ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আওয়ার ডিজঅনেস্ট প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৭
আওয়ার ডিজঅনেস্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

‘আওয়ার ডিজঅনেস্ট প্রেসিডেন্ট’। বাংলায় ‘আমাদের অসৎ প্রেসিডেন্ট’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড নিয়ে এমন শিরোনামেই একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে লসঅ্যাঞ্জেলেস টাইমস (এলএটাইমস)। ২ এপ্রিল প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে একেবারে চাঁছাছোলা ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে ট্রাম্পের। এমনকি ট্রাম্পের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদের উৎসাহও জোগানো হয়েছে প্রভাবশালী দৈনিকটির সম্পাদকীয় পরিষদের এ লেখায়।

নির্বাচনী প্রচারণা থেকে হোয়াইট হাউসে ওঠা, প্রত্যেকটি পর্যায়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ও পদক্ষেপকে সমালোচনার শূলে চড়িয়ে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ এবং ‘পুরোপুরি বিভ্রান্ত-মস্তিষ্কের’। ‘ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের ব্যাপার হলো তিনি নিজেই।

১৩০০ শব্দের সম্পাদকীয়টির প্রতিটি লাইনে প্রতিটি প্যারায় ট্রাম্পকে তুলোধুনো করে তাকে নার্সিসিস্ট বা অন্ধ-আত্মপূজারী (একেবারেই নিজেতে মগ্ন) এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাচালের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

সম্পাদকীয়টির শুরুর প্যারায় বলা হয়, “ট্রাম্প আমেরিকান ভোটারদের কাছে আবেদনের প্রাক্কালে ভয় ও অসততাকে আত্মপূজারী ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাচালের মতো ব্যবহার করেছিলেন সেটা গোপন ছিল না। ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় নেমেছিলেন তখনই তাকে এ পদে অপ্রস্তুত ও অনোপযুক্ত বলে উল্লেখ করেছিল এলএ টাইমস। এমনকি তাকে নির্বাচনটা ‘মারাত্মক বিপর্যয়’ হিসেবে দৃশ্যমান হবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিল এলএটাইমস। ” 

“কিন্তু কোনো কিছুই আমাদের এখনও এই ট্রেন (ট্রাম্পের নেতৃত্বে চলমান প্রশাসন) দুর্ঘটনার ধাক্কা কী হবে তা বোঝাতে পারেনি। ” প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ডের পরিণতির ব্যাপারে হুঁশিয়ারির সুরে উল্লেখ করা হয় এলএ টাইমসের সম্পাদকীয়তে।

দৈনিকটির সম্পাদকীয় পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমেরিকানদের উৎসাহ যুগিয়ে এ লেখায় আহ্বান জানায়, “যারা প্রেসিডেন্টের বেপরোয়া ও নির্দয় কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছেন, তাদের জোর গলায় আওয়াজ তুলতে হবে, এই প্রতিবাদ যেন সবাই শোনে। ”

“নিজের কাজ, সম্পদ ও সাফল্যে আত্মপ্রসাদ, সত্যিকারের বা অনুমিত শত্রুদের দমনে গোঁড়া সিদ্ধান্ত, চাটুকারিতামূলক প্রলাপ- এই বৈশিষ্ট্যগুলোই- যেগুলোকে তিনি প্রচারণার প্রধান অস্ত্র বানিয়েছিলেন- ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে সহায়তা করেছে। আবার সত্যিকারের প্রেসিডেন্সিতে এসে তিনি যে ‍অকল্পনীয় কায়দায় ক্ষমতার ব্যবহার করছেন, সেটা সর্বনাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। ”

এলএ টাইমসের সম্পাদকীয়তে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আচরণকে বিশেষত তুলোধুনো করা হলেও সমালোচনা থেকে বাদ পড়েনি তার অবিবেচনাপ্রসূত নীতিও।

“মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্প অনেক বাস্তবতা-জীবনকেন্দ্রিক পদক্ষেপ নিয়ে নিলেন। এসব পদক্ষেপ যদি পুনর্বিবেচনা না করা হয়, তবে তার পরিণতি হিসেবে আমেরিকার পরিবারগুলো ভেঙে যাবে, নোংরা হতে থাকবে নদী-জলাশয়, দূষিত হতে থাকবে পরিবেশ, তীব্র হতে থাকবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং আমেরিকান সমাজে প্রচলিত সবার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা ভয়ানকভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। ”

“ট্রাম্পের মধ্যে অন্যের প্রতি সম্মানবোধ বলেও কিছু নেই। সত্যের ব্যাপারে তার চরম অনীহা দৃশ্যমান। তার ভীতিকর ইচ্ছের মধ্যে অতি-ডানপন্থি ষড়যন্ত্রের পুনরাবৃত্তিও দেখা যায়। ”

পার্লামেন্টে (কংগ্রেস) তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও ট্রাম্পের স্বাস্থবিমা বিল সংক্রান্ত চুক্তি সংশোধনে ব্যর্থতার কথাও উল্লেখ করা হয় সম্পাদকীয়তে। এমনকি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে কাজে ওয়াশিংটনের পক্ষ হয়ে ট্রাম্পের আগ্রহেরও সমালোচনা করা হয়।

ধনকুবের এ প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ড আমেরিকান জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে উল্লেখ করে সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, “এই লোকটা কখন কী করেন বলা যায় না, একেবারে বেপরোয়া, পুরোপুরি রগচটা, অন্ধ-আত্মপূজারী, পুরোপুরি বাস্তবতাবিমুখ, যে কারণে এটা ঠিক বলা সম্ভব নয় যে তার প্রেসিডেন্সি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে এবং আমাদের জাতির কতোটা ক্ষতি করবে। ”

ট্রাম্প এই সম্পাদকীয় প্রকাশের পর এখনও কোনো জবাব দেননি। যদিও তিনি বরাবরই গণমাধ্যমকে তার শত্রু বলে উল্লেখ করেছেন এবং তারা ‘ভুয়া খবর’ দেয় বলে বিভিন্ন বিবৃতি ও টুইটার বার্তায় তুলে ধরে আসছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।