ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘গোলান মালভূমি’ কী, আসাদের পতনে ইসরায়েল কেন হানা দিল সেখানে? 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
‘গোলান মালভূমি’ কী, আসাদের পতনে ইসরায়েল কেন হানা দিল সেখানে?  গোলান মালভূমির বাফার জোনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তৎপরতা। ছবি: ইন্টারনেট

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতনের পর লাভ হয়েছে ইসরায়েলের। গোলান মালভূমিসহ আরও কয়েকটি এলাকা দখল করে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

পাশাপাশি সিরিয়াজুড়ে বিমান হামলাও চালিয়েছে তারা।

সংঘাতমুক্ত বিশেষ অঞ্চল খ্যাত গোলানে প্রবেশ করে কমান্ডিং পজিশনে অবস্থান নিতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফকে)  নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।  

ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাময়িকভাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে আরব দেশগুলো।  

গোলান মালভূমি কোথায় ও কার দখলে?

গোলান মালভূমি সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যবর্তী অঞ্চল। একে বাফার জোন বা সংঘাতমুক্ত বিশেষ অঞ্চল বলা হয়। সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৮০০ বর্গকিলোমিটার (প্রায় ১০০০ বর্গমাইল) আয়তনের এক পাথুরে মালভূমি এটি। ১৯৬৭ সালের পর থেকে এই অঞ্চলটির বড় একটি অংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।

গোলান মালভূমি।  ছবি: ইন্টারনেট

ওই সময় ইসরায়েল-সিরিয়ার ৬ দিনের যুদ্ধের পর সিরিয়া পিছু হটে। সে সময় গোলানের ১২০০ বর্গকিলোমিটার (৪৬০ বর্গমাইল) এলাকা দখল করে নেয় ইসরায়েল।

১৯৭৩ সালেও গোলান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সিরিয়ার। সেই ব্যর্থ যুদ্ধ ইয়োম কাপুর নামে পরিচিত।  

অবশ্য এর একবছর পরই দুই দেশ অস্ত্রবিরতিতে সই করে। চুক্তির শর্তানুযায়ী, গোলান মালভূমির ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি লম্বালম্বি এলাকা ছেড়ে নিজ নিজ বাহিনীকে সরিয়ে নেয় দুই দেশ। আর এই এলাকাটি ‘এরিয়া অব সেপারেশন’ নামে পরিচিতি পায়। এরপর সেখানে অস্ত্রবিরতির বিষয়টিতে নজর রাখার জন্য জাতিসংঘ নিয়োজিত ‘ডিজএনগেজমেন্ট অবজারভার ফোর্স’ মোতায়েন করা হয়।

কিন্তু ১৯৮১ সালে ইসরায়েল গোলান মালভূমিতে নিজের নিয়ন্ত্রণের এলাকার বাড়ায় এবং নতুন দখল করা ভূমিতে বসতি স্থাপনও শুরু করে। এই এলাকায় ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বে কখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। যদিও কয়েক দশক পুরোনো মার্কিন নীতি ভঙ্গ করে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেন।

এদিকে বাফার জোন উপেক্ষা করে ‘এরিয়া অব সেপারেশনের’ কোনো কোনো পয়েন্ট পর্যন্ত বসতি সম্প্রসারণ করেছে ইসরায়েল। এ বিষয়ে গত নভেম্বরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সিরিয়া ও জাতিসংঘ।

গোলান মালভূমি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ভৌগোলিকভাবে গোলান মালভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলদার ইসরায়েলের জন্য। এই পাথুরে মালভূমি থেকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক মাত্র ৬০ কিলোমিটার উত্তরে। ফলে গোলান থেকে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপ সহজেই নজরে পড়ে ইসরায়েলের।

এছাড়া এই মালভূমি সিরিয়ার হামলা থেকেও ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষা দেয়। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের সময় এই সুবিধাটাই পেয়েছিল ইসরায়েল।

ম্যাপে গোলান মালভূমির অবস্থান

এছাড়া শুষ্ক ওই অঞ্চলে গোলান মালভূমি হচ্ছে পানির উৎস। মালভূমি বেয়ে নামা বৃষ্টির পানি যায় জর্ডান নদীতে, যেই পানি আশপাশের জমির উর্বরতা ধরে রাখে। গোলানের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিল বিশুদ্ধ পানির উৎস হাতছাড়া হয়ে যাবে ইসরায়েলের। তাই ইসরায়েলের জনমতও গোলানের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার পক্ষে।

গোলান মালভূমির বাসিন্দা কারা?

১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল গোলান মালভূমি দখল করে নিলে সিরিয়ানদের ওই এলাকা ছাড়তে হয়। বর্তমানে গোলামে৩০টিরও বেশি ইসরায়েলি বসতি রয়েছে। এসব বসতিতে ২০ হাজারের মতো লোক বসবাস করে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এসব বসতি বেআইনি, যদিও ইসরায়েল এটা মানতে নারাজ।

তবে এসব বসতির আশপাশ দিয়ে অন্তত ২০ হাজার সিরীয় নাগরিক বসবাস করছেন, যারা প্রধানত দ্রুজ সম্প্রদায়ের।

আসাদের পতনের পর ইসরায়েল গোলান মালভূমিতে কী করছে?

বাশার আল আসাদ সিরিয়ে ছেড়ে পালানোর পর বিদ্রোহী সিরিয়ার সেনারা গোলান মালভূমিতে তাদের চৌকিগুলো ছেড়ে যেতে শুরু করে। সেই সুযোগে বাফার জোন পেরিয়ে অবস্থান নেয় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।

সিরিয়ার কত কাছাকাছি চলে এসেছে ইসরায়েলি বাহিনী, সেটাই বড় প্রশ্ন।

সিরিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী দামেস্কের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে, যদিও এটা স্বীকার করেনি ইসরায়েল।

এদিকে এই পদক্ষেপের বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, তার বাহিনী এখানে সাময়িকভাবে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে থাকবে।  

সিরিয়া বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার সুযোগে গোলানে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব সম্প্রসারণের নিন্দা জানিয়েছে আরব দেশগুলো।  

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে ‘সিরিয়ান ভূখণ্ডের ওপর দখলদারিত্ব এবং ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত লড়াই থেকে সরে আসার চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলেছেন।

অনেক বিশেষজ্ঞ ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজের প্রফেসর ইয়োসি ম্যাকেলবার্গ বলেন, ‘সিরিয়া তো বলেনি তারা বিদ্যমান চুক্তি মানবে না। ইসরায়েল প্রতিরক্ষার কথা বলে আগ বাড়িয়ে এসব পদক্ষেপ নিয়েছে, অথচ যুদ্ধের কোনো উসকানি নেই। ’

লন্ডনভিত্তিক আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের ডক্টর এইচ এ হেলিয়ার বলেন, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো গোলানের দখল ফিরে পেতে অচিরেই হামলা চালাবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।