কানাডার শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজ্জারের হত্যায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল কানাডা। অটোয়ার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মঙ্গলবার ভারতে নিযুক্ত কানাডার এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে নয়াদিল্লি।
খালিস্তানি আন্দোলনের নেতা হরদিপকে নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে যে অবনতি ঘটেছে, তা স্পষ্ট। কে এই হরদিপ সিং নিজ্জার, যার হত্যাকাণ্ড ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কে এমন টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে?
বিবিসি বলছে, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গত ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয় হরদিপ সিং নিজ্জারকে।
ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে শিখদের স্বাধীন দেশ খালিস্তানের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন তিনি। তার সমর্থকেরা বলেছেন, এর আগেও খালিস্তান আন্দালনে যুক্ত হওয়ার জন্য তাকে বহুবার হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
ভারত এর আগে নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দেশটির অভিযোগ ছিল, তিনি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে তার সমর্থকেরা ওই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করেন।
এনডিটিভি বলছে, ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধরের ভার সিং পুরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন হরদিপ সিং নিজ্জর। ১৯৯৭ সালে মিস্ত্রি হিসেবে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। তিনি বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক ছিলেন।
ভারতের অভিযোগ, কানাডায় যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরেই খালিস্তান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। নিষিদ্ধ গোষ্ঠী খালিস্তান টাইগার ফোর্সের (কেটিএফ) মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। তিনি নিষিদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী শিখস ফর জাস্টিসের (এসএফজে) অংশ ছিলেন।
২০২০ সালে ভারত সরকার হরদিপ সিংকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়। বেশ কয়েকটি মামলায় দেশটির ওয়ান্টেড তালিকায়ও তার নাম ছিল। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৭ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় বিস্ফোরণের ঘটনা, যাতে ছয়জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হন।
২০০৯ সালে পাতিয়ালায় রাষ্ট্রীয় শিখ সঙ্গতের প্রেসিডেন্ট রুলদা সিংয়ের হত্যায়ও হরদিপ সিং জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ভারতের জলন্ধরে এক হিন্দু পুরোহিতকে খুনের মামলায় পলাতক হরদিপের খোঁজে গেল জুলাইয়ে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। সম্প্রতি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ঘটনায় হরদিপ সিংয়ের সম্পৃক্ততারও অভিযোগ ওঠে।
ভারত ও কানাডার মধ্যে দীর্ঘ সময়ের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সম্পর্কে ভাটা পড়েছে।
ভারতের সঙ্গে সম্প্রতি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করেছে কানাডা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত না জানালেও ভারতের পক্ষ থেকে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ‘নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব’ হওয়ায় চুক্তি স্থগিত হয়েছে।
এই শিখ নেতার মৃত্যুর বিষয়ে কানাডায় অবস্থিত ভারতের উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গেও এ বিষয়ে তিনি আলোচনা করেছেন।
সোমবার কানাডার হাউজ অব কমন্সের সভায় ট্রুডো বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা নিজ্জারের হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে। অবশ্য ভারত এ অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে নাকচ করে দিয়েছে।
এনডিটিভি ও বিবিসি অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
আরএইচ