ত্রিকোণাকৃতির এই কমপ্লেক্সের বাইরেটা লাল-সাদা ও নীলে রুশ পতাকার রঙ পেয়েছে। ফ্রাৎজ জোসেফ আর্কিপেলাগোর প্রত্যন্ত অ্যালেক্সান্দ্রা অংশে এই ঘাঁটি বসিয়েছে রাশিয়া।
এর অনেক কিছুই সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় রেখে, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাঁটি স্থাপনের খবরটি প্রকাশ করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। আর ভবনের কোনও কোনও অংশের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আর্কটিকে রাশিয়ার এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি। আর তাতে তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ এতদাঞ্চলে একক কর্তৃত্ব নেওয়ার পথে অন্যতম পদক্ষেপটি নিলো রাশিয়া। হিসাব বলছে, এই তেল-গ্যাসের মজুদের অনুমিত মূল্যমান প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পাঁচতলা বিশিষ্ট কমপ্লেক্সটির নাম দেওয়া হয়েছে নাগুরস্কি। যা রাশিয়ার সর্ব উত্তরের আর্কটিক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।
এখানে ১৫০ জন সেনা বাইরের কোনও ধরনের সহায়তা বা যোগাযোগ ছাড়া ১৮ মাস টিকে থাকতে পারবে।
কর্তৃপক্ষ বলছে তারা ওখানে কিছু সামরিক জেট মোতায়েন করতে পারে। দূরপাল্লার বোমারু বিমানগুলো সহজেই নামিয়ে আনতে পারে এমন ক্ষমতার মিগ-৩১ জঙ্গিবিমান যেমন থাকবে, তেমনি থাকতে পারে এসইউ-৩৪ নামের ফ্রন্টলাইন বোমারও।
মস্কো টাইমসের একটি খবরে বলা হয়েছে, ওই ভবনে সিনেমা, টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ডের ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, একটি সামরিক আর্ট স্টুডিও থাকছে।
এ বছরের গোড়ার দিকে খবর হয়েছিলো মেরু অঞ্চলের দখল নিতে রাশিয়া সেখানে পারমাণবিক আইসব্রেকার বসাতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, কানাডা আর নবাগত চীনের সাথে যে সনাতনী দ্বন্দ্ব তাতে শক্তি প্রদর্শনেই এই রুশ উদ্যোগ।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও সামরিক বিশ্লেষকদের বক্তব্যকে সামনে এনে সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটিই রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ঘাঁটি স্থাপন। আর তা এমনই একটি স্থানে করা হলে যা মস্কোকে এখন এমন শক্তিধর করে তুলেছে তা সোভিযেত ইউনিয়নেরও ছিলো না।
আর এর মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক প্রতিপত্তি অর্জনের দিকটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
আর্কটিকে যে পরিমাণ হাইড্রো-কার্বন জমা রয়েছে তা সৌদি আরবের চেয়েও বেশি। তাও এখন মস্কোর কব্জায়।
সার্বিকভাবে বলা হচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে মস্কো এখন পতিত সোভিয়েতের হৃত সামরিক শক্তি ফিরে পাচ্ছে। প্রত্যন্ত আর্কটিকে দেশটির যে বিমান ও রাডার ঘাঁটি রয়েছে, আরও যেগুলো নতুন নতুন তৈরি হচ্ছে তাতে আর্কটিকের ৫ লাখ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের পুরোটারই দখল এখন পুতিনের হাতে।
আর সে শক্তির কথা বিশ্বকে জানান দিতেও কসুর করছে না ভ্লাদিমির পুতিন প্রশাসন। যখন তখন সামরিক শক্তির ছবি আর যৎকিঞ্চিৎ তথ্য প্রকাশ করে সে প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখছে। প্রায়শই দেখা যায়, সাদা যুদ্ধপোশাকধারী সেনারা বিশাল বরফরাজির মাঝে প্রশিক্ষণরত। নয়তো বলগা হরিণে টেনে নিয়ে যাওয়া স্লেজ গাড়িতে ছুটছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের হিসাবে আর্কটিকের এই বিশাল বরফরাজির নিচে ৪১২ বিলিয়ন ব্যারেল তেল ও গ্যাস মজুদ রয়েছে যা বিশ্বের এ পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক জ্বালানির ২২ শতাংশ।
সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে ক্রেমলিন এক দীর্ঘস্থায়ী খেলায়ই নেমেছে।
তিনটি পরমাণু শক্তিচালিত বরফভাঙ্গা জাহাজ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। যার মধ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎটি এরই মধ্যে বানানো হয়ে গেছে যার নাম রাখা হয়েছে আর্কটিকা। এই জাহাজের চল্লিশটি ব্রেকার রয়েছে যার ছয়টি পারমাণবিক। বিশ্বের আর কোনও দেশেরই এত শক্তিধর বরফভাঙ্গা জাহাজ নেই। তারা যাত্রাপথ তৈরি করতে স্রেফ সামরিক আর বেসামরিক জাহাজগুলোই ব্যবহার করছেন।
কোলা উপসাগরের মুরমান্স্কে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় নৌবহরেও (নর্দার্ন ফ্লিট) পাঠানো হচ্ছে এমন বরফভাঙ্গা জাহাজ। এছাড়া বরফে চলতে পারে এমন দুটি করভেটও পাঠানো হচ্ছে যা থাকবে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত।
সোভিযেত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ ও রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের অধীনে আর্কটিক সীমান্ত ছিলো উন্মুক্ত, ভ্লাদিমির পুতিন যার ওপর বলা চলে পূর্ণ দখলই স্থাপন করলেন।
বাংলাদেশ সময় ২১৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
এমএমকে