ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ পৌষ ১৪৩১, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গাজায় তীব্র শীতে বাড়ছে শিশুমৃত্যু, ইসরায়েলের হামলা চলছেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪
গাজায় তীব্র শীতে বাড়ছে শিশুমৃত্যু, ইসরায়েলের হামলা চলছেই এক নারী তার সন্তানদের নিয়ে গাজার খান ইউনিসে একটি শরণার্থী শিবিরে একটি তাঁবুর মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে এক সপ্তাহে শীতে ছয় শিশুর মৃত্যু হলো।

হাসপাতাল সূত্রগুলো এমনটি জানিয়েছে। আর ইসরায়েল উপত্যকাজুড়ে টানা হামলা অব্যাহত রেখেছে।

সোমবার আলি আল-বাতরান নামে এক মাস বয়সী ওই শিশু মধ্য গাজার আল-আকসা মার্টায়ার্স হাসপাতালে মারা যায়। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা হাসপাতাল সূত্র উল্লেখ করে এমনটি জানিয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, তার মৃত্যুর কারণ ছিল তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়া।

তার আগের দিন আলি আল-বাতরানের যমজ ভাই জুমা আল-বাতরান তীব্র ঠান্ডায় মারা যায়। গাজার কেন্দ্রীয় এলাকার দেইর আল-বালাহয় উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর দুর্বল তাঁবুতে তার মৃত্যু হয়। নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই তাদের জন্ম হয়েছিল। তাদের বাবা জানান, জুমার মাথা বরফের মতো ঠান্ডা ছিল।

ইসরায়েলি বাহিনী গাজার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করেছে, যাদের মধ্যে হাজারো মানুষকে বাধ্য করা হয়েছে উপকূলের অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিতে। বৃষ্টি-বাতাস আর ঠান্ডা আবহাওয়ায় তাদের বেশ ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।  

গত এক সপ্তাহে ঠান্ডায় মারা যাওয়া ছয় ফিলিস্তিনি শিশুর মধ্যে তিনজন গাজার উপকূলীয় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ আল-মাওয়াসিতে বাস করত, যা দক্ষিণের খান ইউনিস শহরের কাছে অবস্থিত।

গাজা সরকারের তথ্য দপ্তর সোমবার জানায়, উদ্বাস্তু শিবিরের জীর্ণ তাঁবুগুলোতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় সাতজনের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একই দিন বলেছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ২৭ জনের প্রাণ গেছে।

দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা হিন্দ খোদারি বলেন, এই মুহূর্তের পরিস্থিতি কল্পনা করার মতোও নয়। আমরা সবাই প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে জমে যাচ্ছি এবং কাঁপছি। … বিশেষ করে যারা আল-মাওয়াসিতে, সমুদ্রতীরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছেন, তারা ঠান্ডার কারণে ভীষণ ভোগান্তিতে আছেন।

তিনি বলেন, আমরা এমন ফিলিস্তিনিদের কথা বলছি, যারা ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে বাস্তুচ্যুত। তারা এখনও একই পুরনো তাঁবুতে বসবাস করছেন। তাদের তাঁবুতে কোনো ত্রিপল নেই। এমনকি তাঁবু ঢাকার জন্য প্রয়োজনীয় নাইলন, সরঞ্জাম কেনাও তাদের জন্য খুব ব্যয়বহুল। শীতের কাপড় ও কম্বল জোগাড় করাও তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে ইসরায়েল গাজা সিটিতে আল-ওয়াফা ও আল-আহলি নামের দুই হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। রোববার আল-ওয়াফায় বোমা হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হন কয়েকজন। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স এমনটি জানায়।

ইসরায়েলি বাহিনী শুক্রবার গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে, যার মধ্যে ডজনখানেক চিকিৎসাকর্মীও রয়েছেন। আটকদের মধ্যে হাসপাতালটির পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়াও ছিলেন।

সামরিক বাহিনী হুসাম আবু সাফিয়ার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে সিএনএনের সোমবারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, তাকে দক্ষিণ ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত স্দে তেইমান সামরিক ঘাঁটিতে আটক রাখা হয়েছে। ঘাঁটিটি আটককেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।  

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, খাবার, চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র অভাব দেখা দেয়। বহু মানুষ বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৫৪১ ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন এক লাখ আট হাজার ৩৩৩ জন। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার একশর বেশি ইসরায়েলির প্রাণ যায়। অনেককে বন্দি করে গাজায় নেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪
আরএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।