ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হাসপাতালে হামলা: তদন্তে ইসরায়েলি বর্ণনার ওপর সন্দেহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
হাসপাতালে হামলা: তদন্তে ইসরায়েলি বর্ণনার ওপর সন্দেহ

গত মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার আল-আহলি আরব হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলার দায় পড়ে ইসরায়েলের ওপর।

কিন্তু দেশটি এ অভিযোগ অস্বীকার করে শান্তিকামী সংগঠন হামাসের ওপর দোষ চাপায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বন্ধু রাষ্ট্রের ওপর আস্থা রেখে ‘তৃতীয় কোনো পক্ষের’ ওপর হামলার দায় চাপান।

এদিকে ন্যক্কারজনক এ হামলা দিয়ে বিশ্ববাসী নিন্দা জানায়। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড থেকে থার্ড- বহু বিশ্ব নেতা হামলাটি নিয়ে নিন্দা করার পাশাপাশি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানায়। কিন্তু তাদের পাত্তা দেয়নি ইসরায়েল সরকার। হামলা চলমান রয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে শিশু-নারীসহ বহু ফিলিস্তিনির। আহতের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এর মধ্যে আমার ফিলিস্তিনের হাসপাতালগুলো খালি করতে বলছে ইসরায়েলের সামরিক দল; তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে আল-আহলি আরব হাসপাতালে হামলার একটি চিত্র প্রকাশ করেছে ‘চ্যানেল ফোন নিউজ’ নামে লন্ডনভিত্তিক একটি গণমাধ্যম। সংবাদমাধ্যমটি হাসপাতালের বিস্ফোরণের ‘ফটোগ্রাফিক ও অডিও প্রমাণ’ দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে ওই ঘটনায় ইসরায়েলের বর্ণনার ওপর সন্দেহ সৃষ্টি হয়।

হামলার পর নিজেদের সম্পৃক্তরা অস্বীকার করে ইসরায়েল যে বক্তব্য দিয়েছিল- বিস্ফোরণের শব্দ বিশ্লেষণ করে সেই বক্তব্যের কোনো মিল পায়নি সংশ্লিষ্টরা।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনাটি তদন্তে বিশেষায়িত এনজিওগুলো একটি কনসোর্টিয়াম পরিচালনার মাধ্যমে অডিও বিশ্লেষণ করে। তারা জানান, বিস্ফোরণের ঠিক আগে একটি ভিডিওতে যে শব্দ শোনা গেছে, সেটি দক্ষিণ-পশ্চিম গাজা থেকে নিক্ষেপ করা ফিলিস্তিনি রকেটের গতিপথের সঙ্গে বেমানান ছিল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কথিত হামাস কর্মকর্তাদের মধ্যে কথোপকথনের রেকর্ডিংসহ একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটিতে একটি রকেট মিস ফায়ারের কথা উল্লেখ করা হয়; যেটি আল-আহলি আরব হাসপাতালে আঘাত করেছিল বলে ইসরায়েলি সেনাদের দাবি। ইয়ারশট নামে একটি অডিও তদন্ত গ্রুপ ওই অডিওর তদন্ত করে।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ফরেনসিক সাউন্ড বিশ্লেষণ করেছে দেখা যায় অডিওটি দুটি পৃথক চ্যানেলে রেকর্ড করার পর একসাথে জুড়ে দেওয়া। হাসপাতালে হামাস হামলা করেছে তা প্রমাণ করতে এই অডিওটি কোনো নির্ভরযোগ্য উত্স হতে পারে না।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে ভয়াবহ হামলা ও বিস্ফোরণে অন্তত ৫০০ জন নিহত হন। আহত হন হাজারেরও বেশি মানুষ। এরপর শুরু হয় পালটাপালটি দোষারোপ। হামাস ইসরাইলকে দায়ী করে। সেই দায় অস্বীকার করে তেল আবিব।

ঘটনার কিছু সময়ের মধ্যে ইসরায়েল সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরে হামলার ঘটনার ব্যাপারে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, বাইডেন ইসরাইল ছাড়ার আগে তাকে আমি সব তথ্যপ্রমাণ দিয়েছি। এতে স্পষ্ট হয়, গাজার হাসপাতালে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স নয় বরং ইসলামিক জিহাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। আমি এ তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা পরিষদও বাইডেনের সামনে সব তথ্যের বিস্তারিত তুলে ধরেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, তুরস্ক, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের প্রায় সব দেশ এ হামলার জন্য ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) দায়ী করেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা স্পষ্টভাবে বলেছে— এ হামলার জন্য আইডিএফ দায়ী নয়।

এ পরিস্থিতিতে আল আহলি হাসপাতালে হামলা নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে এগিয়ে এসেছে রাশিয়া। দেশটি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ওই হামলার সময়কার স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশের দাবি করেছে। শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এ দাবি করেন।

তিনি বলেন, গাজার হাসপাতালে হামলার বিষয়ে সবাই কথা বলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি হামলার জন্য দায়ী আসলে কারা। সবাই এখানে একে অন্যকে দায়ী করছে। আমরা নিশ্চিত হামলার সময়ে ঘটনাস্থল, ও এর আশপাশের এলাকার স্যাটেলাইট ছবি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে। আমরা চাই ঘটনার ছবি প্রকাশ করা হোক; সব বিভ্রান্তি দূর হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।