পাকিস্তানের ইসলামাবাদে নারীদের পদযাত্রা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছুড়েছে। বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
পদযাত্রাটি রাজধানীতে পৌঁছে গিয়েছিল। পুলিশ অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া মাহরাং বেলুচও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বেলুচিস্তানে পুরুষদের জোরপূর্বক গুমের শিকার হওয়া নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলছে। সম্প্রতি এক বেলুচ পুরুষের মৃত্যুর পর ক্ষোভ বাড়তে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, ওই পুরুষ পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে নারীদের বিক্ষোভ মিছিলে ইসলামাবাদ পুলিশ হামলা চালায় বলে এক্সে (আগের নাম টুইটার) জানান মাহরাং বেলুচ।
বিক্ষোভকারীদের রেড জোনে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। ইসলামাবাদে রেড জোনে নির্বাহী, বিচার বিভাগের ভবন রয়েছে। পুলিশের হাতে ছিল লাঠি, মাথায় ছিল হেলমেট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের গাড়িতে জড়ো করা বিক্ষোভকারীদের হট্টগোল চলছে। অনেককে চিৎকার করতে দেখা গেছে। কাউকে কাউকে মাটিতে পড়ে থাকার পাশাপাশি আহত হতে দেখা যায়।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তানে তথাকথিত জোরপূর্বক গুম গোয়েন্দা বাহিনীর অঘোষিত গ্রেপ্তারের দিকেই ইঙ্গিত করে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের আদালতে নেওয়া হয় না, সরকারকেও অবহিত করা হয় না। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন- রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষার্থীরা।
২০০০ এর প্রথম দশকের গোড়ার দিকে বেলুচিস্তান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্মের সময় থেকেই গুমের অভিযোগ করা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে অনেক বেলুচ নারী তাদের প্রিয়জন নিখোঁজের বিচার চেয়েছেন এবং বিষয়টি বিশ্বব্যাপী নজরে আনতে চেয়েছেন।
সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর কাউন্টার-টেররিজম পুলিশ ২৪ বছর বয়সী বালাচ মোলা বক্সকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। তাকে প্রায় এক মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তিনি বিস্ফোরক হাতে ধরা পড়েছেন।
২৩ নভেম্বর জামিন আবেদনের মাত্র এক দিন আগে, পুলিশ জানায়, মোলা বক্সসহ নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর চার সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। বেলুচিস্তানের তুরবাত শহরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে তারা নিহত হন।
তার পরিবার সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার দাবির বিরোধিতা করেছে এবং বলেছে যে তিনি পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন।
যেদিন বলা হয়েছিল, বক্স নিহত হয়েছেন, সেদিন থেকেই এর প্রতিবাদে- ‘মার্চ অ্যাগেইনস্ট বেলুচ জেনোসাইড’ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শেষ হোক। পাশাপাশি তাদের দাবি ছিল, বেলুচ তরুণদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বেলুচ বলেন, ২৬ দিন আগে আমরা আমাদের পদযাত্রা শুরু করি। আমরা গুম বা হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের হাজার হাজার মা, বোন, কন্যা এক হয়েছি।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের থামাতে যেকোনো কিছুই করতে পারে। কিন্তু আমরা থামব না। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী, আমরা শান্তিপূর্ণ থাকব, যদি তারা না-ও থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
আরএইচ