২০১১ সাল থেকে দেশটিতে এমন যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। একের পর এক হামলা ও সহিংসতায় ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
সিরীয়বাসী বারবার বিশ্বনেতাদের প্রতি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও কোনো কাজ হয়নি, দেশটিতে শান্তি ফিরে আসেনি। এখনও যুদ্ধের ভয়াল থাবায় আহত শিশুর কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। সিরিয়ায় বিভিন্ন হামলায় আহত, আঘাতপ্রাপ্ত ও রক্তাক্ত নারী, শিশু এবং পুরুষের কান্নার ছবি দেখে ডুকরে উঠে বিশ্বব্যাপী শান্তিপ্রিয় মানুষের মন।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চায় সিরীয়রা। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আকুতি সবার। সেই আকুতি আরও জড়ালোভাবে উঠে এসেছে শরণার্থী শিবির থেকে লেখা ১৮ বছর বয়সী এক তরুণের খোলা চিঠিতে।
আবদুলাজেজ দুখান নামে ওই তরুণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে চিঠিটি লিখেছেন। সে চিঠিতে কেবলই সিরিয়ার শান্তি ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছেন তিনি। স্বদেশে ফিরে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্নের কথাও বলেছেন আবদুলাজেজ।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সেই চিঠিটা প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলানিউজের পাঠকের জন্য সেই চিঠিটা তুলে ধরা হলো-
প্রিয় ডোনাল্ড ট্রাম্প
আমার নাম আবদুলাজেজ দুখান। আমার বয়স ১৮ বছর। সিরিয়া থেকে যে ৪০ লাখ মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে শরণার্থী হয়েছে আমি তাদের মধ্যে একজন। এ যাত্রায় বরাবর আমাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে ও অনেক মানুষকে হারিয়েছি।
আমি এই চিঠির মাধ্যমে প্রেসিডেন্সি অর্জনের জন্য আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কিন্তু একই সঙ্গে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিই, আমাদের ভবিষ্যৎ মীমাংসার বিষয়ে আপনি অসংখ্য কথা শুনিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সমর্থন নিয়ে গোলাপের মতো সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমরা বিপ্লব শুরু করেছিলাম। বেশ কয়েক বছর গত হলো। গোলাপগুলো বন্দুকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আশা জাগ্রত আছে। তবে এখন যা অবস্থা গোলাপও নেই, আশার আশ্বাসও নেই।
আপনার পূর্বসূরীরা আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ করে দিতে পারতেন? কেন করেননি আমি জানি না। তবে আপনার আশ্বাস অনুযায়ী আমরা বিশ্বাস অব্যাহত রাখতে চাই। আপনি আমাদের ভাগ্য বদলে দিতে সক্ষম।
যুদ্ধ শুরুর পর আমি আমার পরিবারের সঙ্গে চার বছর হলো সিরিয়া ছেড়ে এসেছি। আমরা কেউ দেশ ছেড়ে আসতে চাইনি। কিন্তু মরণাস্ত্র ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে আমরা কী করতে পারি? আকাশ থেকে মৃত্যু এসে যখন আমাদের গ্রাস করে, তখন আমারা কী করতে পারি?
আমাদের মতো আরও অনেকে গ্রিস হয়ে তুরস্কে গিয়েছিলো। এ সময় আমরা শহর, সড়ক ও ঘরবাড়িতে ধ্বংসস্তূপ দেখি। আমরা দুর্বল। আমরা চেয়েছিলাম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমথর্ন এবং আমরা জানি সে সমথর্ন আসবে। সে বিশ্বাস আমাদের আছে।
এখন আমি শরণার্থী। শরণার্থী শিবিরে বিচ্ছিন্ন জীবন বড়ই দুর্বিষহ। জনগণ আমাদের চারপাশে দেয়াল তৈরি করে এবং দেশগুলো ওই দেয়ালের চারপাশে আরও এক দেয়াল তৈরি করে। এমনই আমাদের জীবন।
প্রিয় প্রেসিডেন্ট, সীমানা স্বপ্নগুলো হত্যা করে। আমি মৃত্যুর স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখন বিশ্বাস আছে পরিস্থিতি পরিবর্তনের। দয়া করে আমাদের সামনে দেয়াল তৈরি করবেন না, সীমানা তৈরি করবেন না।
শরণার্থী হিসেবে আজই আমার শেষ দিন হতে পারে এবং আগামীকাল বিশ্বের কোথাও আমি নিরাপদে থাকতে পারি। হতে পারে আমি আমার প্রিয় সিরিয়া ফিরে যাবো এবং নতুনভাবে জীবন শুরু করবো। এখনও সে রকম নতুন দিনেরই স্বপ্ন দেখি।
প্রিয় ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট, আমরা আশা করি কেউ আমাদের আকুতি শুনবে। আমাদের বিশ্বাস আপনি সেইজন।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
টিআই