তবু প্রধানমন্ত্রী পদে ক্ষমতা আকড়ে রেখেছেন যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান টেরিজা মে। তার এই যাত্রাকে ‘মৃত নারী’র মতো হেঁটে চলা হিসেবে দেখছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক চ্যান্সেলর (অর্থমন্ত্রী মানের পদ) জর্জ অসবোর্ন।
দেশের একটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক এ চ্যান্সেলর বলেন, টেরিজা মে এখন মৃত নারীর মতো হেঁটে বেড়াচ্ছেন। এখন শুধু কেবল এটাই দেখা বাকি যে, এই মৃত সারিতে তিনি কত সময় টিকে থাকতে পারেন। ’
পুরো সাক্ষাৎকারেই টেরিজাকে সমালোচনার তোড়ে বেশ তুলোধুনো করেন অসবোর্ন। বলেন, যে ডিইউপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছেন টেরিজা, সেই দলটিই মতবিরোধ হলে তাকে সমর্থনের দরজা বন্ধ করে দিতে পারে। তাতে আবার বিপাকে পড়তে হতে পারে কনজারভেটিভকে।
ডিইউপি যুক্তরাষ্ট্রের ধার্মিক ডানপন্থিদের মতো। যারা সমলিঙ্গের বিয়ে এবং গর্ভপাতসহ নানা বিষয়ে সবসময় কট্টর অবস্থান দেখিয়ে আসছে। অথচ এসব বিষয়ে উদার টেরিজার কনজারভেটিভ পার্টি।
অসবোর্নের এই ‘মৃত নারী’ আখ্যা স্পষ্ট করে দেওয়া হয় সাক্ষাৎকারের প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়, শনিবার শেষের দিকে টেরিজার সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিট ও ডিইউপি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, সরকার গঠন নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা পরের সপ্তাহে আবার শুরু হবে। অথচ টেরিজা বলে বেড়াচ্ছেন ডিইউপির সঙ্গে তার কনজারভেটিভ পার্টির সমঝোতা হয়ে গেছে, যেখানে আলোচনাই চূড়ান্ত হয়নি। এরমধ্যে আবার ডানপন্থি ডিইউপির দিকে টেরিজার ঝুঁকে যাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন উদার কনজারভেটিভরা।
খবর ছড়াচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টির বহুল আলোচিত নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন দলে নেতৃত্বের অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। নেতারা বা স্বদলীয় এমপিরা তার নেতৃত্বে টেরিজার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলে বিপদে পড়তে হতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে। এ বিষয়ে অবশ্য অসবোর্নের দৃষ্টিভঙ্গি, ‘তিনি (বরিস) নেতৃত্বের স্থায়ী জায়গায়ই রয়েছেন। এটা সংবাদ হিসেবে যায় না বলে আমার ধারণা। ’
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ভূমিকম্প নিয়ে আসা নির্বাচনের পর পার্লামেন্টে ওলট-পালোট ব্রেক্সিট সুরাহার বিষয়টি আরও কঠিন করে দিয়েছে আগের তুলনায়। ডিইউপি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার বিষয়ে টেরিজার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হলেও আঞ্চলিক জোটটির সঙ্গে একক বাজার নীতির ব্যাপারে উল্টো চাপ তৈরি করতে পারে। টেরিজা এই নীতিরও বিরুদ্ধে হলেও আয়ারল্যান্ড সীমান্ত দিয়ে কোনো ফি ছাড়াই মালামাল প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যায় এই একক বাজার নীতিতেই। এক্ষেত্রে টেরিজা যে ডিইউপি’র প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন, সেই দলটিই তাকে উল্টো পিঠ দেখাতে পারে।
ব্রেক্সিট বিষয়ে গণভোটের পর দায়িত্ব নিয়ে মাত্র আট দিনের মাথায় নির্বাচন ডাকেন টেরিজা। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের তিন বছর হাতে থাকা সত্ত্বেও তার এ আগাম নির্বাচনের ডাক ছিল পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিরঙ্কুশ করে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পথ সুগম করা। কিন্তু ফল হলো ‘বুমেরাং’।
এই ফলের কারণে টেরিজাকে নিজে দলের নেতাদের তোপে পড়তে হচ্ছে। কনজারভেটিভ এমপিরা জনসম্মুখে তাদের ক্ষোভ ঝাড়ছেন। কেউ কেউ তার পদত্যাগ দাবি করে দলের নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনার কথাও বলছেন। বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকা ডিইউপি’র সঙ্গে মিলে সরকার গঠনের উদ্যোগের ফলে টেরিজার পদত্যাগ দাবিতে চেইঞ্জ.ওআরজিতে এক পিটিশনে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।
এই সব প্রতিকূলতায় টিকতে কি পারবেন টেরিজা? অপেক্ষায় অসবোর্ন, অপেক্ষায় যুক্তরাজ্যের জনগণও।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
জিইউ/এইচএ/