কাতারের মধ্যস্থতায় গাজায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি দিয়েছে ইসরায়েল। সাত সপ্তাহ পর এই প্রথম যুদ্ধবিরতি হলো।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস ৫০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। আর ইসরায়েলি জেলে বন্দি ১৫০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন। শুকবার বিকেলে প্রথম ধাপে ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ১৩ ইসরাইয়েলি জিম্মি মুক্ত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি বোমা হামলা তীব্রতর হয়। রাফাহ ও দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে হামলার পাশাপাশি উপত্যকার উত্তরে অবিরাম গোলাবর্ষণ চলতে থাকে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ১৩ এর সংবাদদাতা আলমগ বোকার অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যাতে দেখা যায় যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে উত্তর গাজায় বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলি সেনারা দূর থেকে উদযাপন করছে।
গাজার দক্ষিণের খান ইউনিস থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আজুম জানান, গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় এই প্রথম যুদ্ধ থামল। গাজাবাসীর জন্য এটি বড় স্বস্তি। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে নিরাপদ থাকতে পেরে আনন্দিত তারা।
তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম আমরা ইসরায়েলি ড্রোনের শব্দ শুনছি না। স্বল্পমেয়াদের যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করবে, লোকজনের মধ্যে এমন আশার ঝলক দেখা যাচ্ছে।
জরুরি ত্রাণ
যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, গাজায় জরুরি মানবিক সাহায্য বা ত্রাণ প্রবেশ করতে পারবে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় হামলা এবং পরে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে।
মিশর বলছে, চারদিনের প্রতিদিনই এক লাখ ৩০ হাজার লিটার ডিজেল ও চার ট্রাক গ্যাস গাজায় পৌঁছাবে। সব মিলিয়ে ২০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় পৌঁছাবে।
রাফাহ সীমান্ত থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা ইয়োমনা এলসায়েদ বলেন, তেল-গ্যাসবাহী ট্রাকের যাত্রা শুরু হয়েছে।
এদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল- আনসারি দোহায় বলেন, প্রথম ধাপে মুক্ত হওয়া জিম্মিরা স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় মুক্ত হবেন। তখন আরও ত্রাণ প্রবেশ করবে। চার দিনে ৫০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস।
যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ
দোহা থেকে আল জাজিরার জেমস বেস জানান, যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য লঙ্ঘনের দিকে নজর রাখবে কাতার। দেশটি যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে রাখবে।
তিনি বলেন, দোহায় কাতারের একটি অপারেশন কক্ষ রয়েছে। এখানে থেকে গাজার সার্বক্ষণিক তথ্য পাওয়া যাবে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও হামাসের সঙ্গে এখান থেকে সরাসরি সংযোগ রয়েছে।
‘বাড়ি ফিরে যেতে চাই’
গাজার খান ইউনিস থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা ওয়ায়েল দাহদুহ জানান, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে তাদের বাড়িঘর পরীক্ষা করতে রওনা হয়েছেন।
তিনি জানান, এক ব্যক্তি তাকে বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই, ধ্বংস হয়ে গেলেও ফিরে যেতে চাই। আমি সেখানে থাকতে চাই। আমি সেখানেই মরতে চাই। ’
শিশু সঙ্গে থাকা এক নারী বলেন, ‘আমাদের প্রার্থনা এই কয়েকটা দিন আরও আরও দীর্ঘ হয়ে উঠুক। ’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তাদের সেনারা লাইন বরাবর অবস্থান করবে এবং ফিলিস্তিনিদের উত্তর দিকে যেতে দেবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৩
আরএইচ