ঢাকা: খাবারে ভেজালের অভিযোগ থেকে রেহাই মিলছে না যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফাস্টফুড সরবরাহকারী চেইন শপ ম্যাকডোনাল্ডসের। সংবাদ সম্মেলন করে গত বছরের অভিযোগের স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনার তিনদিনের মধ্যেই ফের জাপানি রেস্টুরেন্টের কাস্টমারেরই ক্ষোভ হজম করতে হলো প্রতিষ্ঠানটিকে।
শুক্রবার (৯ জানুয়ারি) জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় কুশিরো শহরের ওই কাস্টমার অভিযোগ করেছেন, তিনি ম্যাকডোনাল্ডসের বার্গারে দন্ত চিকিৎসায় ব্যবহারের উপাদান পেয়েছেন।
দেশটির আশাই টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সংবাদে ওই নারী বলেন, তিনি যখন কুশিরোর একটি রেস্টুরেন্ট থেকে কেনা বার্গারে কামড় দিলেন, তখন ভেবেছিলেন পাথর অথবা বালু জাতীয় কিছু দাঁতে লেগেছে। কিন্তু পরে দেখা গেল এটি অন্য কিছু।
আশাই টিভির খবরে বলা হয়, নিরপেক্ষ তদন্তে জানা যায়, ওই বস্তুটি দন্ত চিকিৎসায় ব্যবহারের উপাদান ছিল।
ম্যাকডোনাল্ডসের মুখপাত্র মিওয়া ইয়ামামোতো বলেন, বস্তুটি দন্তক্ষয় (ক্যাভিটি) পূরণে ব্যবহার করা এক ধরনের উপাদান ছিল। তবে এটি যে বার্গারেই ছিল- এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই।
এর আগে, গত বছরের আগস্টে ম্যাকডোনাল্ডসের ফ্রাইতে দাঁত পাওয়ার ঘটনার প্রায় অর্ধবছর পর বুধবার (৭ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করে তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।
আগস্টে ওসাকার একটি রেস্টুরেন্টে ফ্রাইতে মানুষের দাঁত পেয়ে অভিযোগ করেন একজন কাস্টমার। দীর্ঘ সময় ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে ম্যাকডোনাল্ডস সংবাদ সম্মেলনে জানায়, কাস্টমারের ফ্রাইতে পাওয়া দাঁতটি মানুষেরই ছিল।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী হিদেহিতো হিশিনুমা। তবে, ফ্রাইতে পাওয়া বস্তুটি মানুষের দাঁত হলেও সেটি যে রান্না করা হয়নি এ ব্যাপারে নিজেদের নিশ্চয়তার কথা জানান হিদেহিতো। তিনি বলেন, আমরা এখনও নিশ্চিত নই যে কীভাবে দাঁতটি ফ্রাইতে এলো।
যদিও ওই দাঁত পাওয়ার পর সেসময় রেস্টুরেন্টটির ম্যানেজার অভিযোগকারী কাস্টমারের কাছে স্বীকারোক্তি দেন যে, দাঁতটি রান্না করা হয়েছিল।
অবশ্য, গত প্রায় ছয় মাস ধরে বিভিন্ন অভিযোগেরও সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ম্যাকডোনাল্ডস নির্বাহী। তিনি বলেছেন, এ ধরনের ‘দূষণ’রোধে তারা কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, ম্যাকডোনাল্ডস নির্বাহীর সংবাদ সম্মেলনের দু’দিন আগেই ‘চিকেন নাগেটে প্লাস্টিক ব্যবহারে’ অভিযুক্ত হয় ম্যাকডোনাল্ডস। পচা মাংস, পাউরুটিতে ছত্রাক, কফিতে ইঁদুর কেলেঙ্কারির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত নভেম্বরে বার্গারে মাকড়সা কেলেঙ্কারির পর দীর্ঘ সময় বাদে প্লাস্টিক কেলেঙ্কারিতে জড়ায় প্রতিষ্ঠানটির নাম।
খবরে বলা হয়, গত ৩ জানুয়ারি জাপানেরই একটি রেস্টুরেন্টে চিকেন নাগেটে প্রথম প্লাস্টিক পান এক কাস্টমার। এ অভিযোগের পরপরই ম্যাকডোনাল্ডস তার থাইল্যান্ডের কারগিল ইউনিট থেকে উৎপাদিত সাড়ে নয় লাখেরও বেশি চিকেন নাগেট ফিরিয়ে দেয়। এই পদক্ষেপের মধ্যেই ৫ জানুয়ারি আরেক কাস্টমার একই অভিযোগ তোলেন।
বলা হচ্ছে, দু’টি অভিযোগেরই তদন্ত করে যাচ্ছে মার্কিন মুলুকের প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখনও বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
চীনের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পচা মাংস কিনে সেসব দিয়ে পণ্য প্রস্তুত করে ভোক্তাদের সরবরাহ করায় গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কেএফসি, পিৎজা হাটের মতো কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে ম্যাকডোনাল্ডসও।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে জানানো হয়, কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর পর একমাসের মধ্যে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোক্তা কমে যায় ম্যাকডোনাল্ডসের।
মাত্র ত্রিশ দিনের মধ্যে আড়াই ভাগ ভোক্তা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে এসব কেলেঙ্কারি দৃশ্যত হলেও ম্যাকডোনাল্ডসের বরাবরই নীরবতা বজায় রেখেছে।
পচা মাংস কেলেঙ্কারি ঝড়ের মধ্যেই ভারতের এলাহাবাদে ম্যাকডোনাল্ডসের একটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে এর ছত্রাকযুক্ত পাউরুটি জব্ধ করে প্রশাসন।
এর সপ্তাহ কয়েকপর কানাডার নিউ ব্রুনসিক প্রদেশে রন মোরাইস নামে এক ব্যক্তি ম্যাকডোনাল্ডসের কফিতে মৃত ইঁদুরের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন।
সবশেষে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আরখাংয়েলেস্ক শহরের একটি মার্কেটে ম্যাকডোনাল্ডসের রেস্টুরেন্টে এর ‘বিগ এন টেস্টি’ বার্গারে মৃত মাকড়সা দেখতে পান জুলিয়ানা ও দারিয়া নামে দুই তরুণী।
এমনসব কেলেঙ্কারির জেরে ভোক্তা কমতে থাকলেও ম্যাকডোনাল্ডসের স্পষ্ট পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫