ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কাতার: উপসাগরের ‘বজ্জাত বালক’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৭
কাতার: উপসাগরের ‘বজ্জাত বালক’ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি

প্রতিবেশী পাঁচ দেশসহ মোট আট দেশের সম্পর্কেচ্ছেদের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছে কাতার। সন্ত্রাসবাদে অর্থযোগান দেওয়ার অভিযোগে কাতার এই পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে এখন কথা চললেও দেশটি নানা সময়েই বিতর্কে জড়িয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য আটলান্টিক’। প্রতিবেদনটির শিরোনামে কাতারকে সমস্যা বা বজ্জাত বালক বলেই আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনটির বর্ণনা অনুযায়ী জেনে নেওয়া যাক কাতারের বিতর্কে জড়ানোর অতীত।

পাঁচ পড়শী দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর ও বিদেশে নির্বাসিত পশ্চিমা স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে কাতারের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল এতদঞ্চলে দেশটির ‘স্বতন্ত্র পথচলার’ চর্চিত বিতর্ককে ফের সামনে আনলো।

আঞ্চলিক বোঝাপড়ায় টানাপোড়েনের জেরে ২০১৪ সালেই সৌদি আরব, বাহরাইন ও আরব আমিরাত কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের রাষ্ট্রদূতদের ফেরত নিয়েছিল।

সেই অচলাবস্থা বলবৎ ছিল ৯ মাস। কিন্তু এবারের এই বিচ্ছেদ আরও বিস্তৃত হলো। আগেরবার কেবল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও এবার অর্থনৈতিক অবরোধও কার্যকর করা হচ্ছে। যে দেশের খাদ্যপণ্যের বাহন আসার জন্য কাতারিরা চেয়ে থাকে, সেই সৌদি আরব জল, স্থল ও আকাশপথে অবরোধ দিয়েছে, ফলে সেখানে ঢুকছে না কোনো খাদ্যপণ্য, এমনকি মানুষ পর্যন্ত। আর এই অবরোধ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কাতারে অর্থনৈতিক, সামজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরও প্রায় একইরকমের অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে কাতারের ওপর।

সৌদি ও আরব আমিরাতের নেতৃত্বাধীন এই ‘বিচ্ছেদজোট’ ‍আসলে এখন কী করতে চাইছে— সেটা পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও কাতারের সঙ্গে যে তার প্রতিবেশীদের উত্তেজনা আরও গভীরে শিকড় গাড়লো তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এই উত্তেজনা ২০১১ সালে সৃষ্ট ‘আরব বসন্ত’ এবং উত্তর আফ্রিকা ও সিরিয়ায় ইসলামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে কাতারের সাহায্যের অভিযোগগুলোকে আরও শক্ত ভিত্তি দিলো। আসলে ছয়-জাতির (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান ও কুয়েত) সমন্বয়ে গঠিত উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) মধ্যে গত কোয়ার্টার শতাব্দীতে যে ক’বারই ‘সংকট’ তৈরি হয়েছে, তা কোনো না কোনোভাবে কাতারকে জড়িয়ে হয়েছে। এই ইস্যুতে অন্য উপসাগরীয় দেশের নেতারা ধৈর্য্য দেখিয়ে এলেও দোহার বেখেয়ালি আঞ্চলিক নীতি কখনো কখনো সে ধৈর্য্যের বাঁধও ভেঙে দিয়েছে।

দ্বন্দ্ব বাহরাইনের সঙ্গে
কাতার এখন তাদের অবস্থান সৌদি আরব অভিমুখ থেকে ঘুরিয়ে উত্তর দিকে পারস্য উপসাগরের দিকে (ইরান) প্রসারিত করেছে। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়েই এখানকার থানি রাজপরিবার এতদঞ্চলে শ্রেষ্ঠতম শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৮৬৮ সালে তারা উপসাগরের সেসময়কার অধিশক্তি ব্রিটেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করে, যেখানে আরব উপদ্বীপে থানি পরিবারের নেতৃত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।  

বড় শক্তি হিসেবে তাদের আবির্ভাবের আগে কাতারি উপদ্বীপের একটি অংশ বাহরাইনের বর্তমান শাসক খলিফা পরিবারের অধীনে ছিল। যদিও ১৭৮৩ সাল থেকেই খলিফা পরিবারের শাসনে বাহরাইন, কিন্তু সেই বাহরাইনকে বহু বছর কাতার অবরুদ্ধ করে রেখেছিল পারস্য উপসাগরে মরুভূমির দ্বীপপুঞ্জ হাওয়ার নিয়ে বিবাদে জের ধরে। এ দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে দু’পক্ষের বিবাদ শেষ হয় চলতি শতকের প্রথমে। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক আদালত এটি বাহরাইনের বলেই রায় দেয়। ১৯৭১ সালে ব্রিটিনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৬ সালে দ্বীপপুঞ্জটি নিয়ে বাহরাইন ও কাতার প্রায় যুদ্ধের পর্যায়ে চলে যায়। উত্তেজনা ধীরে ধীরে কমলে ১১ বছর পর দু’পক্ষ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করে।

সৌদির সঙ্গে বিরোধ
১৯৯২ সালে সৌদি আরব ও কাতার সীমান্তে একটি সংঘাত বাঁধলে তাতে তিনজন নিহত হয়। ওই সংঘাত কাতারের একমাত্র সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় দু’পক্ষের ব্যর্থতাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যদিও ১৯৬৫ সালে দু’পক্ষ সীমান্ত চুক্তি করেছিল, কিন্তু কখনোই তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ওই সংঘাতের পর সেই চুক্তি ভেঙে যায়।

সৌদির সঙ্গে সেই যে দ্বন্দ্ব শুরু হলো, তারপর থেকে তা বরাবরই প্রকাশ্যে এসেছে। ১৯৯৪ সালে ইয়েমেনে যে গৃহযুদ্ধ বাঁধে, তাতে সৌদি ও কাতার পরস্পর বিপরীত পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত জিসিসি জোটে এক সৌদি কর্মকর্তাকে মহাসচিব নিয়োগ দিতে গেলে তাতে আপত্তি জানায় কাতার। তাদের আপত্তি এমন পর্যায়ে ছিল যে, মহাসচিব নিয়োগ নিয়ে চলতে থাকা একটি সম্মেলন বর্জন করে কাতারের প্রতিনিধিরা এবং নিয়োগপ্রাপ্ত মহাসচিব সভায় থাকলে তাতে অংশগ্রহণেও অনাগ্রহ জানিয়ে দেয় তারা। এমনকি সেই উত্তেজনায় জিসিসি থেকে নিজেদের সদস্যপদ প্রত্যাহারেও হুমকি দেয় কাতার।

ক্ষমতার পালাবদল
১৯৯৫ সালে এক ‘রক্তপাতহীন প্রাসাদ অভ্যুত্থানে’ বাবা খলিফা বিন হামাদ আল থানিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন তার ছেলে শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানি। এই আমিরের নেতৃত্বে ক’বছর বিতর্কহীন কাটছিল কাতারের সময়। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে আবারও নীতিগত কারণে প্রতিবেশীদের সঙ্গে উত্তেজনামূলক সম্পর্কে জড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।

অবশ্য, ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে একবিংশ শতকের শূন্য দশক পর্যন্ত আমির হামাদ তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জসিম আল থানিকে নিয়ে কাতারকে বিশ্ব দরবারে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনে সচেষ্ট হন। এই সময়ে কাতার তার এলএনজি (লিকুফায়েড ন্যাচারাল-গ্যাস) স্থাপনা নির্মাণ ও দীর্ঘ মেয়াদী জ্বালানি চুক্তি সই করে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে।

হামাদের ওই ক্ষমতা দখলকে কেউ স্বাগত জানায়নি। এমনকি একবছর পর ক্ষমতাচ্যুত খলিফা বিন হামাদকে ফের ক্ষমতায় বসাতে সৌদি আরেকটি পাল্টা ‘প্রাসাদ অভ্যুত্থান’র চেষ্টা চালায়। ২০০৫ সালে আবারও শেখ হামাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কাতারিদের একটি অংশ সৌদি প্ররোচনায় অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। এ কারণে দোহার সরকার সৌদি-কাতার সীমান্তে বসবাসরত ৫ হাজার বানি মুরা উপজাতির নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়। এরা এখনও সৌদি-অনুগত বলে মনে কর‍া হয়।

১৯৯৫ সালের নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর কাতারকে সৌদির ছায়ার বাইরে আনতে স্বতন্ত্র আঞ্চলিক নীতি প্রবর্তন করেন শেখ হামাদ। আঞ্চলিক ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের বিশেষত মুসলিম ব্রাদারহুডকে কাতারের সমর্থন এবং আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সমালোচনায় দোহা-পরিচালিত আল জাজিরাকে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলে বিরোধকে দীর্ঘ পরিসরে ঠেলে দেন তিনি।

এই বিরোধের নজির দেখা যায় ২০০২ সালেই। সেসময় সৌদির ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয়ে আল জাজিরায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার জের ধরে দোহা থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়। ওই সংকটের সুরাহা হতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু উত্তেজনা আবার বেড়ে যায় ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত মুসলিম ব্রাদারহুডের বিষয়ে পুরোপুরি বিপরীত অবস্থান নিলে। মিশর ও লিবিয়ার ময়দানে দোহা ও আবুধাবি পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থেকে বক্তব্য-বিবৃতি দিতে থাকে। কাতার অবস্থান নেয় ব্রাদারহুডের পক্ষে, আর আরব আমিরাত বিপক্ষে।

ফের ক্ষমতার পালাবদল এবং রিয়াদ-আবুধাবির আশাবাদ-হতাশা
২০১৩ সালে আমির শেখ হামাদ তার ৩৩ বছর বয়সী সন্তান শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। সেসময় রিয়াদ ও আবুধাবি আশাবাদী হয় যে, তরুণ আমির আঞ্চলিক বিষয়াদিতে কাতারের পথচলা নতুনভাবে নির্ধারণ করবেন। কিন্তু হতে থাকলো উল্টো। শেখ তামিমের দায়িত্বগ্রহণের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়, মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির পতনের পর উগ্রপন্থি সংগঠনটির নেতারা দোহায় একত্রিত হচ্ছেন এবং কার্যপ্রণালী নির্ধারণ করছেন। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় রিয়াদ ও আবুধাবি।

সেসময় কাতারের আমির তামিমকে সৌদিতেও ডেকে পাঠান বাদশাহ আবদুল্লাহ। তিনি কাতারের আঞ্চলিক বিষয়াদিতে ‘নীতি ঠিক করতে’ তামিমকে সময় বেঁধে দেন। কাতার ভবিষ্যতে কোনোভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে নাক গলাবে না মর্মে একটি চুক্তিতেও সই করার জন্য তামিমকে চাপ দেন আব্দুল্লাহ। সেই চুক্তি সই হলো। কিন্তু উত্তেজনা আর কমলো না। বরং বেড়ে গেলো আরও।

২০১৪ সালের মার্চে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, তামিম যে চুক্তিতে সই করেছিলেন তা মানছে না কাতার। এরপর বাহরাইনকে সঙ্গে নিয়ে তিন দেশ দোহা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিলো। সৌদির সঙ্গে মিলে আরব আমিরাতের এমন আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হিসেবে দেখা গেল, আবুধাবি যে ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, সেই ব্রাদারহুড-সমর্থক আল-ইসলাহর নেতাকর্মীদের দোহায় আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।

কয়েকমাস ধরে সেই অচলাবস্থা চলতে থাকলো। এমনকি আমির তামিমের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমাদের মধ্যস্থতার চেষ্টায়ও সংকটের সুরাহা হচ্ছিল না। প্রায় কোণঠাসা হয়ে কাতার ছাড় দিতে থাকলে ২০১৪ সালের নভেম্বরে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়ে আসে। ছাড়ের ওই তালিকায় ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাদের কাতার থেকে তুরস্কে চলে যেতে বলা, আমিরাতের বিদ্রোহীদের কাতার ত্যাগের নির্দেশ, আল জাজিরার মিশর শাখা বন্ধ, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর বিষয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি কার্যকর এবং উপসাগরীয় অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা ও নীতি-নির্ধারক বিষয়গুলোতে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করা।

সংকটের চূড়ান্ত রূপ
এরপর আবার তৈরি হলো বর্তমান এ সংকট। এবার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অভিযোগের পাশাপাশি আছে বন্দির মুক্তিপণ দেওয়ার এক জটিল অভিযোগ। বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ইরাকের এক এলাকায় জিম্মি হওয়া কাতারের রাজপরিবারের বেশ ক’জন সদস্যসহ ২৬ জনের একটি শিকারী দলকে মুক্ত করতে দোহা অর্থ দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা করেছে। এই শিকারী দলটি কিতায়েব হিজবুল্লাহ নামে একটি সশস্ত্র সংগঠনের হাতে রয়েছে, যে সংগঠনটি আবার ইরানের মদতপুষ্ট। অভিযোগ উঠেছে, ওই দলটিকে মুক্ত করতে ইরান, হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট গ্রুপ জাবাত আল-নুসরার সঙ্গে সমঝোতা করেছে কাতার। এজন্য কাতার ৫০০ মিলিয়ন ডলার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ ক্ষুব্ধ করে ইরাকের রাজধানী বাগদাদসহ আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রক নগরগুলোকে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আরব মিত্রদের ক্ষোভ ঝেড়ে বলেনও, এই মুক্তিপণ তাদের অজান্তে এবং তাদের অনুমোদন ছাড়াই দেওয়া হয়েছে।

এতো বড় অংকের অর্থ প্রদানকে সৌদি-আমিরাতসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলো অর্থায়ন হিসেবেই দেখছে। তারা মনে করছে, ইরাকের অ-রাষ্ট্রীয় কোনো সহিংস শক্তিকে ইরানের পরোক্ষ সম্মতিতে এই অর্থ প্রদান উপসাগরীয় রাজধানীগুলোর এই ধারণাকেই পোক্ত করেছে যে, উগ্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাতারের এমন ঘনিষ্ঠতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

যুক্তরাষ্ট্র কোন দিকে?
এখন পর্যন্ত যত পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে, তা যুদ্ধে গড়ানোর উপলক্ষ তৈরি করেনি। কেবল কাতার ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা বৃত্তবন্দি হয়ে পড়েছে। এই কূটনৈতিক খেলা যে যুদ্ধে গড়াবে তা-ও আপাতত বলা যাচ্ছে না। আর সৌদি বা আমিরাতের কর্তারা এই আঞ্চলিক উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্রকে পক্ষাবলম্বনে চাপ প্রয়োগ করবেন বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে না। যদি হয় তবে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই হয়ে উঠবে বড় অস্বস্তির। কারণ প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও জ্বালানিসহ নানা দিক দিয়ে কাতারের প্রতি দায়বদ্ধ ওয়াশিংটন। কাতারেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সামরিক ঘাঁটি।

যদিও ট্রাম্প উত্তেজনা সৃষ্টির প্রেক্ষিতে উপসাগরীয় দেশগুলোকে রিয়াদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু দু’সপ্তাহ আগে আরব উপদ্বীপ সফর করে যাওয়ার সময় তিনি সামরিক চুক্তিসহ নানা ইস্যুতে যে পর্যায়ের উৎফুল্ল ছিলেন, তেমন যে আর নেই তা বলাই যায়। যুক্তরাষ্ট্রের বরং এখন অবস্থা— ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।