মানচিত্রটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চীন দাবি করেছে, ডোকলাম তাদের। কিন্তু নয়াদিল্লি ও থিম্পু মনে করে, তিন দেশের সীমান্তে অবস্থিত ১৪ হাজার ফুট উচ্চতার ৭৬৪ বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ডটি ভুটানেরই।
রোববার (২ জুলাই) মানচিত্রটি প্রকাশের খবর আসে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। তারা জানায়, অচলাবস্থা নিরসনে দু’পক্ষের তরফ থেকে যে সংলাপের আহ্বান জানানো হচ্ছিল, সে সংলাপ অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।
** উত্তপ্ত ভারত-চীন সীমান্ত, মুখোমুখি ৮ হাজার সৈন্য
চীন তাদের প্রকাশিত মানচিত্রে দেখিয়েছে, সিকিমের কাছে কৈলাস মানস সরোবর তীর্থযাত্রায় যাওয়ার রাস্তা ডোকা লা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সৈন্যরা ডোকলামের উঁচুভূমিতে ‘অনুপ্রবেশ’ করেছে। এই অনুপ্রবেশ তারা বরদাশত করবে না।
মানচিত্রটি প্রকাশের আগে ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ভুটানের এলাকাটিতে চীন তাদের সামরিক অবস্থান সংহত করতে সড়ক নির্মাণ করছে, যে জন্য থিম্পুর আহ্বানে তারা ওই নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়।
চীনের নতুন মানচিত্রটি প্রকাশের প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, বেইজিংয়ের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন। সীমান্ত এলাকায় চীন যে সড়ক বানাচ্ছে তা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় প্রভাব ফেলবে। তা ভারতের নিরাপত্তার জন্যও উদ্বেগের কারণ।
সংবাদমাধ্যম জানায়, ১৯৬২ সালে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের পর ডোকলামে মোতায়েন থাকে ভারতের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইটিবিপি। টহল দিয়ে থাকে সেনাবাহিনীও, তারা আবার আশপাশে স্থাপিত অস্থায়ী বাংকারে বিশ্রাম নিয়ে থাকে। নয়াদিল্লি খবর পায়, ওই মালভূমি এলাকায় সামরিক অবস্থান সংহত করতে বিতর্কিত অঞ্চলেই রাস্তা তৈরির ছক কষছে চীন। নিরাপত্তা প্রশ্নে থিম্পুর আহ্বানে ভারত সেখানে সেনা মোতায়েন বাড়ায়। ভুটানও আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র পাঠায় বেইজিংয়ে।
এই প্রেক্ষিতে মাস দুই আগে বেইজিংয়ের তরফ থেকে মালভূমির লালটেন এলাকার বাংকারগুলো ভেঙে দিতে বলা হয়। ভারত তাতে পাত্তা না দিয়ে সৈন্য-সামন্ত বাড়ালে চটে যায় চীন। তারাও সৈন্য-সামন্ত বাড়িয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বিবৃতি দেয়, চীনের ভূখণ্ডে অন্য দেশের নাক গলানো বরদাশত করা হবে না।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ৬ জুন এ নিয়ে পতাকা বৈঠক হয়। কিন্তু তার দু’দিন পরই ৮ জুন চীনা সেনাবাহিনী ভারতের দু’টি বাংকার গুঁড়িয়ে দেয়। এতে উত্তেজনা সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়। কয়েকদিনের মধ্যে দুই পক্ষ থেকে দুই পাশে চার ব্যাটালিয়ন করে আট ব্যাটালিয়ন সৈন্য মোতায়েন করে। কিছু কিছু সামরিক সূত্র অন্তত ২০ হাজার সৈন্য মোতায়েনের কথাও জানায়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারত ফের পতাকা বৈঠকের অনুরোধ জানালেও জুনিয়র অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় চীন। শেষ পর্যন্ত ২০ জুন ভারতের এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গেলে চীন এক মেজর জেনারেল নিয়ে পতাকা বৈঠক করে।
কিন্তু সে বৈঠকেও কোনো ফল আসেনি। চীন সাফ জানিয়ে দেয়, তারা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে পিছিয়ে যাবে না। ভারতীয় সেনাবাহিনীও ‘চিকেন নেক’র বিষয়টি মাথায় রেখে কোনো ছাড় না দেওয়ার অবস্থান জানায়।
নয়াদিল্লি মনে করে, পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল সীমান্তসহ এই এলাকায় অবস্থা নিজেদের অনুকূল করতে চিকেন নেকে (বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত থেকে নেপাল-ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত এলাকা, যেটাকে শিলিগুড়ি করিডরও বলা হয়। এই এলাকা দিয়েই ভারত তার পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে যোগাযোগ করে) অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে চীন।
উত্তেজনার বর্ণনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার মন্তব্য, অবস্থা যেন ‘নো ওয়ার নো পিস’ (যুদ্ধ ছাড়া শান্তি আসবে না)। এই উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে তুলেছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারতকে ১৯৬২ সালের যুদ্ধের স্মৃতি মনে করার হুঁশিয়ারি, আর ভারতীয় সেনাপ্রধানের ‘চীন-পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে একসঙ্গে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা’ বিষয়ক মন্তব্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৭
জিওয়াই/এইচএ/