ভারতের উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে নির্মাণাধীন সিলকিয়ারা বেন্ড-বারকোট টানেলে ভূমিধসে আটক পড়েছে ৪১ জন শ্রমিক। ঘটনার নয় দিন কেটে গেলেও কোনো সুষম খাবার পাঠানো সম্ভব হয়নি।
তবে শুকনো খাবার আর নয়। চেষ্টা চলছে সুষম খাবার পৌঁছে দেওয়ার। যেমন মুগডালের খিচুড়ি, ফল, তরল খাবার। এদিকে, আটকে পড়া শ্রমিকদের ছবি ধরা পড়ল ক্যামেরায়।
খাবার পাঠানোর জন্য জঞ্জাল ভেদ করে ৬ ইঞ্চি চওড়া নতুন একটি পাইপ বসানো হয়েছে সুড়ঙ্গের ভেতরে। যার একটি মুখ রয়েছে সুড়ঙ্গের ভেতরে শ্রমিকদের কাছে। সেই পাইপে করেই সুষম খাবার পাঠানো হচ্ছে।
জানা গেছে, চিকিৎসক তথা পুষ্টি-বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ ডায়েট প্ল্যান। তাতেই নাম রয়েছে মুগ ডালের খিচুড়ির। সোমবার (২০ নভেম্বর) পাইপের সাহায্যে শ্রমিকদের কাছে খিচুড়ি পাঠানো হয়েছে। শুধু খাবার নয়, পরবর্তীতে ওই ৬ ইঞ্চির পাইপ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার হবে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, চার্জারসহ একটি ফোন শ্রমিকদের কাছে ওই পাইপের মাধ্যমে পাঠানো হবে, যার মাধ্যমে শ্রমিকরা কথা বলতে পারবেন। এদিকে, সোমবার রাতে প্রথমবার আটকে থাকা শ্রমিকদের ছবি ধরা পড়ল ক্যামেরায়। তারা দ্রুত উদ্ধারের আর্তনাদ শোনা গিয়েছে।
এদিকে, সোমবার এই নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি তিনি এদিন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন। বলেছেন, কোনও পরিস্থিতিতেই যেন শ্রমিকরা মনোবল না হারিয়ে ফেলেন। তাছাড়াও ফোনে কথা বলার সময় ধামিকে মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সাহায্য করছেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার সময় ব্রহ্মখাল-যমুনোত্রী হাইওয়ের নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সেখানে মাত্র সাড়ে আট মিটার লম্বা এবং প্রায় দুই মিটার চওড়া সুড়ঙ্গে শ্রমিকরা আটকে রয়েছেন। তাদের উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে বহু চেষ্টা চলেছে। উদ্ধারকাজের গতি তদারকি করতে সোমবার অকুস্থলে পৌঁছায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল টানেলিং অ্যান্ড আন্ডারগ্রাউন্ড স্পেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আর্নল্ড ডিক্স। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এখানে কাজ খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। আমাদের দল এখানে রয়েছে। সবাই মিলে শ্রমিকদের বের করে আনব।
উদ্ধার কাজে নিয়োজিত অন্য সংগঠনগুলো হলো- ওএনজিসি, বিআরও (বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন), আরভিএনএল (রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড), এনএইচআইডিসিএল (ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড), এনএইচপিসি (ন্যাশনাল হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন), এসজেভিএনএল (সতলেজ জল বিদু্যৎ নিগম লিমিটেড) প্রভৃতি।
জানা গেছে, শ্রমিকদের উদ্ধার করতে কেন্দ্র এগোচ্ছে পাঁচ-দফা পরিকল্পনা নিয়ে। যে পাহাড়ি সুড়ঙ্গপথে শ্রমিকরা আটকে আছেন, তার তিন দিক দিয়ে খননকাজ চালানো হবে। রাস্তা কেটে তৈরি করা হবে শ্রমিকদের কাছাকাছি যাওয়ার। পাঁচটি উদ্ধারকারী সংস্থা-সংগঠন দায়িত্ব পেয়েছে।
এর মধ্যে দুটি রাস্তা খনন করা হবে আনুভূমিকভাবে, প্রধান সুড়ঙ্গের ডান এবং বাম দিক থেকে। আর তৃতীয়টি হবে উল্লম্বভাবে, ওপরের দিক থেকে। বর্তমানে, উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল–খননকাজের জন্য ড্রিলিং মেশিন চালানো। কারণ এর আগে তা করতে গিয়েই ধস নেমেছিল। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগে শ্রমিকদের পরিবার। নিরাপদে তাদের উদ্ধার করা যাবে কি না, এই প্রশ্নই এখন তাদের মনে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২৩
এসএম