ঢাকা: আবারও সেই জাভা সাগর-ভারত মহাসাগর এলাকা। আবারও সেই মালয়েশিয়ার মালিকানাধীন এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠান।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে উড়াল দেওয়া কিউজেড ৮৫০১ ফ্লাইটটি সকাল ৭টা ২৪ মিনিটের পর থেকে সংশ্লিষ্ট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরগামী উড়োজাহাজটি ৮টা ৩০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা।
উড়োজাহাজটিতে ৭ ক্রু ও ১৫৫ যাত্রী মিলিয়ে মোট ১৬২ জন আরোহী ছিলেন। এদের মধ্যে ২ পাইলট ৫ ক্রেবিন ক্রু ছাড়া ১৪৯ জন যাত্রীই ইন্দোনেশিয়ান। বাকি ছয়জনের মধ্যে তিনজন কোরিয়ান এবং একজন করে মালয়েশিয়ান এবং সিঙ্গাপুরিয়ান। তবে অপর একজনের জাতীয়তা প্রথমে ব্রিটিশ বলা হলেও এখন বলা হচ্ছে ফরাসি।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ কর্মকর্তারা এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটটির নিখোঁজ হওয়া ও এর পরবর্তী কার্যক্রমের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। তারা ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজাকও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে এর উদ্ধারে ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
এছাড়া, ১৬২ আরোহীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে উড়োজাহাজটি অনুসন্ধানে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্ব নেতারা।
স্থানীয় মেট্রো টিভির খবরে বলা হয়, ভোর ৫টা ২০ মিনিটে সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড়াল দেয় কিউজেড ৮৫০১ ফ্লাইটটি। ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় ৮টা ৩০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত এটি নিখোঁজ রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী হাদি মুস্তাফা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, উড়াল দেওয়ার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই জাকার্তা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে এয়ার এশিয়ার এয়ারবাস ৩২০-২০০। উড়োজাহাজটি কালিমানতান ও বেলিতুং দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা থেকে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্ত্রীর বরাতে সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, নিখোঁজ হওয়ার আগে উড়োজাহাজটিকে অস্বাভাবিকভাবে রুট পরিবর্তনের কথা বলা হয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে। অর্থাৎ বৈরী আবহাওয়ার কারণে, বিশেষত মেঘের বাধা এড়াতে উড়োজাহাজটির পাইলটকে অনেক উপর দিয়ে উড়তে বলা হয়, এবং রুট পরিবর্তন করে যে উঁচুতে উঠতে বলা হয় সেটি অস্বাভাবিকই ছিল। আর রুট পরিবর্তন করতে বলার পর থেকেই উড়োজাহাজটি নিখোঁজ রয়েছে।
নিখোঁজ হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পরপরই উড়োজাহাজটির অনুসন্ধানে সর্বাত্মক তৎপরতায় নেমেছে ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর।
সিঙ্গাপুরের কর্মকর্তারা জানান, এয়ার এশিয়ার উড়োজাহাজটি অনুসন্ধানে সিঙ্গাপুরের বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী পুরোপুরি তৎপরতা শুরু করেছে।
একই কথা জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারাও। তারা বলেছেন, ফ্লাইটটি যে সময় ও যে স্থান থেকে নিখোঁজ হয়েছে সে সময় ও সে স্থানকে ভিত্তি করে ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনী অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে।
কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, সম্ভবত জাভা সাগরের ওপরের এলাকা থেকে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে উড়োজাহাজটি।
ফ্লাইটটি নিখোঁজ থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে এয়ার এশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তারা এখন পর্যন্ত যাত্রী বা ক্রুদের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানেন না, তবে কোনো কিছু জানতে পারলেই সকলকে জানানো হবে।
নিখোঁজ প্লেনটির হদিস পেতে ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে এবং এয়ার এশিয়া তাতে সহযোগিতা করছে বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৪