পক্ষে দলটির নেতারা পাল্টাপাল্টি পিটিশন দেন। জেলা ও দায়রা আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ইমরান নিজেও।
পরে গত ২৩ আগস্ট তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেটিতে ‘গুরুতর ত্রুটি’ ছিল বলে জানান পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল তার তার পর্যবেক্ষণে ইমরানের রায়ের ব্যাপারে এ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, দায়রা আদালত একদিনেই যে রায় দিয়েছে, তা সঠিক ছিল না। যে কারণেই প্রথম দৃষ্টিতেই রায়টির ত্রুটি ধরা পড়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের এই বেঞ্চে বিচারপতি ওমর আতার সঙ্গে আছেন বিচারক জামাল খান মান্দোখালিল ও বিচারক সৈয়দ মাজহার আলী আকবর নকবী। তাদের বেঞ্চ গত ৪ আগস্ট ইসলামাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইমরান খানের আপিলটি আমলে নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ৪ আগস্ট তোশাখানা মামলা গ্রহণযোগ্যতার যে রায় দায়রা আদালত দিয়েছে সেটি ‘অবৈধ’ উল্লেখ করেছিলেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতকেও নির্দেশ দেওয়া হয়, পিটিআই চেয়ারম্যান মামলা চলমান রাখার বিরুদ্ধে যে আপিল করেছেন, সেটির ব্যাপারে যেন শুনানি করা হয়। কিন্তু মামলাটির অন্য আদালতে স্থানান্তরের আপিলটি প্রত্যাখ্যান করা হয়। অথচ, গত ৫ আগস্ট বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ারের দায়রা আদালত তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
ইমরান খান এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে সাক্ষী উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। দায়রা আদালত কেন সেটিকে অগ্রাহ্য করলেন, সে প্রশ্ন করেন সুপ্রিম কোর্ট। ইমরান খানের সাক্ষ্য রেকর্ড না করেই কেন দায়রা আদালত তাড়াহুড়ো করে রায় ঘোষণা করলেন, সেটিও ছিল বেঞ্চের বড় প্রশ্ন।
পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে জানান, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এ বিষয়ে রায় দেওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন। এরপর প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেবেন।
আদালতের এমন সিদ্ধান্তের পর ইমরান খানকে তিন বছরের কারাবাসের সাজা ঘোষণা করা অতিরিক্ত জেলা ও সেশন বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ারকে ওএসডি করেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। তাকে হাইকোর্টের ‘নতুন একটি পদে’ নিয়োগ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ইমরান খানের বিরুদ্ধে তোশাখানা বিতর্ক শুরু হয়। পিটিআই চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে বিদেশিদের দেওয়া বিভিন্ন উপহার নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে উপহারগুলোর দাম বেশি দেখান তারা। সে অভিযোগেই ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও সেশন আদালতে মামলা দায়ের হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
.../এমজে