ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নয় বছরের শিশুরা যেখানে ইট ভাঙে!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৪
নয় বছরের শিশুরা যেখানে ইট ভাঙে!

ঢাকা: নাম তার স্যামুয়েল জুয়ান রামোস গোমেজ। বয়স সবে নয়।

প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে পেন্সিল, বই, খাতা অার ব্যাগ বাসায় রেখেই বেলচা হাতে দৌড় দিতে হয় ইট ভাঙার কারখানায়। সেখানে ইট ভেঙে শুড়কি করতে হয়। পাথর শক্ত ইটকে হাতুড়ি পেটা করে করতে হয় গুড়া। এটাই ছোট্ট শিশু স্যামুয়েল রোজকার জীবন-কাব্য!

ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র দেশ বলিভিয়ায় শিশু শ্রমের মাত্রা এতোটাই উচ্চতর যে এ বিষয়টি তাদের জন্য স্বাভাবিক। স্বাভাবিক কারণ এখানে যে; ঘরে ঘরে রয়েছে হাড় ভাঙা খাটুনি করার মতো শিশু স্যামুয়েল!

মূলত শিশু স্যামুয়েল তার বাবা-মা’কে সাহায্য করতেই কাজে নেমেছে। বলিভিয়ার পাহাড়ি এলাকা আলপাকোমা গ্রামে তাদের বাস। কৃষিজ কাঁচামালে এই গ্রামটি বেশ সমৃদ্ধ।

তবে কৃষির চেয়ে এখানে ইট ভাটায় কাজ করে বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়। কিন্তু অর্থ উপার্জনের চেয়েও এই কাজে ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বেশি। সারাক্ষণ ভাটায় মেশিনের শব্দ, ইটবাহী ট্রাকের আধিক্য, পরিবেশ দূষণ, সর্বপরি ভটায় সৃষ্ট ধুয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এছাড়া, শিশু স্যামুয়েল তার শরীর স্বাস্থ্যের জন্যও এই কাজে অপারগ। তবুও চেষ্টা অব্যাহত তার। এ কাজ করে স্যামুয়েলের মাসিক আয় ৭২ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫ হাজার ৬ শ’ টাকা।

শুধু স্যামুয়েলই নয় এখানে প্রতিটি ঘরে ঘরে শিশুরাই শ্রমের সঙ্গে যুক্ত বলে জানালেন, স্যামুয়েলের মা ফ্রান্সিকা গোমেজ রদ্রিগেজ।

তিনি জানান, শিশুরা এখানে কাজ করে, কারণ তাদের বাবা-মা’র সামর্থের অভাবে শিশুদের সামান্যতম চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব হয় না।

পরিবারে স্যামুয়েল জুয়ান রামোস গোমেজই সবার বড়। তার এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। অভাবের সংসারে শিশু স্যামুয়েলের দায়িত্ব অনেক।

দেশটির সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান বলছে, স্যামুয়েলের মতো প্রায় ৮ লাখ শিশু শ্রমিক আছে দেশটিতে। এরমধ্যে, ৪ লাখ ৯১ হাজারের মতো শিশু শ্রমিক ১৪ বছরের নিচে।

বলিভিয়ার শিশু ও কিশোর শ্রমিকদের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত আইন প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে, সচেতন মহল থেকে। তারা মনে করেন, শিশু শ্রমকে অপরাধের আওতায় না এনে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। কেন-না অধিকাংশ পরিবার এখানে শিশুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।

বলিভিয়ায় ১০ বছর বয়সী শিশুদের কাজে খাঁটানো যাবে এ সংক্রান্ত একটি আইনও রয়েছে। আইন অনুযায়ী শিশুকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দাতাকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা তার মধ্যে অন্যতম। সেই সঙ্গে তাকে শোষণের হাত থেকেও রক্ষা করতে হবে। কিন্তু বাস্তাবে এই শর্তের কোনোটিই মানা হয় না।

তবে শিশু শ্রম যেখানে বৈধ সেখানে কি আর এই পদ্ধতি খাটে! আর তাই তো এখানে ঘরে ঘরে শিশু শ্রমিক। আর এখানে নয় বছরের শিশু স্যামুয়েল যে একজন রূপক মাত্র!
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।