ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বাইডেন তো পাল্টে গেলেন, ট্রাম্প এসে কী করবেন?

রকিবুল সুলভ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
বাইডেন তো পাল্টে গেলেন, ট্রাম্প এসে কী করবেন?

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বারবারই বলে আসছিলেন, তিনি নিজের ছেলে হান্টার বাইডেনকে অস্ত্র ও কর ফাঁকির মামলার দণ্ড থেকে ক্ষমা করবেন না কিংবা শাস্তি কমাবেন না।  

হান্টারের জন্য বড় ধরনের সাজার শঙ্কা তৈরি হচ্ছিল, তবুও প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের পরের রোববার সন্ধ্যায় যখন আমেরিকান জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ছিল, তখন জো বাইডেন ঘোষণা করেন, তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।

সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাইডেন লেখেন, হান্টারকে ভেঙে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা চলছিল— সে গত পাঁচ বছর ছয় মাস ধরে মাদক থেকে মুক্ত রয়েছে, এমনকি নিরন্তর আক্রমণ ও পক্ষপাতদুষ্ট বিচারের মুখেও।

তিনি লেখেন, হান্টারকে ভাঙার চেষ্টা করতে গিয়ে তারা আমাকেও ভাঙার চেষ্টা করেছে— এবং বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে এটি এখানেই থেমে যাবে। যথেষ্ট হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ শুনেছেন, তাদের কাছে প্রেসিডেন্টের এই ব্যাখ্যা পরিচিত বলে মনে হতে পারে।

ট্রাম্প ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মিত্রদের জন্য একাধিক ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। তারা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির পুরো মেয়াদজুড়ে বিভিন্ন ফৌজদারি তদন্তের আওতায় এসেছিলেন।

এটি করতে গিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমার ব্যাপক ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠিত হোয়াইট হাউসের নিয়মকানুন পাশ কাটিয়েছিলেন ট্রাম্প। সে সময় এ নিয়ে তার সমালোচনা করা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো রাজনৈতিক পরিণতি হয়নি।

প্রেসিডেন্সি ক্ষমার আওতায় ছেলেকে মুক্তি দেওয়ার কারণে বাইডেনও সমালোচিত হতে পারেন। এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কলোরাডোর ডেমোক্রেটিক গভর্নর জ্যারেড পলিস বলেন, তিনি হতাশ হয়েছেন এবং এ পদক্ষেপ বিদায়ী প্রেসিডেন্টের খ্যাতিতে কলঙ্ক লেপে দেবে।
 
খালি চোখে দেখতে গেলে বাইডেনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে, তাই তার কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে খুব বেশি মূল্য দিতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ শিগগিরই আবার নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের দিকে সরে যাবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমার নিয়ম এবং প্রক্রিয়া উল্লেখযোগ্য ও স্থায়ীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এর ফলে, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যাই হোক না কেন, এখন মানুষের পক্ষে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ, ক্ষমার পদ্ধতি এতটাই পরিবর্তিত হয়েছে যে, এখন আর এর বিরুদ্ধে সহজভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।

ট্রাম্প শিবির বাইডেনের ক্ষমা ঘোষণার খবরের প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশ তৎপর ছিল, এবং তারা বলেছে যে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা সংস্কার করবেন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপন করবেন।

এটি মনে রাখতে হবে, ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছেন। মনে করা হচ্ছে, এখন বাইডেনের প্রেসিডেন্সির সময়ে অভিযুক্ত সহযোগীদের সাহায্য করবেন তিনি, যারা ২০২১ সালের ০৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় জড়িত। ।

ট্রাম্প যাদের ক্ষমা করেছিলেন

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘটনাকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যায়বিচারের গর্ভপাত আখ্যা দিয়েছেন। তবে ট্রাম্পও কিন্তু এর বাইরে ছিলেন না। ক্ষমতা ছাড়ার আগে তার ক্ষমার বিষয়টি নিয়েও বিরোধী শিবির থেকে সমালোচনা এসেছে।

২০২১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প ৭৪ জনকে ক্ষমা করেন এবং আরও ৭০ জনের দণ্ড কমিয়ে দেন। ক্ষমা করার অর্থ হলো দণ্ড মওকুফ করা। আর দণ্ড কমানোর অর্থ হলো দণ্ডের মেয়াদ কমানো।

যারা ক্ষমা পেয়েছিলেন, তারা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মিত্র। তাদের মধ্যে রয়েছেন ট্রাম্পের সাবেক নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থাপক পল মানাফোর্ট, দীর্ঘদিনের মিত্র রজার স্টোন ও তার জামাতা জেরার্ড কুশনারের বাবা চার্লস।

২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন ট্রাম্পের প্রধান কৌশলী ও উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননও ক্ষমা পেয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।